অর্ধশত শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজছে পুলিশ- গ্রেফতার হয়েছে ২০০, খোঁজা হচ্ছে গলাকাটা নাছিমাকে

গলাকাটা নাছিমাসহ অর্ধশত শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ীর সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এসব অপরাধীর বসবাস নগরীর তেজগাঁও এলাকায়। পুলিশ বলছে শুধু তেজগাঁও এলাকাতেই প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার মাদক।
এসব অপরাধীর নামের তালিকা এখন পুলিশের হাতে। গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে অপরাধীদের আস্থানাও চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরাধীদের বেশিরভাগের ঠিকানা বসত্মি। তাদের ধরতে সহযোগিতা না করলে তেজগাঁও রেল লাইন বসত্মি গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। আগে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে সন্ত্রাসীদের বসত্মির আসত্মানা। পুলিশের বক্তব্য, তালিকাভুক্ত অপরাধীদের মধ্যে এক পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম রয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে রাজধানীর বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীর যোগাযোগ। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করা হবে। পুলিশের তেজগাঁও জোনের কমিশনার মঞ্জুর কবীর বলেছেন, তাদের গ্রেফতার করে মামলা দেয়া হবে পুলিশের পৰ থেকে। যে কোন মূল্যে অপরাধী নিমর্ূল করা হবে। এ লৰ্যে রাজধানীর তেজগাঁও অঞ্চলের পুলিশের পৰ থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। অপরাধী নির্মূল অভিযানে চাওয়া হয়েছে এলাকাবাসীর সহযোগিতা। গত এক মাসে ২ শতাধিক মাদক ব্যসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, তালিকা তৈরির পর ইতোমধ্যে অনেক অপরাধী স্থান পরিবর্তন করেছে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের মধ্যে রয়েছে মাদকের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী। তালিকায় তেজগাঁও এলাকার পুরুষ অপরাধীদের নামও স্থান পেয়েছে। অপরাধীদের মধ্যে অনেকেই হেরোইন বিক্রেতা। কেউ কেউ জড়িত গাঁজার পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে। অনেকের পরিচিতি গাঁজার খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে। অপরাধ কর্মকা- পরিচালনা করতে তারা নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছে বস্তি। বস্তিতে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রিসহ গাঁজা শুকানোর কাজ করেন অনেকেই। নারী মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তালিকার প্রথম সারিতে স্থান পেয়েছে গলাকাটা নাছিমা ও নূরজাহানের নাম। জোলেখা ও তার স্বামী, মেয়ে শিল্পী, ছেলে রুবেল, শাশুড়ি রাফিয়াসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে আছে মাদক ব্যবসার অভিযোগ। তা ছাড়াও তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে ঝুলি, মাহফুজা, পারভীন, জোলেখা, নীলা, নূরানী, হযরত আলী, ইদ্রিস, সাজেদা, খুশী, সেলিনা, জনির মা, মাজেদা, রোকেয়াসহ অনেকেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে হেরোইন বিক্রেতা ৮, পাইকারি গাঁজার ব্যবসায়ী ১০, খুচরা গাঁজার ব্যবসায়ী ৩০। তবে বাসত্মবে এমন অপরাধীর সংখ্যা ২০০'র বেশি। অপরাধীদের ধরিয়ে দিতে বসত্মিবাসীকে পুলিশের পৰ থেকে আল্টিমেটাম দেয়া হলেও এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। বসত্মিবাসীর বক্তব্য, অপরাধীদের বিরম্নদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস নেই তাদের। তাদের প্রতিহত করাও সম্ভব নয়। গত বুধবার তেজগাঁও অঞ্চলের পুলিশ কাওরান বাজার রেলওয়ে বসত্মিবাসীর কাছে এসব অপরাধীর নাম প্রকাশ করে। পাশাপাশি তাদের গ্রেফতারে বসত্মিবাসীর সহযোগিতা কামনা করে পুলিশ। বসত্মিবাসীর বক্তব্য, তারা অপরাধীদের চেনে। চেনে আসত্মানাও। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের পরিচিতি বেশ। তাই মুখ খোলা সম্ভব নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য রয়েছে। পুলিশকে চাঁদা দিয়ে তারা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। অনেকের বক্তব্য, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বসত্মিতে টাকা নিতে আসে কাওরান বাজার এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। নিয়মিত ঘুষ দিয়ে নিরাপদে দিনের পর দিন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে মহিলা অপরাধী চক্র। অনেকের বক্তব্য, তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকের পেছনে রয়েছে ৰমতাবানদের মদদ। যারা নিরাপদ হিসেবে মহিলাদের দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বেতনভুক্ত কর্মচারী। সন্ধ্যার পর তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনের কাছে পাইকারি ও খুচরা মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। ব্যবসায় মদদদাতাদের রয়েছে রাজনৈতিক পরিচিতিও।
তেজগাঁও জোনের পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুর কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, তালিকা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারী অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছে। আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাদের গ্রেফতারে অভিযান জোরদার করা হবে। নির্দিষ্ট ঠিকানায় অপরাধীদের না পেলে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে বসত্মির আসত্মানা। চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশের পৰ থেকে তাদের বিরম্নদ্ধে মামলা দেয়া হবে। চিহ্নিত এসব ব্যবসায়ী কারও এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে কিনা পুলিশের পৰ থেকে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ অভিযানে অপরাধীদের পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০০ মাদক ব্যবসায়ীকে প্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রয়েছে পুরম্নষ, মহিলা ও শিশু। রয়েছে একই পরিবারের একাধিক সদস্য।

No comments

Powered by Blogger.