শুধু প্রকাশকদের নিয়েই এবার একুশে বইমেলা- বাংলা একাডেমীর গোলটেবিলে সিদ্ধান্ত

 শুধুই প্রকাশকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। দীর্ঘদিন ধরে কেবলমাত্র প্রকৃত প্রকাশকদের নিয়ে বইমেলা আয়োজনের আকাক্সক্ষাটি এবার পূরণ হচ্ছে। প্রকাশকদের বাইরে এবারের বইমেলায় কোন বেসরকারী সংস্থা, সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না।
সেই সঙ্গে মানসম্পন্ন প্রকাশক নির্বাচনের জন্য দেশের বিশিষ্ট লেখকদের সমন্বয়ে চারটি বাছাই উপকমিটি গঠন করা হবে। মেলার জন্য যোগ্য প্রকাশকদের নির্বাচন করবে এই কমিটি। এছাড়াও এবারের মেলা শুধু বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হবে। রাস্তায় কোন স্টল থাকবে না। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে মৌলবাদী সংগঠনগুলোর অপতৎপরতাকে বিবেচনায় রেখে মেলার পরিধি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে একাডেমী কর্তৃপক্ষ। তবে মেলায় আগতদের সুবিধার্থে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে। বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে এ রাস্তার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে দর্শনার্থী ও পাঠকদের যাতায়াত নির্বিঘœ করার চেষ্টা করবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমী আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রাথমিকভাবে লেখক, প্রকাশক ও একাডেমী কর্তৃপক্ষ এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, কবি বেলাল চৌধুরী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক রফিক আজাদ, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কবি মুহম্মদ সামাদ, মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব শাহিদু খাতুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ইউপিএলের প্রধান নির্বাহী মহিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন, ঢাবি সিন্ডিকেট সদস্য বাহালুল মজনুন চুন্নু, পুস্তক প্রকাশক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সহ-সভাপতি ওসমান গনি, নির্বাহী পরিচালক ফরিদ আহমেদ, অবসর প্রকাশনার আলমগীর রহমান, মাওলা ব্রাদার্সের প্রধান নির্বাহী আহমেদ মাহমুদুর রহমান, অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, অন্বেশা প্রকাশনের শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।
গত বছর গ্রন্থমেলার সময় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা হবে শুধুই প্রকাশকদের নিয়ে। সে ঘোষণা বাস্তবায়নেরই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে।
শামসুজ্জামান খান বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা ২৩ সদস্যবিশিষ্ট মেলা পরিচালনা কমিটি গঠন করেছি। সে কমিটিই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মেলা রাস্তায় করা যাবে না। কারণ, গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নির্বাচনের বছর হওয়ার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মাথায় রেখে এটা করা সম্ভব না। একইভাবে পার্শ¦বর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও মেলা নেয়া যাচ্ছে না। সেজন্যই শুধুই প্রকাশকদের নিয়ে মেলা হবে এবং তা একাডেমী প্রাঙ্গণের ভেতরেই থাকবে।
একাডেমীর প্রাঙ্গণেই মেলা হওয়া উচিত বলে মত দিয়ে আহমদ রফিক বলেন, এ মেলা লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের মেলা। সেজন্যই সংগঠন ও বেসরকারী সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দিয়ে ভারাক্রান্ত করা ঠিক হবে না। তিনি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের প্রভাব খাটিয়ে স্টল বরাদ্দ না নেয়ার আহ্বান জানান। এতে মেলার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলেও তিনি জানান।
সেলিনা হোসেন বলেন, একুশে বইমেলা একাডেমীতেই হতে হবেÑএটা আমার দাবি। যদি পাঁচজন প্রকাশককে নিয়েও করতে হয়, তাহলেও এখানেই হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন আর কোন বাধা নেই। শুধু রাজনৈতিক চাপ ও ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপ কমাতে হবে। এসব চাপ সামলাতে মহাপরিচালককে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। যদিও এসব কাজ একাডেমীর নয়, তারপরও বাধ্য হয়েই করতে হয়। তাই একাডেমীর পাশাপাশি ডোরেমন বই বিক্রি বন্ধ, পাইরেট বই নিয়ন্ত্রণ, অযোগ্য প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ না দেয়া এসব দায়িত্ব প্রকাশকদের সমানভাবে পালন করতে হবে। তবে তিনি মানসম্মত বই প্রকাশ করা তরুণ প্রকাশকদের অধিক স্টল বরাদ্দের পক্ষে মত দেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ মেলা কি বাণিজ্যিক মেলা হবে না কি প্রকাশনার উৎকর্ষ ও বাংলা সাহিত্যের মান প্রদর্শনের মেলা হবে, তা ভাবার সময় এসেছে।
আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, ভাল বই যারা প্রকাশ করবে, তাদের স্টল দেয়া হবে। পাইরেট বই যাতে বিক্রি না হয়, সে লক্ষ্যে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব।
ওসমান গনি বলেন, প্রতিবছরই ভুঁইফোড় প্রকাশকরা মেলায় ঢুকে পরিবেশ নষ্ট করে। এবারে তা না হওয়ায় একটি সুন্দর গোছানো মেলা হবে বলে আশা করি।
ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রকাশকরা চান গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমীতেই হোক। তবে রাস্তায় যাতে অবৈধ বইয়ের স্টল না বসে এটা একাডেমীকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ঢাবি প্রক্টর আমজাদ হোসেন বলেন, মেলার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও সুষ্ঠু রাখতে রাস্তায় স্টল না বসা এবং ছাত্র সংগঠনগুলো যাতে মেলা কর্তৃপক্ষকে কোন উৎপাত না করে সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করব।

No comments

Powered by Blogger.