আধুনিক কবিতার প্রবাদপুরুষ টিএস এলিয়ট by নাজিব ওয়াদুদ

কবিতায় আধুনিকতার প্রবাদপুরুষ এলিয়ট। পুরো নাম টমাস স্টিয়ার্নস এলিয়ট। জন্ম ১৮৮৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, আমেরিকার মিসৌরির সেইন্ট লুইসে। এখানেই কেটেছে তাঁর জীবনের প্রথম ১৮টি বছর। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত এলাকার স্মিথ একাডেমি, পরে বস্টনের বাইরে মিল্টন একাডেমি, এবং শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন।
সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ শৈশব থেকে। কবিতা লেখা শুরু করেন চৌদ্দ বছর বয়সে, ফিটজেরাল্ডের অনুবাদ রুবাইয়াত অব ওমর খৈয়াম দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। সে সময় বেশ কিছু বিষণœ, এবং নাস্তিকতা ও নৈরাশ্যবাদী চতুষ্পদী শ্লোক লেখেন, তবে এগুলো কোথাও ছাপা হয়নি। তাঁর প্রথম প্রদর্শিত কবিতা প্রকাশিত হয়, তাঁর নিজের ভাষায়, ‘প্রথমে স্মিথ একাডেমি রেকর্ড, এবং পরে দ্য হার্ভার্ড অ্যাডভোকেট-এ; সেটা লিখেছিলাম আমার ইংলিশ শিক্ষকের অনুশীলন হিসেবে, বেন জনসনের অনুকৃতি ছিল সেটা। তিনি সেটাকে পনরো-ষোল বছরের একটা বালকের জন্য খুব ভাল হিসেবে গণ্য করেছিলেন। তারপর কিছু লিখি হার্ভার্ড-এ, দ্য হার্ভার্ড এ্যাডভোকেট-এর সম্পাদকগিরির নির্বাচনে জেতার জন্য, সেটা আমি খুব উপভোগ করেছিলাম। তারপর জুনিয়র এবং সিনিয়র ক্লাসের দিনগুলোয় বিস্ফোরণ ঘটার মতো অবস্থা হয়েছিল। আমি খুব বেশি লিখছিলাম, প্রথমে বোদলেয়র এবং পরে জুল লাফর্জের প্রভাবে, তারা হার্ভার্ডে আমার জুনিয়র ক্লাসের সময়কার আবিষ্কার।’
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার সময়, ১৯০৮ সালে, এলিয়ট সেখানকার লাইব্রেরিতে খুঁজে পান আর্থার সাইমন্সের দ্য সিম্বলিস্ট মুভমেন্ট ইন লিটারেচার (১৮৯৯)। এই গ্রন্থটি তাঁর কবিজীবন ও দৃষ্টিভঙ্গীকে আমূল বদলে দেয়।
১৯০৯-১০ কালপর্বে তিনি কবি হিসেবে নিজস্ব কণ্ঠস্বর আবিষ্কার ও প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। ১৯১০ সালের শেষ দিকে ফ্রান্সের প্যারিসে যান পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী নিতে। সেখানে এক বছর অবস্থানকালে হেনরি বার্গসঁ এবং পাবলো পিকাসোর মতো তৎকালীন ফ্রান্সের স্বনামখ্যাত বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, শিল্পী এবং সাহিত্যিকদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এদের চিন্তা এবং কাজের প্রভাব পড়ে তাঁর ওপর। তিনি বার্গসঁর সজ্ঞার বর্ধমান বিকাশ সম্পর্কিত দার্শনিক তত্ত্ব এবং চার্লস মুরের রক্ষণশীল (রাজতান্ত্রিক) রাজনীতি ও ধর্মনীতিÑএ দুটি পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি আগ্রহী হন। পরবর্তী বছর যে তিনি হার্ভার্ডে ডক্টরাল ডিগ্রী করতে গেলেন এটা তার কারণ।
১৯১০ থেকে ১৯১১ সালের মধ্যে তিনি তাঁর প্রাথমিক দিককার বিখ্যাত কবিতাগুলো, যেমন ‘দ্য লাভ সংস অব জে. আলফ্রেড প্রুফ্রক’, ‘পোর্ট্রেট অব এ লেডি’, ‘প্রিলিউডস’ এবং ‘র‌্যাপসডি অন এ উইন্ডি নাইট’ লিখে ফেলেন। এসব কবিতায় রবার্ট ব্রাউনিংয়ের মনোলগের শক্তি, প্রতীকবাদী কবিতার জাদুকরী সৌন্দর্য এবং লাফর্জের কবিতার বিচ্ছিন্নতার মিশেল ঘটান তিনি, তার সঙ্গে গেঁথে দেন তাঁর নিজের নৈতিক আকাক্সক্ষার বিষয়টিকে, এবং এইভাবে তীব্র শ্লেষাত্মক কৌতুকবোধের সঙ্গে অজ্ঞানতার দুর্বোধ্যতার প্রকাশ ঘটান।
