নাইকো দুর্নীতি মামলাও বাতিল করেছে হাইকোর্ট- মামলার পর্যবেক্ষণে দুদককে আইন সংস্কার করতে বলা হয়েছে

নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল করেছে হাইকোর্ট। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান দুর্নীতি মামলা বাতিল হবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলাও বাতিল করেছে হাইকোট।
এ নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধে দায়ের করা পাঁচটি মামলা বাতিল করল হাইকোর্ট। আগের চারটি মামলা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে করা হলেও, নাইকো মামলাটি করা হয়েছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। বিচারপতি মোঃ সামছুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় প্রদান করে। রায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার সকল কার্যক্রম বাতিল করেছে আদালত।
রায়ের পর্যবেৰণে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের যে বিধান আছে তা আইনসম্মত নয়। এসব আইন সংশোধন করা উচিত। ভবিষ্যতে যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগে আনা না হয়। রায়ে বলা হয় দুদকের আইনজীবীদের পিছনে অনেক টাকা অপচয় হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করছেন না।
রায়ে আরও বলা হয়, এফআইআর এবং চার্জশীটে কোন অভিযোগ নেই। তার পরও নিম্নআদালত এটা গ্রহণ করেছে। নিম্নআদালত এটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি। রায় ঘোষণার পর ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সাংবাদিকদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরম্নদ্ধে নাইকো সংক্রানত্ম যে মামলা আনা হয়েছে শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার মাইলফলক রায় প্রদান করেছে। মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। আদালত রায়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। দুদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আইন সংস্কার করতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে মাইনস ফর্মুলা আনা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নাইকো মামলা। আব্দুল মতিন খসরু সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের নীতিমালায় বলা আছে যিনি মামলা করবেন তিনি তদন্ত কর্মকর্তা হতে পারবেন না। আদালত বলেছে দুদকের আইনজীবীরা লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছে না।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরম্নদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের উপপরিচালক এসএম সাবি্বর হাসান বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৩ হাজার ৬৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, নানা অপকৌশল অবলম্বন করে পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ও সিলেট গ্যাসফিল্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কারিগরি বিশেস্নষকদের মতামত উপেক্ষা করে আইন-নীতি অনুসরণ না করে শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ১৪ জুন 'প্রানত্মিক ও পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড উন্নয়ন সংক্রানত্ম পদ্ধতি' নামে একটি পদ্ধতির অনুমোদন করেন। এ পদ্ধতিতে ছাতক, ফেনী ও কামতা গ্যাস ফিল্ডকে প্রানত্মিক ও পরিত্যক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়।
মামলার তদনত্ম শেষে ২০০৮ সালের ৭ মে শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরম্নদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। ৮ মে নিম্নআদালতের বিচারক আজিজুল হক মামলাটি আমলে নেন। ২০০৮ সালে মামলাটি বাতিলের দাবিতে শেখ হাসিনা হাইকোর্টের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১(এ) ধারায় একটি আবেদন দায়ের করেন। আবেদনটির ওপর প্রাথমিক শুনানি গ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ৭ জুলাই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে সরকার ও দুদকের প্রতি রম্নল জারি করে। বুধবার থেকে হাইকোর্টে এ মামলার উপর শুনানি শুরম্ন হয়। শুনানিশেষে বৃহস্পতিবার আদালত নাইকো দুনর্ীতি মামলাটি বাতিল ঘোষণা করে।
মামলার শুনানিতে শেখ হাসিনার পৰে ছিলেন, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন খসরম্ন, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, নুরম্নল ইসলাম সুজন, এএফএম মেজবাহউদ্দিন, সরকার পৰে ছিলেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরম্নল হক, ডিএজী, মোঃ মোতাহার হোসেন সাজু, দুদকের পৰে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। নাইকোকে কাজ দিয়ে রাষ্ট্রের ৰতি করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপৰ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরম্নদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আরেকটি মামলা করে।

No comments

Powered by Blogger.