বাকৃবিতে ছাত্রীকে ঘুষি-তদন্ত শেষ না করেই প্রক্টরের পক্ষে সাফাই কমিটিপ্রধানের by নিয়ামুল কবীর সজল

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী একজন ছাত্রীকে প্রক্টরের ঘুষি মারার বিষয়টি সত্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান। তিনি এই মন্তব্য করেছেন তদন্তের তিন কার্যদিবসের প্রথম দিনেই, অর্থাৎ তদন্ত শেষ না করেই।


গত বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে (সময় টিভি) দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রক্টরের পক্ষে তদন্ত কমিটির প্রধান এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি বৃহস্পতিবার বিকেলেই প্রচারিত হয়।
তদন্তের শুরুতেই কমিটির প্রধানের অভিযুক্তের পক্ষে সাফাই গাওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- এ কমিটি আদৌ প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে পারবে কি না। জেলা মহিলা পরিষদ বলেছে, কমিটি যদি নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দায়দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি নিয়ে আন্দোলন চলার সময় গত ৯ অক্টোবর সংঘর্ষের ভিডিওচিত্র কালের কণ্ঠের হস্তগত হয়। ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, প্রক্টর ড. এম এ সালাম একজন ছাত্রীকে ঘুষি মারছেন। ছবিটি কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি তদন্তে সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহমান সরকারকে। অন্য দুজন সদস্য হলেন ড. মো. আলমগীর হোসেন ও ড. মনোরঞ্জন দাস। বুধবার রাতে গঠিত এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তদন্তের প্রথম কার্যদিবস অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালেই কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবদুর রহমান বলেন, 'একটি ছবি নানাভাবেই বিশ্লেষণ করা যায়। কিন্তু এ রকম কোনো ঘটনাই এখানে ঘটেনি। কোনো ছাত্রীকে ঘুষি মারবেন একজন শিক্ষক, এটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এটি হয়নি, ওই রকম কোনো ঘটনা ওখানে ঘটেনি। কোনো শিক্ষক কোনো ছাত্রছাত্রীর গায়ে হাত ওঠাবেন এটি আমি বিশ্বাস করি না। এটি হতে পারে না। এটি হয়নি বলে তাঁরাও আমাকে বলেছেন।'
বৃহস্পতিবার রাতেই অধ্যাপক রহমান সরকারের সঙ্গে এই প্রতিবেদক সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা স্বীকার করেন অধ্যাপক রহমান।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান বলেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হয়তো প্রতিবেদন দিতে পারবেন।
বহুল আলোচিত এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধানের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে জেলা মহিলা পরিষদ। মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরা বেগম অনু বলেন, 'কোনটা ঘুষি, কোনটা মারামারি ফেরানো, কোনটা মারামারি থামানো, এটি বোঝার মতো বুদ্ধি এ দেশের একজন সাধারণ মানুষেরও আছে। তদন্ত কমিটি যদি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে এর দায়দায়িত্ব পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।' তিনি বলেন, 'আমরা আশা করি একজন বিতর্কিত শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অন্য শিক্ষকরা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের সম্মান নষ্ট করবেন না।'

No comments

Powered by Blogger.