বেগম জিয়ার বিরূপ বক্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় by শাহজাহান মিয়া

একেবারে বাধ্য না হলে কারও সম্পর্কে কিছু বলা বা বিরূপ মন্তব্য করা আমার চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের একদম বাইরে। গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে রাজধানী ঢাকার গাবতলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে প্রায় বৃত্তাকারে ঘুরে বাড্ডার ভাটারায় তাঁর জনসংযোগ কর্মসূচী শেষ করেন।
এই পরিক্রমায় তিনি দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার পথ মোট আট ঘণ্টায় পাড়ি দেন। পথিমধ্যে ৫/৬টি সমাবেশ করেছেন। মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে লোক সমাগমও হয়েছিল প্রচুর। সন্দেহ নেই, কর্মসূচীটিতে কিছুটা হলেও অভিনবত্ব ছিল। তবে বক্তব্যে তেমন কোন নতুনত্ব ছিল না। প্রায় একই বুলি তিনি বার বার আওড়িয়েছেন। তার মধ্যে বিরোধীদলীয় নেত্রীর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মিথ্যাচারটাই ছিল প্রধান ও প্রণিধানযোগ্য। প্রথমেই ধরা যাক, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিরোধীদলের আন্দোলনের কথা। ২৬ তারিখের সভাগুলোতে বেগম জিয়া আগামী সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত একটি বিল আনতে সরকারের কাছে দাবি করেছেন। বিল পাস করা না হলে দেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে বিরোধীদলের আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে তাই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের বক্তব্য হচ্ছে, শুধু সদস্যপদ রক্ষার্থে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়া ছাড়া গত চার বছরে দিনের পর দিন সংসদে না গিয়ে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দোহাই তোলা বাতুলতা মাত্র। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালই যদি তাদের প্রধান দাবি হয়ে থাকে তাহলে সংসদে গিয়ে তাদেরই উচিত এ বিলটি তোলা। এটাই তাঁদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ। অথচ এ কাজটি না করে তাঁরা আবোলতাবোল বকছেন। গণসংযোগ কর্মসূচীর সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেছেন, “অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে এনে রায় দেয়া হয়েছে। শোনা যায় টাকার বিনিময়ে রায় দেয়া হয়েছে।”
সুপ্রীমকোর্ট প্রদত্ত রায় সম্পর্কে বিএনপি নেত্রীর মনগড়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল বলে দেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞরা মনে করছেন। দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী উচ্চ আদালতের রায় সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করলে সাধারণ জনগণেরও আইনের ওপর আস্থা কমে যাবে। তাঁরা আরও বলেছেন, আদালত ও রায় সম্পর্কে জনমনে অসত্য ধারণা সৃষ্টি ও তাদের বিভ্রান্ত করতে রাজনৈতিক উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান আইনের আওতায় বিচারযোগ্য অপরাধ। কারণ, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান অনুযায়ী কেউই আইনের ঊর্ধে নয়। আইনজ্ঞরা বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির পূর্বশর্ত আইনের শাসন। তাঁরা বলেন, সংসদে সর্বসম্মতভাবেও যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন আইন পাস করা হয় সেটাও সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাতিল বলে গণ্য হবে। বিশ্বের অন্য দেশেও আদালত অবমাননার অভিযোগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের নজির আছে। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা জিলানি। বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে এবার শুধু প্রশ্নই তোলেননি দুঃসাহসও দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু আওয়ামী লীগের মধ্যেই নয়, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী আছে। অর্থাৎ লাজ-শরমের মাথা খেয়ে খোদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ওপরই কালিমা লেপনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি পরিবারের সংজ্ঞাটাই ঠিকমতো জানেন কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। আর লজ্জা-শরমের বালাই তো তাঁর থাকারও কথা নয়। কারণ, তিনি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস কাটিয়েছেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অন্তরালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অফিসারদের পরম আদরযতœ ও উষ্ণ আতিথেয়তায়। তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা ও কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে এখন তাঁকেই বড়দরের একজন যুদ্ধাপরাধী বলে অভিহিত করা শুরু করেছেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও ময়মনসিংহে একটি জনসভায় সম্প্রতি বেগম জিয়ার বক্তৃতার উদ্ধৃতি বলেছেন, “নিজামী, গোলাম আযম যদি যুদ্ধাপরাধী না হয় তবে খালেদা জিয়া নিজেই যুদ্ধাপরাধী।” অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত নেত্রী মতিয়া আপা যথার্থই বলেছেন। কারণ, স্বামী মেজর জিয়াউর রহমান সীমান্তের ওপার থেকে তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য বার বার খবর পাঠালেও স্ত্রী খালেদা জিয়া তা মোটেই আমলে নেননি। