অন্য রকম ঈদ- মায়াবী

যশোর থেকে বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। সময়টা কোরবানি ঈদের কিছুদিন আগে। কামারখালী মধুমতী নদীর ওপরের ব্রিজটা পার হতেই চোখে পড়ল দুটি ট্রাক। গরু ভরে ট্রাক যাচ্ছে। গন্তব্য নিশ্চয়ই রাজধানী ঢাকা। গরুর ট্রাক দুটি কখনো আমাদের বাসের আগে কখনো পেছন পেছন যাচ্ছিল।


আবার কখনো বা একেবারে পাশাপাশি। এত কাছে দিয়ে যাচ্ছিল যে আমি ইচ্ছা করলেই বাসের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে গরুগুলো ছুঁতে পারি। তাকিয়ে দেখছিলাম, কোনো কোনো গরু বেশ ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী, অর্থাৎ ‘তাগড়া’ আবার কোনোটা খুবই শীর্ণ দেহের রোগা পটকা। কিন্তু ওদের সবার ঘনকালো ডাগর ডাগর চোখের চাহনি ছিল খুবই করুণ। আমি যেন ওদের চোখের ভাষা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছিলাম। কী মায়াভরা চোখ ওদের। হরিণের চোখের মতো পটোলচেরা চোখ না হলেও সেদিনই প্রথম মনে হলো গরুর চোখ কিন্তু কম সুন্দর নয়। ভাবছি, একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কীভাবে তারা যাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গরুর হাটে। আমি কত আরামে যাচ্ছি। আর গরুগুলো কত কষ্ট করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ৩০ বছর আগে আমার মামাবাড়ি পাঁচ কাহুনিয়াতে (সিমাখালী) অনেক গরু ছিল। সেসব গরুর ছিল ভিন্ন ভিন্ন নাম। কালা মিঞা, ধলা মিঞা, টোনা, সুন্দরী, পার্বতী, ধবলী, কাবলি ইত্যাদি। রাখালকে দেখতাম, যে নামে যে গরুকে ডাকত, সেই গরু হাম্বা করে সাড়া দিত। আচ্ছা, এই গরুগুলোর কি কোনো নাম আছে? ওদের মালিক গৃহস্থ কি নামে ডাকত ওদের? গরুগুলোকে ব্যাপারির কাছে বিক্রির সময় কী গৃহস্থ-বধূর মন খারাপ ছিল।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে আমাদের বাসটি দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে পৌঁছাল, ঘাটে যে লম্বা জ্যাম কতক্ষণে ঢাকায় পৌঁছাব, ওপরওয়ালা জানেন। গরুর ট্রাক দুটি আর দেখছি না, হয়তো পেছনে লাইনে আছে।
আমি তো সঙ্গে করে আনা খাবার গাড়িতে মজা করে খেলাম। কিন্তু গরুগুলো কি কিছু খেয়েছে? গরুগুলোর করুণ মুখ মন থেকে সরছিল না কিছুতেই।
নূরজাহান আহমেদ
ষষ্ঠীতলা, যশোর।

No comments

Powered by Blogger.