ফের হত্যা মিশন ॥ সশস্ত্র অবস্থায় শিবির- বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর প্রস্তুতি by মামুন-অর-রশিদ

 খুব শীঘ্রই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান শুরম্ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সরকারবিরোধী বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা রোধেই সরকার এই সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল জনকণ্ঠকে এই গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছে। এদিকে আগামী দু-এক সপ্তাহে বড় ধরনের নাশকতার শঙ্কা করছে গোয়েন্দসূত্রগুলো। এই নাশকতার নেপথ্য পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কুখ্যাত এক রাজাকারপুত্র। যার বিরম্নদ্ধে জোট আমলে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে । গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই নাশকতার মূল লৰ্য-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রহিত করা, সরকার পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করা এবং শেখ পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করা। জনকণ্ঠকে তারা বলেছে, কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির কারণে সরকারবিরোধীরা অনেক ষড়যন্ত্রই তারা সফল করতে পারছে না। সরকারের সতর্ক অবস্থানের কারণে বিরোধী শিবিরের অনেক ষড়যন্ত্র অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্রকারীরাও বসে নেই। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেই ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সেক্টর কমান্ডার ফোরাম, ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাউন্ডিং কমিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাই বাছাই করে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সরকার ১২/১৩ জন শীর্ষ পর্যায়ের যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। গ্রেফতারকৃত পাকিস্তানী জঙ্গীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধানত্ম ত্বরান্বিত করেছে।
অতি সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত পাকিস্তানী জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যচিত্র ও পরিকল্পনার কথা জেনেছে। এমনকি মিটফোর্ডের কয়েক ওষুধ ব্যবসায়ী যারা পাকিস্তান থেকে ওষুধ আমদানি করে তাদের জঙ্গীবাদে অর্থায়নের কথাও বলেছে গ্রেফতারকৃত পাকি জঙ্গীরা। পাকিস্তান ও আফগান ফেরত জঙ্গীদের ব্যবহারের পাশাপাশি নাশকতায় দেশী-বিদেশী আরও জঙ্গী, রগ কাটায় পারদর্শী শিবিরকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথাও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। বড় ধরনের এই নাশকতায় মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদে তাঁর বিশ্বস্ত জনাপাঁচেক সদস্য, বিশিষ্ট শিৰাবিদ এবং শেখ পরিবারের কয়েক সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। সামরিক গোয়েন্দা, র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট এবং মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সরকারবিরোধী মহল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় অতীতে প্রতিপৰকে নির্মূল-খুনের সংস্কৃতি থেকে কোনভাবেই বের হতে পারছে না। বিগত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে মৌলবাদী জঙ্গী ঘাতকদের হামলায় প্রাণ দিয়েছে সাবেক অর্থমন্ত্রী আনত্মর্জাতিক ব্যক্তিত্ব শামস কিবরিয়া। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জোট সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে গাজীপুরের আহসানউলস্নাহ মাস্টার, নাটোরের মমতাজসহ অনেককে। শিবির ক্যাডাররা জোট শাসনামলে হত্যা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউনুস ও ড. তাহেরকে। তারা হত্যা করেছে অধ্যাপক তাহেরকে। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছিল অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে। ধর্মীয় রাজনীতির অসত্মিত্ব রৰা এবং যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে জামায়াত '৭১-এর মতো হত্যা-ষড়যন্ত্রের পথ ধরেছে। জামায়াত এ যাত্রায় নরহত্যার ভার দিয়েছে মৌলবাদী জঙ্গী ঘাতক বাংলাভাইয়ের আদি সংগঠন শিবিরকে। বিপুল অস্ত্র সরবরাহ করে সশস্ত্র তৎপরতায় মাঠে নামানো হয়েছে শিবিরের দুর্ধর্ষ নরঘাতক বাহিনীকে। সাম্প্রতিক এক আলোচনাসভায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন, 'ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করে দেয়া হলে দেশে ধর্মীয় জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়া হবে।' এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনিই পক্ষান্তরে জঙ্গীবাদকে মদদ দিয়েছেন_ এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সাম্প্রতিক শিবিরের ধারাবাহিক হত্যা নিজামীর বক্তব্যের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য অনুগামী কিনা সে প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক নয়।