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাঙালী সামরিক অফিসারদের সম্মানিত সহধর্মিণীরা প্রায় সবাই শত বাধাবিঘœ অতিক্রম করে ওপারে তাঁদের স্বামীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের আজকের ৬৭ বছর বয়স্ক বিরোধীদলীয় নেত্রী দীর্ঘ ৪১ বছর আগে ১৯৭১ সালে কেন বা কিসের টানে ঢাকা সেনানিবাসে থাকাই শ্রেয় মনে করেছিলেন, দুষ্ট লোকে অনেক কিছু বললেও এটা শুধু আল্লাহ্ গাফুরুর রাহিমই বলতে পারেন। ভবিষ্যতে এটা কৌতূহলী গবেষকদের জন্য একটা দারুণ গবেষণার বিষয় হলেও হতে পারে। তিনি এখন বলছেন বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে তারাই ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। তাহলে তিনি কি বলতে চান গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী এবং তাঁর দলের সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গং যুদ্ধাপরাধী নয়? গণসংযোগকালে বেগম জিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ওপর একহাত নিয়েছেন। নিজে একাত্তরে আরাম-আয়েশে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে থাকার কথা ভুলে গিয়ে তিনি বলেছেন, “মহীউদ্দীন খান আলমগীর মুক্তিযুদ্ধের শেষদিন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। এই রাজাকারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে যুদ্ধপরাধীর বিচার করা যাবে না।” সঙ্গত কারণে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কম যাননি। তিনিও যথাযথ উত্তরদানে বাধ্য হয়েছেন। তিনি এক অনুষ্ঠানে ঐ দিনই বলেছেন, “এ কথা তাঁর মুখে সাজে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার অবস্থান মানায় না। আর আমার প্রতি তাঁর ক্ষোভের কারণ আছে। একাত্তরে খালেদা জিয়া ছিলেন পাকিস্তানী জেনারেল জানজুয়ার হেফাজতে। ঐ জেনারেল তখন আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। আল্লাহ্র রহমতে আমি বেঁচে যাই। কাজেই খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে যত তাড়াতাড়ি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসবেন ততই তাঁর জন্য ও সবার জন্য মঙ্গলজনক।”
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের গণসংযোগে ব্যাপক শো-ডাউন করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির। গত ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় গাবতলী থেকে পথসভা শুরু হওয়ার আগে থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল খুবই সরব ও সক্রিয়। সব সভাতেই তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক তাদের দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে মুহুর্মুহু সেøাগান দিয়েছে। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব কার্যক্রম বন্ধ না করলে ট্রাইব্যুনাল ঘেরাও করার হমকি দেয়ারও স্পর্ধা প্রকাশ করেছে তারা। প্রত্যেকটি সভা-সমাবেশ ও মিছিলে বিএনপির চেয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকের মধ্যেই অনেক বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে গাবতলী, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ি, খিলগাঁও ও বাড্ডার ভাটারায় অনুষ্ঠিত পথসভাগুলোতে জামায়াত-শিবিরের দাবি ছিল তাদের আটক নেতাদের মুক্তি। তাদের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার বড় বড় ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে।
সামরিক শাসন ও সামরিক শাসনসমর্থিত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিচার বন্ধ রেখেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বিচারের আইন বাতিল করেছিল। গণসংযোগের সভায় “সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না”Ñ অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্যটি সর্বমহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়া একজন বিষধর কালসাপ। তিনি রাজাকার-আলবদর নামক বিষাক্ত সাপদের পুষছেন। তাঁর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের সাফল্য দেখে তিনি উল্টাপাল্টা বকছেন। তিনি আরও বলেন, তিনি তো চোখে সাপ দেখবেনই, সাপ সাপকেই চেনে। তাঁর চারপাশেই তো ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষাক্ত সাপেরা। সেসব সাপকেই তিনিই লালনপালন করছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, এই বিষধর সাপের কামড়েই তাঁর মৃত্যু হতে পারে। খালেদা জিয়াকে ‘বিষাক্ত কালনাগিণী’ আখ্যা দিয়ে তিনি যথার্থভাবেই বলেন, আওয়ামী লীগকে কখনও সাপের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কেননা তারাই একাত্তর সালে সাপের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেছিল। তারাই তো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে হায়েনারূপী পাকিস্তান বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিল। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি জিয়ার নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনীতি করছেন, কিন্তু জিয়া যখন মুক্তিযুদ্ধ করছিলেন তখন তিনি পাকিস্তানী জেনারেলদের সঙ্গে ছিলেন। জিয়ার সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য তাঁকে বার বার খবর পাঠালেও তিনি যাননি। সাজেদা চৌধুরী বলেন, এ এক নির্মম ইতিহাস। স্বামীর সঙ্গে তিনি তো যোগ দেননি, তিনি কি করে এদেশের নেতৃত্ব দাবি করেন!
