নাফিসের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে দূতাবাস

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে আটক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী নাফিসের বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে দূতাবাস কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মন্ত্রী এ তথ্য জানান। বিদেশী যুদ্ধ বন্ধুদের সম্মাননা জানানোর আয়োজন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে দুনিয়া জুড়ে তোলপাড় হওয়া বাংলাদেশী নাফিসের বিষয়ে সাংবাদিকরা সরকারের অবস্থান জানতে চান। জবাবে দীপুমনি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর, এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। এ নিয়ে আমি কোন অনুমান করতে চাই না। বাংলাদেশ দূতাবাস ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মধ্যে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় (ওয়াশিংটন সময় দুপুর ১২টা) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ঘটনাটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুনির্দিষ্ট  কিছু জানানো হবে আশা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নাফিসের নাগরিকত্বের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু এরই মধ্যে আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিনা সে বিষয়টি অফিসিয়ালি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা এখনও তার নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত নই। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে বৈঠক হলেই বিষষটি পরিষ্কার হবে। তার নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সে শুধু বাংলাদেশের নাগরিক হলে অবশ্যই তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে কনস্যুলেট এক্সেস (বন্দির সঙ্গে একজন কূটনীতিকের কথা বলার সুযোগ) চাইবে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার সম্পর্কে জেনে তাৎক্ষণিক দূতাবাস কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন বৈঠকেই ‘কনস্যুলেট এক্সেস’ এর চেয়ে চিঠি হস্তান্তর করবেন। কনস্যুলেট এক্সেস চাওয়া সংক্রান্ত সরকারের চিঠি প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। নাফিসের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে ঢাকায় তার পরিবারের সদস্যদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান দীপুমনি। এ সংক্রান্ত একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তার পরিবারকে ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। সরকার সব সময় দেশের বাইরে তার নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে। নাফিস নির্দোষ, তাকে ছাড়িয়ে আনতে সরকারের কাছে পরিবারের আর্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, এমন ঘটনা যে কোন পরিবারের জন্যই কষ্টের। আগের সব বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম হবে না। সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নাফিস ইস্যুতে গণমাধ্যমকে সর্বশেষ তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক মুহূর্তও দেরি করবে না সংবাদ সম্মেলনে এমন নিশ্চয়তা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, এ ব্যাপারে কোন কিছু জানার পরপরই গণমাধ্যমে জানাব। আমি কিংবা পররাষ্ট্র সচিব যদি সংবাদ সম্মেলনে সময় না পাই তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলন শেষে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসও সাংবাদিকদের একই আশ্বাস দেন। বলেন, আমরা রাষ্ট্রদূতকে (একরামুল কাদের) বলে রেখেছি, যাতে ওয়াশিংটন বৈঠক  শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে তিনি আমাদের বিস্তারিত জানান। আশা করি মধ্য রাতে গণমাধ্যমকে কিছু জানাতে পারবো।
এদিকে নাফিসের নাগরিকত্ব পরীক্ষা করে দেখবে বাংলাদেশ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির এমন বক্তব্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার পিতা কাজী আহসান উল্লাহ। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, তারা ইনভেস্টিগেশন করছে, সব কিছু করছে বাংলাদেশী হিসেবে। এখন তারা সন্দেহ করছে সে কি ডুয়েল সিটিজেন না বাংলাদেশী সিটিজেন। এটা তো জানারই কথা। সে গেছে স্টুডেন্ট ভিসায়। স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। সে বাংলাদেশী নাগরিক। তার ভোটার আইডি কার্ড আছে দেশে। পুলিশ ঘুরে গেছে। সবকিছু দেখেছে। সে কোথায় লেখাপড়া করেছে, সে সব খোঁজ-খবর নিয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক বলেই সরকারি সংস্থার লোকজন এসব করছে। ফলে কাজী আহসানুল্লাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তিনি সংবাদ মাধ্যম থেকে খোঁজ-খবর পাচ্ছেন। তিনি ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়ে বলেন, এসব বলে সরকার দায়িত্ব এড়াতে চাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.