১৯১১ সালে তিনি হার্ভার্ডে কাজ করেন সান্তায়ন, উইলিয়াম জেমস, জোসিয়া রয়েস এবং ভিজিটিং প্রফেসর বার্ট্রান্ড রাসেলের সঙ্গে। তিনি বার্গসঁর ওপর কাজ করেন। এ সময় তিনি পুরাতত্ত্ব এবং ধর্ম অধ্যয়ন করেন গভীর মনোযোগ দিয়ে। ১৯১৪ সালে একটা ফেলোশিপ কর্মসূচীর অধীনে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। প্রথমে গমন করেন জার্মানিতে এক সেমিনারে। কিন্তু প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে তাঁকে লন্ডন ফিরে আসতে হয়। ওই বছরই সেপ্টেম্বরের দিকে তাঁর পুরনো বন্ধু কবি আইকেন তৎকালীন কাব্যজগতের পুরোধা এজরা পাউন্ডের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তৈরি করে দেন। এজরা পাউন্ড প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে তাঁর কবিপ্রতিভার প্রতি আস্থা স্থাপন করেন এবং বিখ্যাত ‘পোয়েট্রি’ পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন। এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি বলেনÑ “হ্যাঁ,.. আইকেন... আমার কিছু কবিতা লন্ডনে চালানোর চেষ্টা করে,... কেউ সেগুলো ছাপতে রাজি হয়নি। সে ওগুলো আমার কাছে ফেরত আনে। তারপর ১৯১৪ সালে, আমার মনে পড়ে, আমরা উভয়ে গ্রীষ্মকালে লন্ডনে গিয়েছিলাম। সে বলল, ‘পাউন্ডের কাছে যাও। তাকে তোমার কবিতা দেখাও।’ সে ভেবেছিল পাউন্ডের সেগুলো পছন্দ হবে। ...আমিই প্রথমে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। কেনসিংটনে তার ছোট্ট ত্রিকোনাকার বসার ঘরে আমি একটা ভাল ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছিলাম। তিনি বললেন, ‘আমার কাছে তোমার কবিতা পাঠাও।’ তিনি ফেরত চিঠিতে লিখলেন, ‘এ যাবৎ আমি যা কিছু দেখেছি তার মতোই সুন্দর এগুলো। আমার কাছে এস, আমরা এগুলো নিয়ে আলাপ করব।’ কিছুদিন পর তিনি ওগুলো হ্যারিয়েট মনরোর কাছে পাঠিয়ে দেন।” বলা বাহুল্য, এই দুজন মিলে পরে এ্যাংলো-এ্যামেরিকান তথা পুরো বিশ্বের কবিতা-প্রকল্পনার আঙ্গিক, বিষয় এবং বোধকে আমূল পাল্টে ফেলেন।
১৯১৫ সালের প্রথম দিকে, র্শিটন একাডেমি এবং হার্ভার্ডের পুরনো বন্ধু স্কফিল্ড থায়ারের মাধ্যমে পরিচয় হয় নৃত্যশিল্পী ভিভিয়েন হেইগ-উডের সঙ্গে। তিনি তাঁর প্রতি আসক্ত হন এবং ওই বছর জুনে তাকে বিয়ে করেন। এতে তাঁর পিতা-মাতা বিরক্ত হন এবং যখন তাঁরা ভিভিয়েনের কিছু দৈহিক ও মানসিক সমস্যার কথা জানতে পারেন তখন খুব আহত হন। এলিয়ট স্ত্রীকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভিভিয়েন সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। ফলে তাঁকে লন্ডনেই স্থায়ী হতে হয়। এইভাবে তিনি পিতা-মাতা ও ভাইবোনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি।
