রাজধানীতে ২০ হাজার পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন থাকছে- সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রণপ্রস্তুতিঃ ব্যাপক ধরপাকড় by আবু সালেহ আকন

জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা এবং জামায়াতের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে রণপ্রস্তুতি নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোয়। গতকাল বিকেল থেকেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে জলকামান, রায়টকার, টিয়ার শেল গান, প্রিজন ভ্যান এবং আর্মস ফোর্স ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় নামানো হয়েছে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট টিমের সদস্যদের। ডিবির বোম ডিস্পোজাল ইউনিট, বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়।

পুলিশের ঊর্ধ্বতনকর্তারা বলেছেন, নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা থাকবে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এ দিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আজকের হরতালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার নামে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকেও রাস্তায় নামানো হতে পারে। গতকাল বিকেল থেকেই পুলিশ ব্যাপকহারে ধরপাকড় শুরু করেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হাতে নিরপরাধ মানুষ নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মেস ও ছাত্রাবাসে বিকেল থেকে পুলিশ তল্লাশি  এবং গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, হামলা, ঝটিকা মিছিল, বোমাবাজি কিংবা যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেই লাঠিচার্জ, পিপার স্প্রে, টিয়ার শেল, গ্রেনেড গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশ রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায়ই এর প্রমাণ মিলেছে খোদ রাজধানীতে। কারওয়ানবাজার, বাড্ডা ও মিরপ্রুসহ কয়েকটি স্থানে মিছিল নামলে পুলিশ নির্বিচার গুলি চালায়। রাস্তার ওপর অনেককে ধরে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সাধারণ পথচারী বলে জানা যায়। পুলিশের সাথে সরকার সমর্থকরাও গতকাল বিকেল থেকে মাঠে নেমেছে। যাত্রাবাড়ীতে যুবলীগ কর্মীরা শিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি মুঈনুদ্দিনকে বেধড়ক প্রহার করে। পুলিশ সূত্র জানায়, সদর দফতর থেকে জেলা এসপিদের কাছে বিশেষ বেতার বার্তা পাঠানো হয়েছে। যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হাইওয়েসহ জেলা শহরের রাস্তায় র‌্যাব-পুলিশের বিশেষ টিম নামানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, আন্দোলনকারীরা যাতে মিছিল-মিটিং না করতে পারে সেজন্য ছক তৈরি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকেই রাজধানীতে ডিএমপির ৯ হাজার ৫৩৩ জন পোশাকধারী ফোর্স এবং এক হাজার রিজার্ভ ফোর্সসহ প্রায় ১৬ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া টহলে থাকছে র‌্যাবের প্রায় দুই হাজার সদস্য। পালাক্রমে দায়িত্ব পালনের জন্য এসব সদস্যদের ডিউটি শিডিউল তৈরি করা হয়েছে। দাঙ্গা ফোর্সের পাশাপাশি এপিবিএন, সোয়াত টিম ও বোম ডিস্পোজাল টিম গতকাল সকাল থেকেই ‘ওয়ার্মআপ’ করেছে। দাঙ্গা পুলিশের প্রত্যেক ইউনিটে পর্যাপ্ত টিয়ার শেল মজুদ করা হয়েছে। নয়া পল্টন, মতিঝিল, নাইটিংগেল ক্রসিং, মহাখালী, মিরপুর-১০, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর মোড়, শহীদ ফারুক সড়ক এবং ডেমরাসহ নগরীর ৬৪টি পয়েন্টে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এসব স্পটে থাকবে গোয়েন্দা ওয়াচম্যান, ডিবির ভিডিও ও স্টিল ক্যামেরাম্যানরা। এসব স্থান থেকে ছবি ধারণ করে পরে সে অনুযায়ী অ্যাকশন চালাবে পুলিশ। রাজধানীর আটটি ক্রাইম জোনে নামানো হচ্ছে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে আটক করে এই আদালত জেল-জরিমানা করতে পারবে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার সূত্র জানায়Ñ রমনা, লালবাগ, সূত্রাপুর, মতিঝিল, উত্তরা, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর ও সচিবালয় এলাকাকে বিশেষ জোন হিসেবে চিহ্নিত করে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রাজধানী ছাড়াও দেশের অন্য মহানগরীগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা শহরগুলোতেও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সন্দেহভাজন পিকেটারদের তালিকা হাতে নিয়ে পুলিশ অভিযানে নামছে। সেই তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতারের চেষ্টা চলবে। পাশাপাশি অস্ত্র, বোমা ও ককটেলসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধারে তৎপরতা চলছে দেশব্যাপী। হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামলে এমনকি তিন-চারজনের বেশি বেআইনি জমায়েত হলেই ধরপাকড়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান  সাংবাদিকদের বলেছেন, সোমবার জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারপরও তারা হরতাল ডেকেছে। বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। হরতালে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করলে পুলিশ তা কঠোরভাবে দমন করবে। দোষীদের তাৎক্ষণিকভাবে আইনের আওতায় এনে বিচার করতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় রাখা হচ্ছে। রায় ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করে জামায়াতের ক্যাডাররা যেন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ধরনের ক্ষতি করতে না পারে সে দিকে পুলিশের বিশেষ নজর রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.