একসঙ্গে সেরা তিন

হমেদাবাদের ওই রাতটা ভুলে যেতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে হেরে গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল আগের তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। ভুলে যেতে চাইবেন অধিনায়ক রিকি পন্টিংও। তবে ব্যাটসম্যান পন্টিং মোটেও নয়। গত ২২ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র সেঞ্চুরিটি যে করেছিলেন ওই ম্যাচেই!
কিছুদিন ধরে প্রতিটি ম্যাচই পন্টিংয়ের ক্যারিয়ার বাঁচানোর লড়াই। সেই লড়াইয়ে এবার প্রতিপক্ষ ভারত,


আহমেদাবাদের স্মৃতি আগামীকাল শুরু মেলবোর্ন টেস্টে নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণা জোগাবে পন্টিংকে। সেঞ্চুরিটা খুব করে চাই শচীন টেন্ডুলকারেরও। ক্যারিয়ার বাঁচানোর টানাপোড়েন তাঁর নেই। তবে আছে একটি বোঝা। শততম সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারাটা যে সত্যিই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটি পরিষ্কার তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন আর আউট হওয়ার পর প্রতিক্রিয়াতেই। আহমেদাবাদের ওই ম্যাচে ছিলেন না রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু তিনজনের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়টা সবচেয়ে ভালো কেটেছে তাঁরই। বাকি দুজনের মতো সেঞ্চুরিটা তাঁর জন্য অতীব জরুরি কিছু নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় সেঞ্চুরি পাওয়ার সম্ভাবনা তাঁরই বেশি।
শেষ পর্যন্ত কার গলায় ঝুলবে সেঞ্চুরির বরমাল্য, সেটা সময়ই বলবে। তবে মেলবোর্নে এই তিনজনের সৌজন্যেই বিরল এক ঘটনার সাক্ষী হবে ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ তিন রান সংগ্রহকারী খেলবেন একসঙ্গে! সর্বশেষ এই তিনজন এক টেস্টে খেলেছিলেন গত বছরের অক্টোবরে। সে সময় টেস্টে রানপাহাড়ের চূড়ায় ছিলেন টেন্ডুলকার, এরপরই পন্টিং। তিনে ছিলেন ব্রায়ান লারা, দ্রাবিড় চারে। এ বছরের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে লারা তো বটেই, পন্টিংকেও ছাড়িয়ে দ্রাবিড় এখন দুইয়ে।
বিশ্বকাপে ওই সেঞ্চুরির পর পন্টিং বলেছিলেন, ‘আশা করি, টেন্ডুলকারের মতো আমার ক্যারিয়ারেও পুনর্জন্ম হবে।’ এরপর পেরিয়ে গেছে নয় মাস, নতুন জন্ম তো দূরের কথা, পন্টিংয়ের ক্যারিয়ারে এসেছে আরও ভাটার টান। সর্বশেষ চার ইনিংসে অবশ্য দুটি ফিফটি এসেছে। কিন্তু সেরা সময়ের পন্টিংয়ের ছায়া হয়েই আছেন এই পন্টিং। টেস্টে তিন অঙ্কের দেখা নেই টানা ৩১ ইনিংস। ৬ টেস্ট খেলে এ বছর গড় ২৬.৭৮, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় বছরেই (১৯৯৬) কেবল গড় ছিল এর চেয়ে কম (৪ টেস্টে ২০.৩৭)। পাঁচ দিন আগে ৩৭ পূর্ণ করেছেন। ভেতরে ঢোকা বলে বারবার এলবিডব্লু হওয়া প্রমাণ করছে, টেকনিক আগের মতো নেই। প্রিয় পুল শটে বেশ কবার আউটে প্রমাণ হয়, রিফ্লেক্সও গেছে কমে। আর টানা ব্যর্থতায় সবচেয়ে বেশি কমেছে আত্মবিশ্বাস।
ফর্ম-বয়স সব বিপক্ষে থাকার পরও পন্টিংকে টানা খেলিয়ে যাওয়ায় সমালোচনাও কম হচ্ছে না। তবে সদ্য সাবেক নির্বাচক গ্রেগ চ্যাপেলের মতে, ঠিক কাজটিই করছে অস্ট্রেলিয়া, ‘শেষ কোথায়, নির্ধারণ করা মুশকিল। রিকি পন্টিংয়ের মতো ক্রিকেটার খুব বিরল। এই ধরনের ক্রিকেটারদের একটা-দুটি সিরিজ বা ম্যাচ কম সুযোগ দেওয়ার চেয়ে একটা ম্যাচ বা সিরিজ বেশি সুযোগ দেওয়া ভালো। কারণ তাদের পরিবর্ত পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়।’ অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ধারণা, একটা সেঞ্চুরি পেলেই ফিরে আসবেন সেই পুরোনো পন্টিং, ‘এটা পেলে ও শচীনের মতোই এগিয়ে যেতে থাকবে, পরবর্তী বছর কটি হবে ওর ক্যারিয়ারের সেরা।’
অস্ট্রেলিয়ায় ৪ টেস্টেও টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি না পেলে সেটি বিস্ময়করই হবে। তবে খেলাটা ক্রিকেট, শততম সেঞ্চুরির জন্য টেন্ডুলকারের অস্ট্রেলিয়া সফর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, এটা বা কে ভাবতে পেরেছিল! সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন ১৭ ইনিংস আগে। ইংল্যান্ডে চার টেস্টে পাননি। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন টেস্টে সেঞ্চুরি না পাওয়াটা ছিল আরও বিস্ময়কর। সেঞ্চুরিটা না হওয়া পর্যন্ত বড় এক চাপেই থাকবেন টেন্ডুলকার।
নিজেকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই শুধু দ্রাবিড়েরই। এ বছর টেস্টে হাজার রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি, ইয়ান বেলের সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ সেঞ্চুরিও তাঁর। বরাবরের ‘টিমম্যান’ দ্রাবিড় অবশ্য নিজেকে নিয়ে ভাবছেনই না। অস্ট্রেলিয়ায় কখনোই টেস্ট সিরিজ জেতা হয়নি ভারতের। ক্যারিয়ারের শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে দ্রাবিড়ের চোখে সেই খরা ঘোচানোর স্বপ্ন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় একটা সিরিজ জিততে পারলে ক্যারিয়ারে ৫টা সেঞ্চুরি বা হাজার খানেক রান কম করলেও কিছু যায়-আসত না। আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি পরিসংখ্যান বা রানসংখ্যা নয়। স্মরণীয় স্মৃতি হলো ওই জাদুকরি মুহূর্তগুলো—টেস্ট সিরিজ জয়ের স্মৃতিগুলোই শেষ পর্যন্ত থেকে যায় মনে। অস্ট্রেলিয়ায় নিজের জন্য আমার চাওয়ার কিছু নেই। আমি এখানে একটা সিরিজ জিততে চাই, দলের জয়ে অবদান রাখতে চাই।’
দ্রাবিড়ের স্বপ্ন পূরণ হলে তাঁর ঝলমলে ক্যারিয়ারে এই সিরিজটি হবে বিশেষ কিছু। তা হোক বা না হোক, ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি বিশেষ কিছু হয়েই থাকবে। তিন আধুনিক কিংবদন্তিকে একসঙ্গে দেখার শেষ সুযোগ তো এটাই! রয়টার্স, ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.