লন্ডনে এই দম্পতিকে প্রথম দিকে নানাভাবে সাহায্য করেন বার্ট্রান্ড রাসেল। তিনি তাঁদের নিজ ফ্ল্যাটে থাকা এবং নানান সামাজিক সুবিধা ভোগের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু রাসেল এবং ভিভিয়েনের মধ্যকার সাময়িক ঘনিষ্ঠতাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কের ছেদ ঘটে। এলিয়ট চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। জীবনধারণের জন্য এলিয়ট তখন স্কুলে শিক্ষকতাসহ নানান ধরনের কাজ করেন। এই দুঃসময়ে তিনি পিতা-মাতার মনতুষ্টি বিধানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্যও কঠিন পরিশ্রম করেন। ১৯১৬ সালের এপ্রিলে তাঁর গবেষণাপত্র জমা দেন কিন্তু চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারে উপস্থিত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি ডিগ্রী অর্জন করতে পারেননি। এই সময় তিনি একই সঙ্গে আভগার্দে পত্রিকা ‘ইগোয়িস্ট’-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯১৭ সালের বসন্তে তার চাকরি হয় বিখ্যাত লয়েড ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায়। আর্থিক নিরাপত্তা এলে আবার তিনি কবিতা চর্চায় আত্মনিবেদন করেন। তাঁর প্রথম বই প্রুফ্রক এ্যান্ড আদার অবজার্ভেশন্স প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে, কবি এজরা পাউন্ড ও তাঁর স্ত্রী ডরোথি পাউন্ডের আর্থিক সহায়তায়।
একজন তরুণ আমেরিকান হিসেবে তিনি ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবী ও লেখক-শিল্পী সমাজে সহজ প্রবেশাধিকার লাভ করেন প্রথমত, রাসেলের এবং দ্বিতীয়, পাউন্ডের সহায়তায়। ১৯২০ সালে তাঁর ক্ষীণকায়া দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ পোয়েমস এবং প্রথম সমালোচনাগ্রন্থ দ্য স্যাক্রেড উড্স প্রকাশিত হয়। ব্যাংকের চাকরি এবং লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘ইগোয়িস্ট’-এ প্রকাশমান জেমস জয়েসের ধারাবাহিক উপন্যাস ইউলিসিস-এর প্রুফ দেখার কাজ করেন। আর এজরা পাউন্ডের অনুপ্রেরণায় তাঁর সঙ্গে মিলে আত্মনিয়োগ করেন আধুনিক শিল্প ও সাহিত্যের নিরীক্ষামূলক আন্দোলন গড়ে তোলার অভিযানে।
এলিয়টের সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠা লাভ ঘটতে থাকে, কিন্তু পারিবারিক দুঃখ তাঁকে যন্ত্রণা দিতে শুরু করে। ১৯১৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁর পিতা মারা যান। এই মৃত্যু তাঁকে অপরাধবোধে আক্রান্ত করে। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর বিয়ে এবং অভিবাসন তাঁর পিতাকে যে কষ্ট দিয়েছে তার লাঘব করবেন। কিন্তু সে সুযোগ হারিয়ে যায়। একই সময় স্ত্রী ভিভিয়েনের মনোরোগ ও স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এ দুটি ঘটনায় এলিয়ট আর্থিক এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯২১ সালের গ্রীষ্মে মা ও বোনের সঙ্গে দেখা করে আসার পর তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি প্রথমে মার্গেট সমুদ্রতীরে এবং পরে সুইজারল্যান্ডের লুসানিতে একটি স্বাস্থ্যনিবাসে কিছু সময় কাটান। হয়তো দীর্ঘদিন আগেই তাঁর এই বিশ্রাম প্রয়োজন ছিল। এই সময় একটি চমৎকার ঘটনা ঘটে। ১৯১৯ সালে তিনি একটি দীর্ঘ কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ করতে পারছিলেন না। এই বিশ্রামের সময় তাঁর কল্পনা ও সৃজনশক্তি নতুনভাবে উন্মিলিত হয়, তিনি লেখাটি শেষ করতে সক্ষম হন। এটাই তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘ওয়েস্টল্যান্ড’। এটি রচিত হয় তাঁর লন্ডনের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে। নাটকীয় নকশা এবং বিচিত্র জিনিসের সংমিশ্রণে একটি দক্ষ এবং দুঃসাহসী ছান্দসিক সৌন্দর্য এটি। এলিয়টের নিজ জীবনের ভয়ঙ্কর চিত্র এটি, কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এটি মোহমুক্তির কান্নার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এজরা পাউন্ড মূল কবিতাটির সম্পাদনা করেন এবং প্রচুর কেটে বাদ দিয়ে বর্তমান আকারে নিয়ে আসেন। তিনি এই কবিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এদিকে এই কবিতা লেখার কথা শুনে এলিয়টের পুরনো বন্ধু থেয়ার, তখন ‘ডায়াল’ নামে একটি সাহিত্যপত্রিকার মালিক, তিনি তার পত্রিকার জন্য কবিতাটি পাওয়া নিশ্চিত করতে দুই হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন। তাছাড়া ‘ওয়েস্টল্যান্ডে’র প্রচারের জন্য তৎকালীন প্রখ্যাত সমালোচক এডমন্ড উইলসনকে দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখিয়ে নেন।
এরপর ১৯২২ সালে, তিনি একটি সাহিত্যপত্রিকা সম্পাদনার প্রস্তাব পান। উচ্চমান সম্পন্ন এই পত্রিকা ক্রাইটেরিয়নের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ওই বছরের অক্টোবরে। এই পত্রিকা তাঁকে যেমন ইংরেজি সাহিত্যের মহারথী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগ করে দেয় তেমনি তিনি এটির মাধ্যমে ইউরোপীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আধুনিকতার পথে চালিত করতে সক্ষম হন। কিন্তু পারিবারিক অশান্তি তার পিছু ছাড়েনি। ১৯২৩ সালে তাঁর স্ত্রী ভিভিয়েনের অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় তিনিও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। বছর দুই পরে বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ফেবার এ্যান্ড গয়ার (পরবর্তীকালের ফেবার এ্যান্ড ফেবার)-এ যোগদান করেন। একই সময়ে তিনি ধর্মের দিকেও ঝুঁকে পড়েন। যোগ দেন এ্যাংলিক্যান চার্চে। তাঁর এই ধর্মবিশ্বাসের প্রতিফলন পাওয়া যাবে দি হলো মেন-এ, যেটাকে ওয়েস্টল্যান্ড-এর ধারাবাহিকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯২৭ সালের জুনে তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। একই বছর নভেম্বরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। এসব নিয়ে তখন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৮ সালে আবার তিনি আলোড়ন তোলেন রক্ষণশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। এতে তিনি নিজেকে ‘সাহিত্যে ধ্রুপদীবাদী, রাজনীতিতে রাজতন্ত্রী এবং ধর্মে এ্যাংলো-ক্যাথলিক’ বলে ঘোষণা দেন। এরপর থেকে তাঁর কবিতার আরদ্ধ হয়ে ওঠে ধর্ম এবং অধ্যাত্মচিন্তা। এ ধরনের কবিতার উদাহরণ ‘এ জার্নি অব দ্য ম্যাজাই’ (১৯২৭), ‘এ সং ফর সাইমিওন’ (১৯২৮), ‘এ্যানিমিউলা’ (১৯২৯), ‘মেরিনা’ (১৯৩০) এবং ‘ট্রায়াম্ফাল মার্চ’ (১৯৩১)। এই ধারার কাব্য এ্যাশ-ওয়েন্সডে (১৯৩০) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এলিয়ট তাঁর লেখক জীবনের শেষার্ধে নাটক লেখায় মনোনিবেশ করেন। এ রকম একটি নাটক দ্য রক (১৯৩৪)। ১৯৩৫ সালে লেখেন মার্ডার ইন দ্য ক্যাথেড্রাল। বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশক জুড়ে এলিয়ট যে নাট্যচর্চা করেন তাতে সামাজিক আচরণের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সংকটকে তুলে ধরেন। ১৯৩৯ সালে দ্য ফ্যামিলি রিইউনিয়ন মঞ্চস্থ হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। ১৯৪৯ সালে লেখেন জনপ্রিয় নাটক দ্য ককটেল পার্টি। একই জনপ্রিয়তার ধারায় এরপর আসে দ্য কনফিডেনশিয়াল ক্লার্ক (১৯৫৩) এবং দ্য এলডার স্টেটসম্যান (১৯৫৮)।
এলিয়টের কবিখ্যাতি এবং পাি ত্যের সুনাম ১৯২০ সাল থেকে শুরু, এবং তা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ১৯২৬ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি তাঁকে সম্মানজনক ক্লার্ক লেকচার দিতে ডাকে। ১৯৩২-৩৩ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে নর্টন লেকচার দেন। ১৯৪৮ সালে পান নোবেল পুরস্কার। ১৯৫০ সাল নাগাদ ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর মান-অবস্থান স্যামুয়েল জনসন কিংবা কোলরিজের মতো ব্যক্তিত্বদের কাতারে উঠে যায়। কিন্তু বলা বাহুল্য, বহির্জগতে এই বিপুল সাফল্য লাভ করলেও, ১৯২৫ সালের পর থেকে তাঁর পারিবারিক জীবন চরম বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়। ১৯৩২ সালে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে, যদিও এ্যাংলিক্যান ধর্মবিশ্বাসের কারণে তিনি তাকে আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স দেননি। ১৯৪৭ সালে ভিভিয়ানের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে আর কখনও কোনও যোগাযোগ হয়নি।
এ রকম বিপর্যয় সত্ত্বেও এলিয়টের কাব্যযাত্রা অব্যাহত থাকে। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বার্ন্ট নর্টন’ রচনা করেন। সেটা কাব্যগ্রন্থ কালেক্টেড পোয়েমস ১৯০৯-১৯৩৫ (১৯৩৬)-এর শেষ কবিতা হিসেবে সংকলিত হয়। এই কবিতাটি এলিয়টকে পরবর্তী এক দশক পর্যন্ত প্রধান কবির আধিপত্য দান করে।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলে ‘ক্রাইটেরিয়ন’-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তিনি কিছুকাল এয়ার-রেইড ওয়ার্ডেন হিসেবে কাজ করেন। তারপর চলে যান গ্রামে এক বন্ধুর আতিথেয়তায়। সেখানে বসে লেখেন তিনটি কবিতাÑ ‘ইস্ট কোকার’, ‘দ্য ড্রাই স্যালভেজেস’, এবং ‘লিটল গিডিং’। ‘বার্ন্ট নর্টন’ এবং এই তিনটি কবিতার সমন্বয়ে তিনি গ্রন্থনা করেন ফোর কোয়ার্টেট্স (১৯৪৩)। এর আগে কবিতাগুলো আলাদা আলাদাভাবে প্রকাশিত হয়। এলিয়ট ফোর কোয়ার্টেট্সকে তাঁর মাস্টারপিস গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই চারটি দীর্ঘ কবিতার প্রত্যেকটায় আছে পাঁচটি করে অধ্যায়। এই কাব্যে কালের চারিত্র্য এবং মানবীয় পরিস্থিতির সঙ্গে এর সম্পর্ককে যাচাই করে দেখা হয়েছে আধ্যাত্মিক, ঐতিহাসিক