নাফিস-মমিনুল বনাম সোহাগ-রাজ্জাক

একদিকে আবদুর রাজ্জাক, অন্যদিকে সোহাগ গাজী। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাঁহাতি স্পিন আর অফ স্পিনের লড়াই জমে উঠল বেশ। রাজ্জাককে ৫ উইকেট পাওয়া থেকে ‘বঞ্চিত’ করে সে লড়াইয়ে ৬ উইকেট নিয়ে জয়ী সোহাগ।
তবে দিন শেষে লড়াইয়ের ভেতরের লড়াইয়ের কথা ভুলে দুজনই খুশি। তাঁদের মায়াবী স্পিনে বিভ্রান্ত হয়েই যে প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রান করেও ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে নেওয়া গেছে ১৬ রানের লিড! দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১২৯ রান করে কাল দ্বিতীয় দিন শেষে আরও এগিয়ে গেছে প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল। দক্ষিণে বল হাতে যেমন ছিলেন সোহাগ-রাজ্জাক, পূর্বাঞ্চলের হয়ে ব্যাট হাতে তেমনি নাফিস ইকবাল-মমিনুল হক। শাহরিয়ার নাফীসকে প্রথম দিনেই হারিয়ে সকালে রাজিন সালেহর সঙ্গে উইকেটে গিয়ে নাফিস ইনিংসের লাগাম ধরে রাখলেন নিজের হাতে। সেটা যে কতটা, ৬৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রাজিনের অবদান (৭) দেখলেই বোঝা যাচ্ছে তা। দলের ১৫৭ রানে সোহাগের বলে মিড অনে রাজ্জাকের ক্যাচ হওয়ার আগে ১১৬ বলে ১৫ বাউন্ডারিতে করেছেন ৮৩ রান—হারানো নাফিসকে যেন ফিরে পাওয়া গেল অনেক অনেক দিন পর।
আর গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে জাতীয় দলে অভিষিক্ত মমিনুল তো ফর্মে আছেনই। নাফিসের সঙ্গে ৬০ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি এবং অলকের সঙ্গে পরের জুটিতে আরও ৬১ রানে বেশ কিছু দর্শনীয় শট এল তাঁর ব্যাট থেকে। ১০ বাউন্ডারির সঙ্গে রাজ্জাককেই মেরেছেন দুই ছক্কা। নাফিসের মতো তাঁকেও আউট করেছেন সোহাগ, শর্ট কাভারে তাপস ঘোষের ক্যাচ।
৪ উইকেটে ২১৮ রান—প্রথম ইনিংসে দক্ষিণাঞ্চলের করা ২৪৮ রান যে তার পরও অনতিক্রম্য থেকে যাবে, কে ভেবেছিল তা! পুবের ব্যাটসম্যানরা করে দেখালেন সেটাই। মমিনুলের আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে মাত্র ১৪ রানে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন শেষ সাত ব্যাটসম্যান! রাজ্জাক-সোহাগ লড়াইটা জমে উঠল তখনই। পূর্বাঞ্চলের প্রথম ৬ উইকেটের মধ্যে সোহাগ নিয়েছিলেন ৪টি, রাজ্জাকের ছিল ২টি। কিন্তু তিন বলের মধ্যে অলক আর ইয়াসিন আরাফাতকে ফিরিয়ে দক্ষিণাঞ্চল অধিনায়ক সমতা নিয়ে আসেন দুই স্পিনারের লড়াইয়ে। কিন্তু শেষ ২টি উইকেটই তুলে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ‘জয়’টা সোহাগেরই। সোহাগ অবশ্য ‘লড়াই’ কথাটা শুনে হেসেই ফেললেন, ‘৪ বা ৫ উইকেট কে নিল, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুই দিক থেকেই মেডেন নিয়ে ওদের চাপের মধ্যে ফেলা। আমরা তাতে সফল হয়েছি এবং রাজ্জাক ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।’
লক্ষ্য পূরণে রাজ্জাক-সোহাগ মিলে টানা করেছেন ইনিংসের শেষ ৩৫.৩ ওভার। তাপস ঘোষ ইনিংসের ৩০তম ওভার করে যাওয়ার পর থেকে দুই প্রান্ত থেকে শুধুই তাঁরা দুজন। ৬৫.৩ ওভারের ইনিংসে রাজ্জাক আর সোহাগ করেছেন ৪৭.৩ ওভার।
দুই স্পিনারের এনে দেওয়া সাফল্যটা ব্যাটিংয়েও ধরে রাখতে পারছেন সৌম্য সরকার আর এনামুল হক (বিজয়)। ১৫ রানে ওপেনার ইমরুল কায়েস আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে ১১৪ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন দুজনই। সৌম্য অপরাজিত ৪৮ রানে। প্রথম ইনিংসের ৭৪-কে ছাড়িয়ে যেতে এনামুলের চাই আর মাত্র ১০ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল: ২৪৮ ও ৩৭ ওভারে ১২৯/১ (ইমরুল ১২, সৌম্য ৪৮*, এনামুল ৬৫*; তাপস বৈশ্য ১/১৬, জায়েদ ০/১২, ইয়াসিন ০/৪০, নাবিল ০/৩৮, অলক ০/১৯, ফয়সাল ০/২)। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৬৫.৩ ওভারে ২৩২ (শাহরিয়ার ১২, নাফিস ৮৩, রাজিন ৭, মমিনুল ৭৮, অলক ১৭, ফয়সাল ০, ধীমান ৭, তাপস বৈশ্য ৬, ইয়াসিন ০, নাবিল ০, জায়েদ ০*; রবিউল ০/৩১, কামরুল ০/২৮, সোহাগ ৬/৬৬, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাপস ঘোষ ০/১৭, তুষার ০/১০)।

No comments

Powered by Blogger.