উদ্বোধনের পরও গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ- দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা

উদ্বোধনের পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প এলাকায় দিনভর ভিড় করে কৌতূহলী নগরবাসী। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর এলাকাটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত গাড়ির প্রবেশাধিকার ছিল সীমিত।
টিভিতে প্রকল্প এলাকার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখে অনেকেই সকাল থেকে ভিড় জমান হাতিরঝিল এলাকায়। কেউ কেউ আসেন সপরিবারে। বিকেলের আগ পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি খুব কম থাকায় ছোট ছোট শিশুরা দল বেঁধে রাস্তার ওপর খেলায় মেতে ওঠে। শিশুদের খেলতে দিয়ে লেকের তীর বা রাস্তার ধারের বেঞ্চগুলোতে বসে নিশ্চিন্ত মনে রোদ পোহাতে দেখা গেছে অনেক অভিভাবককে।
উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন মো. শাহাবুদ্দিন। বাসে করে বাড্ডায় নেমে লিংক রোডের ভেতর দিয়ে রিকশা নিয়ে প্রকল্পে আসেন তিনি। রিকশা ঢুকতে না দেওয়ায় হেঁটে ভেতরে ঢুকতে হয়। এ ছাড়া পুরো সময়টা আনন্দে কাটিয়েছেন বলে জানালেন তাঁর স্ত্রী। তাঁদের দুই মেয়ে হাত ধরাধরি করে ঘুরছিল মহানন্দে।
মহানগর আবাসিকের প্রবীণ বাসিন্দা ফাতেমা বেগম ঘুরতে এসেছেন নাতিকে সঙ্গে নিয়ে। লাঠি ঠুকে ঠুকে তিনিও বেশ খোশমেজাজে বেড়াচ্ছিলেন।
তবে ঘুরতে আসা লোকজনের ফেলা বিভিন্ন ধরনের আবর্জনায় সেতু এলাকা নোংরা হয়ে পড়ে বিকেলের আগেই। কর্তব্যরত দুই সেনাসদস্য রামপুরা পয়েন্টে সেতুতে দাঁড়িয়ে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা খাবারের খালি মোড়ক বা কোমল পানীয়র বোতলের মতো আবর্জনা লেকের পানিসহ যেখানে-সেখানে ফেলতে নিষেধ করেন।
প্রকল্পের রাস্তাগুলোয় সিগন্যাল বাতি, বিভিন্ন সাইনসহ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের আনুষঙ্গিক বেশ কিছু কাজ এখনো শেষ হয়নি। দৃশ্যত এ কারণেই প্রকল্প এলাকায় বিকেলের আগ পর্যন্ত গাড়ি প্রবেশ কড়াভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। বুধবার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর থেকেই হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের প্রবেশপথগুলো বাঁশ দিয়ে আটকানো ছিল। এফডিসির গেটের কাছে টঙ্গী ডাইভারশন সড়কের দিকের প্রবেশমুখ, গুলশান শ্যুটিং ক্লাবের পয়েন্ট এবং রামপুরা থেকে প্রবেশপথে ট্রাফিক পুলিশ ও সেনাসদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোনো কোনো স্থানে ‘প্রবেশ নিষেধ’ সাইনবোর্ডও লাগানো ছিল।
দুপুর আড়াইটায় টঙ্গী ডাইভারশন সড়কের প্রবেশমুখে গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। উদ্বোধনের পরও রাস্তা বন্ধ কেন—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখন গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে অন্য কোনো দিক থেকে আসা গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেলে মাঝে মাঝে প্রবেশপথ খুলে কারওয়ান বাজারের দিকে বেরিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে।
দিনভর গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল স্বীকার করে প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসাইন দাবি করেন, বেলা তিনটা থেকে হাতিরঝিলের রাস্তায় পুরোদমে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনীর প্রকল্প ক্যাম্পে বেলা তিনটায় মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব জোনের উপকমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্পের ভেতরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়। এখন থেকে ট্রাফিক পুলিশই প্রকল্পের ভেতরের গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে। পুরো প্রকল্পে রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ বলেও তিনি জানান।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। পুরোপুরি দেশীয় পরামর্শকদের তৈরি করা নকশা ও তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.