এবং পার্থিব প্রেক্ষিতে। চারটি কবিতা বায়ু, মাটি, পানি এবং অগ্নিÑএই চারটি মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। খ্রিষ্টীয় মতবাদ, ঐতিহ্য ও ইতিহাস না জানলে ফোর কোয়ার্টেট্সকে অনুধাবন করা মুশকিল। এতে দাঁন্তের মতো ব্যক্তিত্বদের আধ্যাত্মিকতা, শিল্প, প্রতীকবাদ ও ভাষা এবং সেইন্ট জন অব দ্য ক্রস ও জুলিয়ান অব নরভিকের মতো ব্যক্তিত্বদের আধ্যাত্মিকতার মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। এই গ্রন্থটি সে সময় ওয়েস্টল্যান্ডের সাফল্যকেও ছাড়িয়ে যায়।
এরপর এলিয়ট তেমন বড় ধরনের কবিতার কাজ করেননি। বরং নাটক এবং সাহিত্যসমালোচনা নিয়ে মগ্ন থেকেছেন। ১৯৫৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি ভ্যালেরি ফ্লেচারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ভ্যালেরির আগ্রহেই মূলত এই বিয়ে সম্পাদিত হয়। তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ৪ জানুয়ারি এলিয়টের মৃত্যু পর্যন্ত এ বিয়ে টিকে ছিল। মৃত্যুর পর এলিয়টকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ইস্ট কোকারের সেইন্ট মাইকেল চার্চে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধিতে তাঁর স্বনির্বাচিত এই বাণী (ফোর কোয়ার্টেটস থেকে নেয়া) খোদিত করা হয়Ñ ‘আমার সূচনাতেই নিহিত আমার শেষ, আমার সমাপ্তিতেই নিহিত আমার শুরু।’
কবি হিসেবে তাঁর আগ্রহ ও ঐতিহ্যিক যোগসূত্র ছিল সপ্তদশ শতাব্দীর ইংলিশ দার্শনিক কবিদের (বিশেষভাবে জন ডান) এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ফরাসী প্রতীকবাদী কবিদের (বিশেষত বোদলেয়র এবং লাফর্জ) প্রতি। কিন্তু তিনি কবিতার প্রকরণ এবং বিষয়বস্তু নিয়ে সব সময় নতুন-নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এ ব্যাপারে ‘দ্য প্যারিস রিভিউ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না কেউ অবিরাম (পূর্বসূরী বা সমকালীন ধারাকে) প্রত্যাখ্যানের চেষ্টা চালিয়ে যাবে, বরং তার জন্য সঠিক কোনটা তার সন্ধান করতে হবে। ...আমি বিশ্বাস করি না কতকগুলো প্রতিষ্ঠিত আঙ্গিককে ছুড়ে ফেলার রাজনৈতিক প্রয়াস কোন ভাল কবিতার জন্ম দিতে পারে। আমি মনে করি এটা কেবল অবস্থান বদল। লোকেরা তাদের নিজেদের কথা বলার জন্য উপায় খোঁজে। ‘আমি বলতে পারি না এটা সেই পথ, আমি সেই পথ খুঁজছি যেটা আমার কাজে লাগবে।’ প্রচলিত রীতি নিয়ে কারও প্রকৃতপক্ষেই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।’ একই সাক্ষাৎকারের অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবিপ্লবের মতো কিছু দেখি না। ঐতিহ্যিক আঙ্গিক থেকে সরে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আগ্রহের কাল আসে। এতে ভাল কিছু উৎপন্ন হতে পারে যদি মাঝখানে যা ঘটেছে তা তার থেকে পৃথক কিছু হয় : যখন এটা নিছকই পশ্চাদপসরণ নয়, বরং পুরনো আঙ্গিককে নতুন করে নিয়ে আসা, যেটা বহুকাল যাবৎ অব্যবহৃত হয়ে রয়েছে; এবং এটার সঙ্গে মিলিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা। এটা প্রতিবিপ্লব নয়। কিংবা একে পশ্চাদগমন বলাও চলে না। কোনও কোনও মহলের ভেতর জর্জিয়ান দৃশ্য এবং আবেগে প্রত্যাবর্তন করার প্রবণতা দেখা যায়; আর সাধারণ্যে এমন লোক সব সময়ই থাকে যারা মধ্যপন্থা পছন্দ করে, এটা পেলে তারা বলে, ‘কী প্রশান্তি! আবার কিছু সত্যিকারের কবিতা পাওয়া গেছে।’ আবার এমন লোকও আছে যারা চায় কবিতা আধুনিক হোক, কিন্তু তাদের কাছেও সত্যিকার সৃজনশীল জিনিস বেশ কঠিন বলে প্রতীয়মান হয়Ñতাদের প্রয়োজন কিছুটা তরল জিনিস।’