গোয়েন্দারা নাশকতার বিষয়টি সর্বৰণিক মনিটরিংয়ে নিয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারির কারণে শেষ পর্যনত্ম নাশকতার পরিকল্পনা ভেসত্মে যেতে পারে বলে ধারণা করছে সংশিস্নষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ পর্যায়ের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি এবং প্রশাসনের দিনমান সক্রিয়তার কারণে সরকারবিরোধী মহলের শিৰা প্রতিষ্ঠান উত্তপ্ত করার পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে তারা ঢাকা রাজশাহী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশের খেলায় মেতে উঠেছিল। তখন শিবিরের বীভৎস খুনের মহড়ায় দেশে লাশের মিছিল তৈরি হয়েছে। শিবির আরও লাশ চায় ! ঠিক তখনই প্রশ্ন উঠেছে, কত লাশ চায় তারা ? কিন্তু জনসচেতনতা, ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণার কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারেনি তারা। যে কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে। মহাজোট সরকার ঘোষিত 'ডিজিটাল' বাংলাদেশ বিনির্মাণ 'ডিফিকাল্ট' করে দিতেই স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক চক্র বিশেষ পরিকল্পনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনাকে যারা রাষ্ট্রীয় ৰমতা দখলের প্রধান অনত্মরায় হিসেবে বিবেচনা করছে তারা নতুন করে ২১ আগস্টের মতো বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন শুধু সময় এবং সুযোগের জন্য অপেৰা। ১৯৮১ সালে ঝড়ো আবহাওয়ার মধ্যে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য এ পর্যনত্ম কমপৰে দু'ডজন হামলা হয়েছে। গোপালগঞ্জে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পোঁতা থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সবই ছিল সুপরিকল্পিত। এবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাৰাত বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনা বলেছেন, 'বুলেট আমাকে সর্বৰণিক তাড়া করছে।' তবে তিনি মৃতু্যকে ভয় পান না জানিয়ে টাইমসের সাংবাদিককে বলেছিলেন, 'জীবন মৃতু্য পায়ের ভৃত্য চিত্ত যেথা ভয়শূন্য।' অতি সম্প্রতি তিনি ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন বলে সংশিস্নষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
সর্বশেষ কেরানীগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা স্বপনকে গত সপ্তাহে হত্যা করেছে শিবির ক্যাডার মিজান। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, স্বপন খুনের দায়ে অভিযুক্ত মিজানের ভাই জামালও শিবির করত। আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পর জামাল এখন স্থানীয় পর্যায়ে দাপটশালী যুবলীগ নেতা বনে গেছেন। স্বপন হত্যার বাইরেও গত এক সপ্তাহে বকর (ঢাবি), ফারম্নক (রাবি), মহিউদ্দিন (চবি) আর ফারম্নকের (ক্যান্টনমেন্ট) লাশ শিবিরের রক্ত পিপাসা মিটাতে পারেনি। এবার তারা নিজস্ব তালিকা অনুযায়ী জিঘাংসা চরিতার্থ করবে। গোয়েন্দারা শিবিরের পরবর্তী হত্যা মিশনের তালিকাও উদ্ধার করেছে। জটিল কৌশলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর হত্যাকা-ের পর শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারম্নক হোসেনকে হত্যা করে। এই ঘটনার দু'দিনের মাথায় শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন শিবির ক্যাডারদের হাতে জীবন দেয়। একই দিন ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শিবির ক্যাডাররা ব্রাশফায়ারে ঝাঁঝরা করে দেয় ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নক হোসেনের দেহ।
রাজনৈতিক প্রতিপৰকে মোকাবেলায় শিবির এখন জামায়াতী পুরনো কৌশল নরহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। সরকারবিরোধী এই তৎপরতায় শিবির এক সময় শিবির থেকে বেরিয়ে যাওয়া জেএমবি, হরকত-উল-জিহাদকে এবং অতি সম্প্রতি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরকে পর্যনত্ম কাজে লাগাচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থী মৌলবাদীরা শিবির ক্যাডারদের প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অস্ত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিবির ক্যাডারদের এ্যাসাইনমেন্টও দিয়ে দেয়া হচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অদৃশ্য ইশারায় শিবির যে এ কাজে নেমেছে তার সাৰ্য বহন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। রাজশাহী থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা ঘুরে আসার পরদিনই শিবিরের খুনী বাহিনী শাহ মখদুম (এসএম) হলের ছাত্রলীগ নেতা ফারম্নককে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা চার ছাত্রলীগ নেতার রগ কেটে দেয়। শিবির ক্যাডারদের সরকারী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এভাবে হত্যা, রগকাটা আর নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের এহেন ঔদ্ধত্য আর স্পর্ধায় সারাদেশের মানুষ হতবাক। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনী চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে ইতোমধ্যে শিবিরের বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

No comments

Powered by Blogger.