হাইকোর্টে জামিন পাওয়ার পরদিন আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন- একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে ফখরুলকে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কারাবন্দী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে। গত বুধবার হাইকোর্ট থেকে দুটি মামলায় ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো তাঁকে।
এ নিয়ে আট মাসে ছয়টি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো।
মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানার নতুন দুই মামলায় মির্জা ফখরুলকে মোট ১৭ দিনের জন্য রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। রিমান্ডের বিষয়ে ৮ জানুয়ারি মির্জা ফখরুলের উপস্থিতিতে শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম গত আট মাসে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় গত ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন তাঁকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পল্টন থানার একটি মামলা ও শেরেবাংলা নগর থানার আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ দুটি মামলাও হয়েছে ৯ ডিসেম্বর অবরোধ কর্মসূচির দিন। ওই দিন গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ অন্যান্য অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ৩৭টি মামলা হয়। বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে কারাগারে আটকে রাখতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মামলায়ও জড়ানো হতে পারে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৯ ডিসেম্বর অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মতিঝিল থানায় ও পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সূত্রাপুর থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ। গতকাল তাঁকে এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও মির্জা ফখরুলকে কেন এত দিন এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করেছেন, তদন্তের স্বার্থে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আগের মামলায় উচ্চ আদালত জামিন মঞ্জুরের পর দলের মহাসচিবের মুক্তির পথ রুদ্ধ করতে সরকার আবার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এটাকে ‘নিকৃষ্টতম উদাহরণ’ বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
বিএনপির সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিবকে এভাবে গ্রেপ্তারের ঘটনা গত ৩০ বছরে আমি দেখিনি। এ সরকার তা-ই করেছে। এটি অত্যন্ত নিচু স্তরের সংস্কৃতি। এটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোনো ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসবেন না।’
মাত্র আট মাসের ব্যবধানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে দুই দফায় গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৬ মে মির্জা ফখরুল প্রথম গ্রেপ্তার হন। ২৯ এপ্রিলের হরতালের দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে একটি বাসে আগুন দেওয়া ও সচিবালয়ে ককটেল ফাটানোর অভিযোগে করা পৃথক দুটি মামলায় তিনি প্রথম দফায় ২৯ দিন কারাবন্দী ছিলেন। এরপর জুন মাসে জামিনে মুক্তি পান।
পল্টন ও শেরেবাংলা নগর থানার মামলা দুটিতে মির্জা ফখরুল গত বুধবার উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। পরদিনই মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানার দুই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এ নিয়ে ফখরুলের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানান, সব সরকারের আমলেই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমা হয়ে থাকে। তবে, এ ধরনের মামলায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের জড়ানো বা গ্রেপ্তার করা এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন মঞ্জুরের পর আবার নতুন মামলায় জড়ানো নজিরবিহীন।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ৫৩ বছরের আইন পেশার জীবনে এ রকম কখনো দেখিনি। এর চেয়ে জঘন্য জিনিস কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। এটা আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’
বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় গত বছরের ২৯ এপ্রিল সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপি। ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ দুই ঘটনায় তেজগাঁও থানা ও রমনা থানার করা দুই মামলায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি ও ১৮ দলের ৩৩ জন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অবশ্য পরে সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.