জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে-বিদ্যুতের দাম বাড়ার দায় কার?


বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছে, সব শ্রেণীর গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফায় এই দাম বাড়বে। প্রথম দফা চলতি মাসে এবং দ্বিতীয় দফা ফেব্রুয়ারিতে বাস্তবায়িত হবে। গড়ে ২১ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে এই দাম বাড়বে। আগে যেখানে গ্রাহককে ইউনিটপ্রতি চার টাকা ১৬ পয়সা দিতে হতো, এখন থেকে দিতে হবে পাঁচ টাকা ২ পয়সা। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ৫


শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অর্থনৈতিক চাপের মুখে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকির বোঝা তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। কিন্তু যে প্রশ্নটি করা প্রয়োজন তা হলো, হঠাৎ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের গাফিলতি ও একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ি। দেশের অর্থনীতিবিদ ও নাগরিকদের পক্ষ থেকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে জ্বালানি খাতে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তুকির সমালোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু তখন সরকারের টনক নড়েনি। এ বছর বাজেট ভর্তুকির একটা বড় অংশ গুনতে হয়েছে রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির জোগান দিতে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় সাময়িক ব্যবস্থা হতে পারে। কিন্তু সরকার একেই জাদুরকাঠি হিসেবে প্রচার চালাতে থাকল, যা এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বললেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। সেই কাজটি তারা তিন বছরেও করতে পারেনি। উন্মুক্ত না ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে—সেই বিতর্ক কি অনন্ত কাল চলবে? আমরা গ্যাস ও কয়লার মতো জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেব না—এ কথা যেমন সত্যি, তেমনি এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা প্রয়োজন।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুৎভিত্তিক উৎপাদন-প্রক্রিয়া এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশে উঠেছে। এ হার আরও বাড়লে সার্বিক অর্থনীতির ভারসাম্য যেমন নষ্ট হবে, তেমনি সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাপন দুঃসহ হয়ে পড়বে।
সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেছে। এদের মধ্যে নেপাল ছাড়া সব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আমাদের চেয়ে বেশি। সুতরাং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ সরকার নেবে বলেই প্রত্যাশিত।
একই সঙ্গে এই খাতে অপচয় ও চুরি বন্ধেও সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা ঋণ করে ঘি খাচ্ছি না।’ সরকারের সব কাজে, প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের আচরণে এর প্রতিফলন ঘটলে আমরা খুশি হতাম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তা ঘটছেনা।

No comments

Powered by Blogger.