নারীবান্ধব নীতির সুষ্ঠু বাসত্মবায়নেই সম্ভব বৈষম্য দূর- লিঙ্গবৈষম্য (শেষ) by শাহ আলম খান

 ভবিষ্যত নীতি ও পরিকল্পনায় নারীবান্ধব নীতি গ্রহণ ও তার অধিকতর বাসত্মবায়নই পারে কর্মসংস্থানের সকল ৰেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে। এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষই।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) তালিকাভুক্ত অধিকাংশ গবেষকই তাদের বিভিন্ন গবেষণা পত্রে নারী উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়ে সরকারের করণীয় উলেস্নখ করে বলেছেন, 'ভবিষ্যত নীতি ও পরিকল্পনায় সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নারীর কর্মসংস্থানের পথে সব ধরনের অনত্মরায় দূর করা। কর্মসংস্থানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে মহিলাদের অধিকতর অংশগ্রহণের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। পাশাপাশি নারীর জন্য বহুমুখী কর্মকাঠামো সৃষ্টি করা। এ জন্য মহিলা বিষয়ক সরকারী নতুন পদৰেপে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে রাজনৈতিক প্রতিশ্রম্নতিও থাকা আবশ্যক বলেও গবেষকরা মনত্মব্য করেছেন। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি প্রদানই কেবল পারে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে। তাই সর্বত্র অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের সমতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামাজিক অধিকারের বিসত্মৃতির পাশাপাশি এ ধারণাগুলোকে লিঙ্গীয় বিশেস্নষণে অনত্মর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি বলেই মনে করছেন সংশিস্নষ্টরা।
তাদের মতে, এর মধ্যদিয়েই সম্ভবপর হতে পারে লিঙ্গীয় অসমতা, পৰপাতিত্ব ও মজুরি বৈষম্যের অবসানের। এই ৰেত্রে মালিকপৰকেও তাদের মনোভাব পরিবর্তন করে আইএলও সনদ অনুযায়ী মর্যাদাপূর্ণ কাজ নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে মানবতাবাদী মার্কসের থিয়রিও ছিল সমাজের প্রতিটি ৰেত্রে মানুষের সমতা অর্জনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে। মার্কসের এ অভিমত সর্বৰেত্রে বাসত্মবভিত্তিক প্রয়োগ দেখতে চায় আজকের কর্মজীবী নারীরাও।
কর্মজীবী নারী নেত্রী শিরীন আখতার এ ব্যাপারে বলেন, অবিলম্বে সকল শিল্পকারখানা ও কর্মৰেত্রে চাকরির সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও শর্তসংবলিত নিয়োগপত্র প্রদান বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর করা হোক। সকল শ্রমিকদের জন্য বীমা তহবিল গঠন করতে হবে।
শ্রমিকের বৃহত্তর কল্যাণ বিষয়ে শিরীন আখতার জানান, সরকার, মালিকপৰ, ব্যাংক এবং এনজিও প্রতিষ্ঠান সমন্বয়ে হাউজিং প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে যেখানে স্বল্পমূল্যে শ্রমিকরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকের গৃহায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
বিআইডিএসের গবেষণায় উঠে এসেছে গার্মেন্টস শিল্প অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে এসব গার্মেন্টসের অবস্থানও বিশেষ কিছু এলাকায়ই কেন্দ্রীভূত। ফলে বাড়ি থেকে কারখানায় আসা-যাওয়ার পথে অনেক নারীই প্রায় সময় যৌন নিপীড়নের এমনকি ধর্ষণেরও শিকার হচ্ছে। তাই এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা যেতে পারে। এতে নারী শ্রমিকের যাতায়াত অনেকটাই নির্ভয় হবে। পাশাপাশি কারখানার তত্ত্বাবধানে শ্রমিকের যাতায়াতের জন্য চুক্তিভিত্তিক বাসের ব্যবস্থা করা গেলেও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। নারীর পদ উন্নয়ন ও কর্মদৰতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিৰণমূলক কর্মসূচীও নারী বৈষম্য রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সবার আগে প্রয়োজন শ্রমিকবান্ধব যেসব আইন-কানুন রয়েছে তার কার্যকর প্রয়োগ ও বাসত্মবায়ন করা।
