তোফায়েল-মওদুদ উত্তপ্ত বাকযুদ্ধ, অন্য দু'সদস্যের অশ্লীল গালাগাল- বিরোধী দলের ওয়াকআউট

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জাতীয় সংসদে তোফায়েল আহমেদ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মধ্যে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধ হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার শেষ পর্যায়ে বুধবার সরকার ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা পাল্টাপাল্টি যুক্তি দেখিয়ে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন।
তবে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের সময় নির্ধারণ নিয়ে সংসদ প্রায় সাত মিনিট কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় তর্কবিতর্ক এবং উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। বিরোধী দলের দু'জন সদস্যকে অশস্নীল ও অশ্রাব্য কিছু গালিগালাজ করতে দেখা গেছে। তোফায়েল আহমেদের একটি মনত্মব্যকে ইসু্য করে সংসদ মুলতবি হওয়ার আগ মুহূর্তে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বিরোধী দল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অবিলম্বে জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নায়ক জেনারেল মইন-আমিন-বারী-মাসুদ-মতিনদের বিচার দাবি করে বলেছেন, বর্তমান সরকার বিচার না করলে জনগণই একদিন তাদের বিচার করবে।
জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ওয়ান ইলেভেন বিএনপি-জামায়াতেরই সৃষ্টি। মইন_ফখরম্নদ্দীন-মাসুদ উদ্দিন কাদের লোক? কারা এঁদের উচ্চপদে বসিয়েছেন? এঁরা বিএনপিরই লোক ছিলেন। এই মওদুদ আহমদ ও তাঁর নেত্রীই সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে তাঁদের ৰমতায় বসিয়ে পাকাপোক্ত করেছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার টানা এক মাস ধরে চলা রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শেষ হবে। সমাপনী দিনে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার শেষ পর্যায়ে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস, প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, হুইপ মুজিবুল হক, মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বিএম মোজাম্মেল হক, হায়াতোর রহমান খান, বেনজীর আহমেদ, জাতীয় পার্টির রম্নহুল আমিন হাওলাদার, বিএনপির রেহানা আক্তার রানু, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ও জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, আজ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মইন-ফখরম্নদ্দীন-মাসুদ উদ্দিন সম্পর্কে বিষোদগার করছেন। কিন্তু এঁরা কার লোক? কাদের সময় সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে মইন উ আহমদকে সেনাপ্রধান করা হয়? ফখরম্নদ্দীন আহমদকে কারা গবর্নর করে? জেনারেল মাসুদ উদ্দিন কার ভায়রা? তিনবার প্রমোশন দিয়ে তাঁকে নবম ডিভিশনের জিওসি করেছে কে? তিনি বলেন, এই মওদুদ আহমদই তাঁদের পাকাপোক্ত করেছেন। আজ তিনি মইনের নিন্দা করেন। তাহলে মওদুদরা কীভাবে আশা করেন '৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যিনি সেনাপ্রধান হয়েছিলেন, ৰমতায় এসেছিলেন, তাঁর নাম আমরা সংসদে উচ্চারণ করব? এ সময় প্রতিবাদে বিরোধী দল ওয়াকআউট করার সময় তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, এক সেনাশাসকের কথা মওদুদ আহমদ এতৰণ ধরে বলে গেলেন। অন্য এক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করা মাত্রই ওয়াকআউট করে চলে গেলেন। এটা তাদের ডবল স্ট্যান্ডার্ড রাজনীতিরই বহিপর্্রকাশ।
এর আগে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, কথায় কথায় সরকারী দল চারদলীয় জোটের কথা বলে। কিন্তু একটিবারও দু'বারের সাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে টুঁ শব্দটিও করেন না। কেন বলেন না এটা আমরা বুঝি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দেশ চালিয়ে দেশকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে তারা। দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে অভিযানের নামে বি-রাজনীতিকরণ, চরিত্র হনন করা হয়েছে। ৰমতার জন্য আজ বর্তমান সরকার সব ভুলে গেছে। ক্যামেরা ট্রায়ালে ক্যাঙারম্ন কোর্টে মিথ্যাভাবে এত শীর্ষ রাজনীতিবিদদের নির্যাতন করল অথচ তাঁদের বিচার করা হলো না।
সাবেক এক বিচারপতিকে প্রধান করে জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের মাধ্যমে মইন-আমিন-মাসুদ-মতিন-বারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সংবিধান লঙ্ঘন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত, বি-রাজনীতিকরণ ও অর্থনীতির ৰতি করার কারণে এদের বিচার করম্নন। বিচার না করলে জনগণই একদিন তাঁদের বিচার করবে। তিনি বলেন, দিন বদল হবে না, যদি মন বদল না করেন। নবম শ্রেণী পর্যনত্ম বিনামূল্যে বই প্রদান, সংসদের প্রথমেই সব স্থায়ী কমিটি গঠন, বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নকে সরকারের সাফল্য উলেস্নখ করে তার প্রশংসা করেন।

No comments

Powered by Blogger.