পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ- রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে by মুবাশ্বের বুখারী

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল শুক্রবার বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। দেশটির ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী নিয়ে আদালতের এমন রায় বেশ বিরল। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক


জোটকে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ১৯৯৬ সালে আদালতে পিটিশন দাখিল করেছিলেন বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরী বলেছেন, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাকে অবশ্যই রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক সরকার গঠন বা তা অস্থিতিশীল করে তোলার পেছনে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ ওই ধরনের সংস্থাগুলোর নেই। এ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রতি তারা কোনোভাবেই এমন কোনো সমর্থন দিতে পারবে না, যার ভিত্তিতে ওই দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি লাভবান হয়।’
আদালতের এই রায় সেনাবাহিনীর অসীম ক্ষমতা সত্যিকার অর্থে খর্ব হবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। তবে এতে করে সুপ্রিম কোর্ট এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব আরও চাঙা হতে পারে। পাকিস্তানের ৬৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে শাসন করেছে সেনাবাহিনী, তা সরাসরি অভ্যুত্থান বা পেছন থেকে—যেভাবেই হোক। পাকিস্তানে বিচার বিভাগ এবং মার্কিন-সমর্থিত সরকারের মধ্যে চলমান এই দীর্ঘ দ্বন্দ্বে দেশে অস্থিতিশীলতা বেড়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, আশির দশকের শেষের দিকে তারা একটি রাজনৈতিক শাখা চালু করে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আনার জন্য তাঁদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করে ওই শাখা।
সুপ্রিম কোর্টের গতকালের রায়ে বলা হয়েছে, ‘আইএসআই বা এমআই (মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স) বা এ ধরনের সংস্থাগুলোর যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বা নির্বাচনী শাখা এক্ষুনি বন্ধ করতে হবে।’ কঠোর ভাষায় আরও বলা হয়, ‘ওই সব শাখার কর্মকাণ্ড পাকিস্তান, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য দুর্নাম বয়ে নিয়ে এসেছে।’
সেনাবাহিনী আদালতের এই রায় মানছে কি না, তা কীভাবে নিশ্চিত করার কথা সুপ্রিম কোর্ট ভাবছেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে এ ক্ষেত্রে সংবিধানের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আদালত।
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। বিশ্বের অন্যতম বড় এই সেনাবাহিনীর আর্থিক ক্ষমতাও অনেক। আর তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের ভেতরের আরেক রাষ্ট্র। ধারণা করা হয়, রাজনীতিবিদদের ওপর আইএসআইয়ের প্রভাব ব্যাপক। আর এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিকঠাক রাখার জন্য প্রত্যেক সরকার এতটাই ব্যস্ত থাকে যে দেশের বিদ্যুৎ ও শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও এবং দারিদ্র্য বাড়লেও সেদিকে নজর দেওয়ার সময় তাদের থাকে না। রয়টার্স থেকে।

No comments

Powered by Blogger.