ছাত্রলীগ নেতারা এখন কী বলবেন?- ছাত্রাবাসে মাস্তানি

ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নিরীহ যুবক বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনা নিয়ে যখন সারা দেশ তোলপাড়, তখনই রাজশাহী কলেজে ঘটেছে অভিনব এক ঘটনা। রাজশাহী নগর ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগ ছাত্রাবাসের সব শিক্ষার্থীর ওপর এই বলে সমন জারি করে যে বুধবার আহূত মিছিল ও সমাবেশে সবাইকে হাজির থাকতে হবে।
ছাত্রাবাসের বাসিন্দারা প্রায় সবাই সে মিছিলে যোগ দিলেও সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তৃতা না শুনে অনেকে ছাত্রাবাসে ফিরে আসেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এটিকে মহা বেয়াদবি হিসেবে গণ্য করেন এবং সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসে ঢুকে ক্রিকেটের স্টাম্প নিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এতে দুই ছাত্রের হাত ভেঙে গেছে এবং জখম হন ক্যানটিনের এক কর্মী ও এক অতিথি।
এই ঘটনা কিসের আলামত? কোনো ছাত্রসংগঠন কি কাউকে মিছিলে যেতে বা ছাত্রনেতাদের বক্তৃতা শুনতে বাধ্য করতে পারে? এর মাধ্যমে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি, তাঁরা রীতিমতো ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। মিছিলে যাওয়া না-যাওয়া বা বক্তৃতা শোনা না-শোনার স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের আছে। ছাত্রদের এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করেই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষান্ত হননি, তাঁরা ছাত্রাবাসের বাসিন্দাদের ওপরও চড়াও হয়েছেন। আহত দুই ছাত্র চিকিৎসার জন্য যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের পাহারাও দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। এই ঔদ্ধত্য তাঁরা কোথায় পেলেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেন নিশ্চুপ। যাঁরা আইন ভঙ্গ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই।
বিশ্বজিৎ দাস হত্যার সঙ্গে জড়িতরা সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত বলে দাবি করেছিলেন ছাত্রলীগ নেতৃত্ব। কিন্তু রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে ক্রিকেটের স্টাম্প থেরাপিওয়ালাদের সম্পর্কে কী বলবেন তাঁরা? সেই ঘটনাও কি ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী বা বহিষ্কৃতরা ঘটিয়েছেন? তাঁরা যদি ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত বা অনুপ্রবেশকারী হবেন, তাহলে কেন নগর ছাত্রলীগের সম্মেলন সফল করতে এমন জবরদস্তি করবেন? যে ছাত্রসংগঠনটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত বলে দাবি করে, সেই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিজেদের আর কত নিচে নামাবেন? আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠন চললে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার আকর্ষণেই সেই সংগঠনে যেতেন এবং নেতাদের বক্তৃতাও শুনতেন। সংগঠন দেউলিয়া হয়েছে বলেই তাঁদের মিছিলে ও সমাবেশে নিতে জবরদস্তি করতে হয়েছে। ছাত্রলীগের এই শ্রেণীর নেতা-কর্মী কেবল ছাত্ররাজনীতিরই ক্ষতি করছেন না, যে সংগঠনের নাম তাঁরা ব্যবহার করছেন, সেই সংগঠনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। ছাত্রলীগের নেতারা কী বলবেন?
কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে। আশা করি, কমিটি দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। যে শিক্ষার্থীরা বিনা অপরাধে সতীর্থ শিক্ষার্থীদের হাত ভেঙে দিতে পারেন, তাঁদের সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার অধিকার থাকা উচিত নয়। কেননা, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

No comments

Powered by Blogger.