এসো মিলি প্রাণের মেলায় by ফাতেমা মাহফুজ

জাগো নব জীবনের/নির্মল দীপিকা,

মর্ত্যরে চোখে ধরো/স্বর্গের লিপিকা’

Ñএই স্লোগানকে সামনে রেখে গেল ২৬ জানুয়ারি ’১৩ শনিবার, ইডেন কলেজের স্নাতকোত্তর (২০০৮ ব্যাচ) শেষ করা কৃতী ছাত্রীদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।
শীতের সকালের হালকা হিমেল হাওয়ায় কলেজের মাঠ যেন বিগত ছাত্রীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। কেউ গ্রুপ ছবি তুলছে, কেউ বা গোল হয়ে আড্ডায় জমেছে, কেউ বা কফিতে চুমুক নিয়ে বান্ধবীদের সাথে হাঁটছে। অনেক দিন পর তাদের চিরচেনা কলেজে আসা। অনুভূতিটাই আলাদা। এ দিকে কলেজ থেকে বের হয়ে অনেকেই সংসারজীবন শুরু করেছেন। বিভিন্ন ব্যস্ততায় ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করা বা খোঁজখবর নেয়ার সুযোগই হয়নি। তাই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে গণিত বিভাগের ফাহিমা বলেনÑ ‘অনেক দিন পর সবাই একসাথে হয়েছি, খুবই ভালো লাগছে।’ এ দিকে ছবি তুলতে ব্যস্ত মনোবিজ্ঞান বিভাগের রিমা বলেনÑ ‘আগে নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে আলাদাভাবে সংবর্ধনা দেয়া হতো। কিন্তু এই প্রথমবার কলেজ কর্তৃপ এত বড় পরিসরে সংবর্ধনার আয়োজন করে, তাই অনেক ভালো লাগছে।’ অন্য দিকে ব্যবস্থাপনার প্রতি কিছু অভিযোগ তুলে সমাজকল্যাণ বিভাগের ফারহানা বলেনÑ ‘অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা, ভালো লাগছে। তবে আমরা যারা পেছনে বসতে পেরেছি, অতিথিদের কোনো বক্তব্য শোনা যাচ্ছে না। মাইকের সুব্যবস্থা নেই।’

এ দিকে কলেজ অধ্য প্রফেসর রওশন জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শিাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও শিা অধিদফতরের (মাধ্যমিক ও উচ্চ) মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমন্ত্রিত ছাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং নিজ নিজ বিভাগ থেকে উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট দেয়া হয়। এরপর কলেজ প থেকে সম্মানিত অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।

জানা যায়, কলেজের ২২টি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে প্রায় এক হাজার চুয়াত্তর জন শিার্থী। তাই উপস্থিত সব শিার্থীর ভালো ফলাফলের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বলেন- ‘শিার্থীদের ভালো ফলাফলের প্রতি সচেতন হতে হবে। আরো ভালো করতে হবে।’ এ ছাড়া দেশাত্ববোধ ও মানবতাবোধ নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য তিনি ছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান। এ দিকে শিার্থীদের দেশের ইতিহাস জানার প্রতি জোর দিয়ে এমপি ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন- ‘যে জাতি দেশের ইতিহাস জানে না, সে জাতি বড় হতে পারে না।’ তাই কলেজজীবন পেরিয়ে আগামী দিনগুলোতে শিার্থীরা যাতে দেশের প্রকৃত কল্যাণে শরিক হতে পারেন, তাই তিনি শিকদের প্রতি ছাত্রীদের প্রকৃত ইতিহাস শিা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অন্য দিকে শিার্থীদের সাফল্য ধরে রাখার উপদেশ দিয়ে শিাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন- ‘তোমাদের সাফল্যকে ধরে রাখতে হবে। আমাদের দেশ সামাজিক অগ্রগতির সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের ১৫০ দেশে আমাদের প্রায় এক শত আটাশি লাখ কর্মী কাজ করছে। তাই তোমরাও এগিয়ে যাও। তোমাদের আরো উচ্চশিায় শিতি হতে হবে।’ এ ছাড়া তিনি শিকদের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান করার প্রতিও বিদায়ী ছাত্রীদের আহ্বান জানান। এ দিকে মেয়েরা যাতে রাস্তাঘাটে হয়রানির স্বীকার না হন, তাই প্রফেসর স্বপ্না রানী সাহা মেয়েদের পথ চলার সময় সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন। সবশেষে প্রধান অতিথি শিামন্ত্রী বেশ হাস্যরসের সাথে বক্তব্য শুরু করে ব্যক্তিজীবনের কিছু অতীত স্মৃতিচারণ করেন। এ ছাড়া তিনি মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়ে আফসোস করে বলেন, ‘যুগ কত এগিয়ে গেছে, অথচ এই আধুনিক যুগেও আমরা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। তাই আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতি ছেলেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আর সমাজকে বদলানোর জন্য গতানুগতিক শিা নয়, চাই মৌলিক শিা। আর আমাদের সেই শিায় শিতি হতে হবে।’

পরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.