ভারতে লোকপাল বিল নিয়ে আতঙ্কে সাংসদেরা by দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী

ভারতে দুর্নীতিবিরোধী লোকপাল বিল নিয়ে পার্লামেন্টের বিভিন্ন দলের সাংসদদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন আইনে ‘সুপ্রিম’ লোকপালের কাছে কোনো সাংসদই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন। ভারতের সামগ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য বিলটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। বিলটি গত বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হলে সাংসদদের মাঝে অস্বস্তি দেখা যায়। প্রখ্যাত সমাজকর্মী আন্না হাজারের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ভারতের


গণতন্ত্রকে নতুন ছাঁচে গড়ে তুলতে পার্লামেন্টে লোকপাল বিল পাসের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। তবে বিলের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি এসেছে। তাদের মতে, সরকারের পেশ করা এ বিলটি অসাংবিধানিক, কারণ এটি দেশের সার্বিক ঐক্যের ওপর প্রভাব ফেলবে এবং ‘ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সংরক্ষণ নয়’ বিধি লঙ্ঘন করবে।
বিলে প্রতি রাজ্যে লোকপাল বা এর অনুরূপ কাঠামো (লোকযুক্ত) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে সব দলই ব্যাপক সমালোচনা করেছে। বিজেপির মতে, সংবিধানের ২৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে লোকযুক্ত প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, ২৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নয়, যেটা বর্তমান বিলে করা হচ্ছে। ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) নেতা বাসুদেব আচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থার পরিপন্থী কোনো সংশোধনী আনা হলে তাঁরা আন্দোলনে যাবেন।
লোকপাল বিলে সমাজের সংখ্যালঘু বা নারীদের প্রতিনিধিত্ব অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সংখ্যালঘু বা নারীর জন্য পদ সংরক্ষণের বিষয়টিকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে পার্লামেন্টে তাঁর বক্তব্যে কেবল সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এদিকে, লোকপাল বিলের বিরোধিতা করেছে শিবসেনা। একজন সাংসদ কৌতুক করে বলেন, ‘বিজেপি এখন লোকপাল বিল নিয়ে হিন্দু-মুসলিম ইস্যু তৈরি করবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ সব দল এতে সমর্থন দেবে।’
লোকপাল বিল উত্থাপনের পূর্বমুহূর্তে সাংসদেরা ভাবছিলেন, লোকপাল কার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে? লোকপালের নামে কি আসলে মহাশক্তিধর একটি সুপার সরকার তৈরি হতে যাচ্ছে? অধিবেশন চলাকালে সাংসদেরা মন্ত্রী ও সরকারকে নিয়মিত প্রশ্ন করতে পারবেন, কিন্তু লোকপালের কার্যক্রম নিয়ে কে প্রশ্ন তুলবে? লোকপালের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে কীভাবে?
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও প্রবীণ সমাজকর্মী আন্না হাজারে নতুন লোকপাল বিলের বিরুদ্ধে ‘জেল ভরো’ নামের নতুন একটি আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছেন। ৩০ ডিসেম্বর থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে অনলাইনে সমর্থকদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে।
রামলীলা ময়দান ব্যবহারে অনুমতি: আন্না হাজারের দল মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠিতব্য আন্দোলন কর্মসূচির জন্য নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দান ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে।
আন্না হাজারের বক্তব্য: নতুন লোকপাল বিলকে ‘অত্যন্ত দুর্বল’ মন্তব্য করে গতকাল শুক্রবার আন্না হাজারে বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে এটি কার্যকর হবে না। কর্তৃপক্ষ তাঁকে এ বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য কোনো স্থান বরাদ্দ না দিলে তিনি কারাগারে গিয়ে অনশন করবেন। ২৭ ডিসেম্বর থেকে তাঁর অনশন শুরু হওয়ার কথা।

No comments

Powered by Blogger.