তবে কোন কোন বিজ্ঞজন বলছেন, সমাজের সর্বসত্মরে যতৰণ না নারী নীতির বাসত্মব প্রয়োগ ঘটছে ততৰণ পর্যনত্ম লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান হবে না। এ কারণে তারা শীঘ্রই সর্বসত্মরে ঘোষিত নারী নীতির অধিকতর কার্যকর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নারী নীতির বাসত্মব প্রয়োগকে উপলব্ধি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, কেবল ভাল আইন হলেই হয় না, তা বাসত্মবায়নের নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। এজন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় পদৰেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিৰা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ভবিষ্যত নীতি ও পরিকল্পনার জন্য কর্মৰেত্রসহ বাড়ির কাজেও নারীর মূল্যায়ন ও অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলেছেন।
প্রত্যেক গৃহ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা প্রাপ্তি নিশ্চিত, হয়রানি-নির্যাতন বন্ধ ও নূ্যনতম মজুরি প্রদান করার কথা জানিয়েছেন বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন। গৃহশ্রমিকের অধিকার রৰায় তিনি রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসার কথা উলেস্নখ করেন।
উন্নয়নের মূল স্রোতে মহিলাদের ব্যাপক অংশগ্রহণের রাষ্ট্রীয় সেস্নাগান সত্ত্বেও কার্যত উন্নয়ন ব্যয়ের খুব কম অংশই মহিলাদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। বিগত সময়ে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ব্যয় বিতরণের চিত্র থেকে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক প্রশিৰণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বরাদ্দের জন্য প্রাধান্য দেয়া হলেও কার্যত তা বাসত্মবায়ন ছিল সামান্যই।
অর্থনৈতিক বিশেস্নষকরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মহিলাদের ৰেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অধিকতর প্রবাহ প্রয়োজন। পাশাপাশি সমতা এবং দৰতার আলোকে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যও দূরীকরণে উন্নয়ন ব্যয়ের সঠিক প্রাধান্যকরণ প্রয়োজন। বেসরকারী সংস্থাগুলো যেভাবে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মহিলাদের দৰতা বৃদ্ধি, সঞ্চয় ও সমবায়কে উৎসাহিত করেছে। সরকারী কর্মসূচীগুলোকেও সেভাবে মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান কর্মকা-ের উৎপাদন ৰমতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তিগত সংস্করণ ও প্রশিৰণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তাই সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভবিষ্যত নীতি ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মহিলা কর্মসংস্থানের পথে প্রধান অনত্মরায়গুলো দূর করা। একই সঙ্গে মহিলা কর্মসংস্থানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণে সহায়ক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এর জন্য বহুমুখী কর্মকাঠামো প্রয়োগ করার ওপরও সংশিস্নষ্টরা জোর দেন।
সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন, ভবিষ্যত নীতি ও পরিকল্পনায় নারীবান্ধব নীতির অধিকতর বাসত্মবায়ন হলেই কর্মৰেত্রে নারীর উৎপাদনশীলতা বাড়বে, কর্ম পরিবেশ উন্নত হবে। স্বল্পমূল্যের গৃহায়ন কার্যক্রমও কোন এক সময় শুরম্ন হবে। মহিলাদের চলাচলের পথেও সমসত্ম কাঁটা দূর হবে। ফলে সর্বত্রই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে বস্নাস্টের উপ-পরিচালক এ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন শ্রমিক এজেন্ডায় নারী ইসু্যগুলো এগিয়ে নেয়ার কথা জানান। শ্রম আইন-২০০৬ এবং তাতে যেসব চুক্তি আছে তা বাসত্মবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টির প্রতিও জোর দিতে হবে। এজন্য শ্রম আইনে আদালতের এখতিয়ার বাড়ানো উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
প্রিপ ট্রাস্টের উপ-পরিচালক শিরিন বানু মিতিলও অনুরূপভাবে বলেন, ২০০৬ সালে যে শ্রম আইন পাস হয়েছে সেটি বাসত্মবায়নের প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.