আদালত অবমাননায় জিয়াউদ্দিনকে শোকজ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারকদের বিষয়ে মন্তব্য করায় বেলজিয়াম প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে শোকজ নোটিস জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। স্কাইপে যে মতামত দিয়েছে তার ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।
চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ প্রদান করে।
ট্রাইব্যুনাল ড. আহম্মেদ জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে রুল জারি করে আদালত বলেন যে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-২এর বিচারপতিদের নিয়ে যে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছে এই বিষয়ে তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে হবে। আদেশের দুটি অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেলজিয়ামে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল বলে যে, ৭ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসে তিনি তার ব্যাখ্যার অনুলিপি জমা দেবেন, পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে স্কাইপে কথিত কথোপকথন সত্যি কিনা এবং সত্যি হলে কোন ক্ষমতাবলে বিচারিক বিষয়ে মত দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে। জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপে কথিত কথোপকথন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আলোচনার মধ্যে ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন বিচারপতি নিজামুল হক। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের দাবি, বিচারপতি নিজামুল হক এর মাধ্যমে শপথ ভঙ্গ করেছেন।
অন্যদিকে এ্যাটর্র্নি জেনারেলসহ সরকার সমর্থক আইনজীবীদের দাবি, হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধ করে বিচারকের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রুল জারির সময় বলেন, সম্প্রতি স্কাইপে আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের যে কথোপকথন প্রকাশ হয়েছে, সেটি সত্য নাকি মিথ্যা, তা অফিসিয়ালি জানা দরকার। যদি তা সত্যি হয়ে থাকে তবে তা অবৈধ। যেহেতু তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নন, তাই অফিসিয়ালি ও আনঅফিসিয়ালি এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি কথা বলতে পারেন না।
আদালতের রুল জারির পর ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মুন্সি আহসান কবির বলেন, আহমেদ জিয়াউদ্দিন স্কাইপে যে কথোপকথন করেছেন, তার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। রাজাকাররা সারাদেশে ’৭১ সালে মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু তিনি কয়েকজনের শাস্তির সুপারিশ করে ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের অনুভূতিতে আঘাত করেছেন।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, বেলজিয়ামে অবস্থানরত প্রবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনকে ট্রাইব্যুনাল-২এ শোকজ নোটিস দিয়েছেন। কারণ তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয় ও বিচারপতিদের নিয়ে মন্তব্য ও হস্তক্ষেপ করেছেন। যদিও ট্রাইব্যুনাল-২এর বিচারপতিরা স্কাইপের বিষয়ে অবগত না এবং তারা এ স্কাইপের সঙ্গে জড়িত না।
প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেন, আহমেদ জিয়াউদ্দিন ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ অসৌজন্যমূলক, এখতিয়ার বহির্ভূত ও ক্ষমতার বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি বলেন, আদালত আরও বলেছে, ৩০ লাখ শহীদের আত্মানুভূতির জন্য এই বিচার কাজ করা হচ্ছে, আহমেদ জিয়া উদ্দিনের হস্তক্ষেপের জন্য এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারি না।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের অধিবাসী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপে সংলাপ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে পদত্যাগ করেন। তার পরেই আসামিপক্ষ ৫ আসামির বিচার পুনরায় শুরু (রিট্রায়াল) করার জন্য আবেদন করতে থাকেন। বৃহস্পতিবার ৪টি (রিট্রায়াল) পুনরায় বিচার শুরু করার আবেদন খারিজ হয়েছে দুই ট্রাইব্যুনালে। রবিবার আরেকটি আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.