তিনি ভিক্টোরীয় যুগের সাহিত্যিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং নিয়ম-প্রথা নিয়ে প্রথম মহাযুদ্ধ-পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের মোহমুক্তির বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে চিত্রিত করেছেন। একই সঙ্গে ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার মধ্যে আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক শান্তি ও স্বস্তির সন্ধান করেছেন। সে জন্য তাঁর শেষ দিককার জীবন এবং সাহিত্যকর্মে খ্রিষ্টীয় সমাজ ও ধর্মীয় রক্ষণশীলতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।
এলিয়ট যত বড় কবি সে তুলনায় তাঁর কাব্যকর্মের পরিমাণ কম। এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি তাঁর প্রফেসরকে লিখেছিলেনÑ‘লন্ডনে আমার খ্যাতি গড়ে ওঠে কবিতার একটি ছোট্ট সংকলনকে নির্ভর করে, আর সেটা বহাল আছে বছরে আরও দু’তিনটা করে কবিতা প্রকাশের কারণে। যেটা সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় সেটা হলো এগুলোকে হতে হবে বিশুদ্ধ ধরনের, যেন প্রত্যেকটিই একেকটি ঘটনা হয়ে ওঠে।’
তিনি তাঁর কবিতাগুলো প্রথমে বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকা ও সাময়িকীতে ছাপতেন, তারপর ছোট ছোট বই বা পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করতেন। তারপর এ রকম অনেকগুলো কবিতা এবং বই ও পুস্তিকার সমন্বয়ে বের করতেন কাব্যসংগ্রহ।
যদিও এলিয়ট তাঁর সাহিত্যসমালোচনামূলক কাজগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন না, বলতেন এগুলো তাঁর নিজস্ব ‘কবিতা-কারখানা’র বাই-প্রোডাক্ট’, তবু এ কথা সত্য যে, তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসমালোচক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর প্রবন্ধগুলো সাহিত্যসমালোচনা তত্ত্বের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ‘নিউ ক্রিটিসিজম’ তত্ত্বকে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত করেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ‘ট্রাডিশন এ্যান্ড দি ইনডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্ট’-এ বলেছেন, শিল্পকে শূন্য থেকে বিবেচনা করলে চলবে না, একে পূর্বসূরীদের প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেছেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই অতীতের মান দ্বারা বিচার করতে হবে। অর্থাৎ কোন শিল্পকর্মই ঐতিহ্যবিচ্যুত হতে পারবে না।
