‘উড়ে আসা’ নায়কে উদ্ধার শ্রীলঙ্কা

দিন তিনেক আগেও ছিলেন শ্রীলঙ্কায়। ছুটি কাটাচ্ছিলেন আয়েশ করে। কাল নিজেকে আবিষ্কার করলেন সিডনির ২২ গজে, গ্যালারিভরা দর্শক আর তেড়েফুঁড়ে আসা চার ফাস্ট বোলারের সামনে। শ্রীলঙ্কা দল ছোটখাটো এক ‘হাসপাতাল’ হয়ে ওঠায় উড়ে এসেছেন তিনি ‘এসওএস’ পেয়ে। প্রসন্ন জয়াবর্ধনে ফিট হতে না-পারায় শেষ মুহূর্তে ঢুকে গেলেন একাদশেও। সেই লাহিরু থিরিমান্নেই কাল শ্রীলঙ্কার ত্রাতা।
আগের সাত টেস্টে ওপেন করে ফিফটি করতে পেরেছিলেন একটি। প্রথমবার মিডল-অর্ডারে নেমে কাল খেললেন ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি। প্রাপ্য সেঞ্চুরিটা অল্পের জন্য ফসকে গেছে নিজের ভুলেই। তবে দলকে তিন শ ছুঁই-ছুঁই রান এনে দেওয়ার স্বস্তিটাই যদি একটু প্রলেপ বোলায় সেই দুঃখে। টেস্টে ২৯১ এমন কোনো রান হয়তো নয়। তবে বক্সিং ডে টেস্টের ভয়াবহ বিপর্যয়ে আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা আর চোটজর্জর দলের জন্য সারা দিন ব্যাটিং করাকে একরকম ঘুরে দাঁড়ানোই বলা যায়! মেলবোর্নে দুই ইনিংস মিলিয়েই শ্রীলঙ্কা করতে পারে ২৫৯!
প্রতিরোধের শুরু অবশ্য মাহেলা জয়াবর্ধনের ব্যাটে। দেশের বাইরে সর্বশেষ ২০ ইনিংসে ফিফটি নেই, এই সিরিজের আগের চার ইনিংসে রান ৩৪। এসব পাত্তা না দিয়ে সাঙ্গাকারা নেই বলে অধিনায়ক উঠে এলেন তিনে। চার রানে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচমতো দিয়েও বেঁচে গেছেন মাইক হাসি হাত ছোঁয়াতে না-পারায়। ইনিংসে খুঁত বলতে ওটুকুই। সেরা ফর্মের জয়াবর্ধনে যেমন খেলেন, খেলেছেন মন ও চোখকে প্রশান্তি দেওয়া তেমনই সব শট। জনসনকে চার মেরে বিদেশের মাটিতে ফিফটি ছুঁয়েছেন তিন বছর পর। স্বচ্ছন্দ ইনিংসে হঠাৎই ছন্দপতন, মিচেল স্টার্কের নতুন স্পেলের প্রথম বলে অফ স্টাম্পের বাইরে খোঁচায় শেষ ৭২ রানের ইনিংস।
দিনের শুরুটা ছিল আবেগময়। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় টনি গ্রেগের স্মরণে। গ্রেগকে শ্রদ্ধা জানান দুই দলের ক্রিকেটার, চ্যানেল নাইনে তাঁর সাবেক সব সতীর্থ, মাঠে উপস্থিত সবাই। টস জিতে অস্ট্রেলিয়া ফিল্ডিংয়ে নামে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা হাসির নেতৃত্বে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সাফল্যও হাসির হাত ধরেই। জ্যাকসন বার্ডের বলে করুণারত্নের পুল হাসি হাতে জমালেন স্লিপ থেকে খানিকটা দৌড়ে। লাঞ্চের খানিক আগে বার্ডের আউটসুইঙ্গার কেড়ে নেয় দারুণ খেলতে থাকা দিলশানের প্রাণ।
এরপরই তৃতীয় উইকেটে জয়াবর্ধনে-থিরিমান্নের ৬২। শুরুতে বেশ নড়বড়ে ছিলেন থিরিমান্নে। প্রথম বলে আম্পায়ার তাঁকে এলবিডব্লু দিলেও বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। বেশ কবার অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল, জনসনের বল ছোবল দিয়েছে বুকে-পিঠে। তবে অধিনায়কের বিদায় তাঁকে খোলস থেকে বের করে আনে। জয়াবর্ধনে আউট হওয়ার সময় থিরিমান্নের রান ৫৯ বলে ১৬। পরের ৪৮ বলে ৩৪ তুলে ছুঁয়েছেন ফিফটি। পঞ্চাশের পরে ৪৩ বলে ৪১। কিন্তু লায়নের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ওয়ার্নারের ডাইভিং ক্যাচ পেতে দিল না সেঞ্চুরি।
১৯৫৫ সালের পর সিডনিতে চার পেসার নিয়ে খেলছে অস্ট্রেলিয়া। উইকেট পেয়েছেন তিন পেসার, আগের টেস্টের সেরা জনসনই ব্যর্থ। প্রথম দুটির পর শেষ ২ উইকেটও নিয়ে সবচেয়ে সফলতম বার্ডই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নুয়ান প্রদীপের সর্বোচ্চ রান (১৭*) শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যায় তিন শর কাছাকাছি। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.