প্রবীণ রাজনীতিক সাজেদা চৌধুরী ঠিকই বলেছেন যে, বেগম জিয়ার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তা না হলে তিনি এখন পুরনো কাসুন্দি ঘাটায় মত্ত হয়ে উঠতেন না। গত ২৬ ডিসেম্বর গণসংযোগকালে বেগম জিয়া একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর করমর্দনের ছবি প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, “এই দেখুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সোচ্চার ইনু করজোড়ে মওলানা নিজামীর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন।” অবশ্য ঐদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, “করমর্দন নয়, বরং নিজামী তাঁর পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তিনি তাঁর হাত ধরে ফেলেন।” তবে ছবিটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যই সত্য বলে মনে হয়। এ বিষয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের দাবি ধোপে টেকে না। ঘটনাচক্রে প্রায় দেড়যুগ আগে তোলা আরও একটি ছবি নিয়ে তা প্রদর্শনের খেলায় মেতে উঠেছিলেন তিনি। বেগম জিয়া প্রায় প্রতিটি পথসভায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, দলের আরেক নেতা শেখ সেলিম এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ্ইনুর ছবি দেখিয়ে বলেন, জামায়াত তখন যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। তখন জামায়াত যুদ্ধাপরাধী না হলে এখন কেন যুদ্ধাপরাধী হলো। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী হলে ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ কেন তাদের মাফ করে দিলেন। আর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তখন কেন তাদের বিচার করল না। শুনুন ম্যাডাম, ১৯৯৬ সালে বিচার করা হয়নি বলে ঐ জঘন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তামাদি হয়ে যায়নি। আর আপনার ভাষায় ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ আর এদেশের আপামর জনসাধারণের ভাষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধÑ যেমন গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের মাফ করেননি; বরং আপনার স্বামী প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানই এ কাজটি করেছিলেন। দালাল আইনে গ্রেফতারকৃত ৩৭, ৪৭১ বন্দীর মধ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় ২৬ হাজার মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত ৭৫২ যুদ্ধাপরাধীর বিচারও শেষ হয়েছিল। তাদের কয়েকজনকে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে তাদের শুধু মুক্ত করেই দেননি, তিনি মৌলবাদীদের জন্য এদেশে ধর্মীয় রাজনীতির পথও নিষ্কণ্টক করে দিয়েছিলেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীন আবদুল আলীমকে মন্ত্রী বানিয়ে বাড়ি-গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর অধিকার দিয়ে বাঙালী জাতির রক্তমাখা পতাকার চরম অবমাননা ও অমর্যাদা করেছিলেন। স্বামীর পথ ধরে বেগম জিয়াও একই কাজ করেছেন। কাওরান বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত সভায় দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে যুব সমাজকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “একবার মুক্তিযুদ্ধ করেছি, প্রয়োজনে দেশ রক্ষার জন্য আরেকবার যুদ্ধ করব।” ম্যাডাম, আপনার এ কথা শুনে শুধু দেশের সবশ্রেণীর মানুষ হাসিতেই ফেটে পড়বে না, আপনার এই অলীক দাবিকে জাজ্বল্য মিথ্যাচারের চরম প্রকাশ বলেই আখ্যায়িত করবে। কারণ, কথাটি তো সবারই জানা যে, একাত্তর সালে আপনি আপনার স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে সীমান্তের ওপারে না গিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে আপনার পাকিস্তানী বন্ধুদের আদর-আপ্যায়নে শুয়ে-বসে-ঘুরে কাটিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, এ বক্তব্যের পরে সুযোগ পেলে আপনি আপনার মৌলবাদী বন্ধুদের নিয়ে এ ভূখ-টিকে আবার আপনার পরম প্রিয় পাকিস্তানের অংশ বানানোর চেষ্টা হয়ত করতে পারেন বলে অনেকেরই মনে হয়েছে। তাই ম্যাডাম, এ মুহূর্তে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখাই হবে বেহেতের। অন্যের পরিবারের দোষ খোঁজার আগে নিজের পরিবারের দোষের পাহাড় সম্পর্কে সচেতন হওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ; তা না হলে, বড় গলা যে কার সেটাও প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। আর সুন্দর ও ইতিবাচক বক্তব্য প্রদান গণতন্ত্র সুরক্ষায়ও সহায়ক হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.