নিউ ক্রিটিসিজম-সম্পর্কিত আরেকটি ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর ‘হ্যামলেট এ্যান্ড হিজ প্রোব্লেমস’ প্রবন্ধে, যেখানে প্রতিবেদনের শব্দ, মানসিক অবস্থা এবং ভজ্ঞতার মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এই ধারণা এ কথাই সত্য বলে ধরে নেয় যে, কবিতার অর্থ তার বক্তব্যেও মধ্যেই নিহিত, কিন্তু বিভিন্ন পাঠকের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার কারণে তার অবস্তুগত বিচারও করা চলে। তাছাড়া তাঁর ‘ধ্রুপদী’ আদর্শ এবং ধর্মীয় চিন্তা, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিককার কবিতা ও নাটকের প্রতি মনোযোগ, রোম্যান্টিক কবিদের, বিশেষত শেলীকে খারিজ করে দেয়া, ‘ভাল কবিতা আবেগের বহিঃপ্রকাশে নয়, বরং আবেগ থেকে মুক্তির মাধ্যমে নির্মিত হয়’ এই ধারণা, এবং তাঁর সিদ্ধান্ত যে ‘কবিদের...বর্তমানকালে অবশ্যই দুর্বোধ্য হতে হবে’, এসব থেকে নিউ ক্রিটিসিজমের অনুসারীরা অনেক সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
আধ্যাত্মবাদী কবিদের প্রতি আগ্রহ পুনরুজ্জীবনেও এলিয়টের প্রবন্ধ সাহিত্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ট্রাডিশন এ্যান্ড ইনডিভিজ্যুয়াল ট্যালেন্ট (১৯২০), দ্য স্যাক্রেড উড : এসেজ এ্যান্ড ক্রিটিসিজম অন পোয়েট্রি এ্যান্ড ক্রিটিসিজম (১৯২০), সিলেক্টেড এসেজ (১৯৩২), দি ইউজ অব পোয়েট্রি এ্যান্ড দি ইউজ অব ক্রিটিসিজম (১৯৩৩), দ্য থ্রি ভয়েসেস অব পোয়েট্রি (১৯৫৪), দ্য ফ্রন্টিয়ার্স অব ক্রিটিসিজম (১৯৫৬), অন পোয়েট্রি এ্যান্ড পোয়েট্স (১৯৫৭), ইত্যাদি।
এলিয়ট তাঁর কবিতাকে আমেরিকান সাহিত্যের ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করতেন। তিনি বলেছেন, আমি বলব যে আমার কবিতা ইংল্যান্ডে আমার প্রজন্মের লেখার চাইতে আমেরিকায় আমার সমকালীন খ্যাতনামাদের লেখার সঙ্গে অবশ্যই অনেক বেশি সমভাবাপন্ন। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’ তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ...তবে আমি এর চেয়ে বেশি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না...। এটা এমন হতে পারত না, এবং আমি কল্পনা করি, এতটা ভাল হতে পারত না; যত সুন্দরভাবেই আমি একে তুলে ধরি না কেন, এটা এমন হতে পারত না যদি আমি এমনকি ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করতাম, আবার আমি যদি আমেরিকায় বসবাস করতাম তাহলেও এ রকম হতে পারত না। আসলে এটা অনেক কিছুর সংমিশ্রণ। কিন্তু উৎসের দিক থেকে, আবেগের উৎসারণের দিক থেকে, এটা এসেছে আমেরিকা থেকে।’
মৃত্যুর পর ইউরোপ-আমেরিকায় এলিয়টের খ্যাতি ও চর্চা কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় তিনি আধুনিকতার প্রবাদপুরুষ হিসেবে বরিত হন। ১৯৮৮ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালনের সময় সারা বিশ্বের বিভিন্ন ঘরানার কবি ও সমালোচকরা তাঁকে বিচিত্রভাবে স্মরণ ও মূল্যায়ন করেন। তিনি এমন একজন কবি যিনি কখনও পুনরাবৃত্তি করেননি, ঐতিহ্যানুসারী থেকেও আবিষ্কার করেছেন নতুনতর কাব্যপ্রকৌশল ও বাগভঙ্গি, দিয়েছেন নতুনতর জীবনবোধ, উন্মুক্ত করেছেন কাল ও অন্তর্জীবনের ভয়াবহতাকে। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবি তিনি, যাঁর প্রভাব বিদ্যমান এখনও।

No comments

Powered by Blogger.