দৌলতদিয়ায় আড়াই কিমিজুড়ে বাস-ট্রাকের তিন সারি, দুর্ভোগ

আড়াই কিলোমিটার সড়কজুড়ে গাড়ির তিনটি সারি। দুটি সারি ট্রাকের; অপরটি যাত্রীবাহী বাসের। সামনের দিকে থাকা ছয় শতাধিক গাড়ি ঘাটে পৌঁছেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে ও সন্ধ্যায়। এখনো ফেরির জন্য অপেক্ষা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ চিত্র রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটের।


অপর প্রান্তে পাটুরিয়া ঘাটের চিত্রও একই। উভয় ঘাটেই গতকাল যাত্রীসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেকে লঞ্চে করে নদী পাড়ি দিয়ে ঘাটে এসে পরিবহন না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়েছে। কেউ কেউ উপায়ান্তর না দেখে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ট্রাকে চেপে বসেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাওয়া-কাওরাকান্দি ঘাট দিয়ে ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে পরিবহনের বাড়তি চাপ পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বিআইডব্লিউটিসি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে ও গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটারজুড়ে শুধু পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য ট্রাকেরই দুটি সারি। সমদূরত্ব পর্যন্ত আরেকটি সারি যাত্রীবাহী বাসের। নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা এসব যানবাহনের মধ্যে সামনের দিকে থাকা ৫০০ ট্রাক এবং শতাধিক বাস বৃহস্পতিবার বিকেলে ও সন্ধ্যার পরে আসা।
যশোরের বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী পণ্যবোঝাই কাভার্ড ভ্যানের (ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৩৪৮৬) চালক আবদুল হাকিম গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জানান, তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দৌলতদিয়া ঘাটে এসে যানজটে আটকা পড়েন। রাতে স্থানীয় পরিচিত এক দালালের মাধ্যমে এক হাজার ৬০ টাকার ভাড়ার সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা দিয়ে রসিদ কেটে সারিতে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি ফেরির অপেক্ষায়।
ঢাকায় একটি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন মাগুরার শ্রীপুরের রাকিবুল হক। তিনি পরিবহনে করে সকালে ঘাটে পৌঁছে দেখেন গাড়ির লম্বা সারি। দুপুর ১২টার পরও তাঁদের পরিবহনটি ছিল ফেরিঘাট থেকে অনেক দূরে। এভাবে দুর্ভোগের শিকার হয়ে তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দৌলতদিয়া টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, পাটুরিয়া ঘাট থেকে নদী পাড়ি দিয়ে আসা প্রায় অর্ধশত যাত্রী পরিবহন না পেয়ে রোদের মধ্যে বসে আছেন। এ সময় একটি খালি ট্রাকের (যশোর-ড-১১-০৭৫৮) চালক গাড়ি থামিয়ে ও স্থানীয় কয়েকজন লোক ‘মাগুরা, যশোর’ বলে পুলিশের সামনেই যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। রোদের মধ্যে বসে থাকা অনেক নারী-পুরুষ উপায় না দেখে ওই ট্রাকেই কষ্ট করে উঠে পড়লেন।
ট্রাকে ভ্রমণ করা অবৈধ হলেও প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে এভাবে যাত্রী নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আবদুল মালেক বলেন, ঈদ সামনে। যাত্রীরা ঠিকমতো পরিবহন পাচ্ছে না, তাই বিপদে পড়েই ট্রাকে রওনা দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘জানি এভাবে ভ্রমণ করা অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যাত্রীরা বিপদে পড়ে ঝুঁকি নিয়ে রওনা করলে আমরা ঠেকাব কীভাবে?’
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ঘাটে ফেরির সংখ্যা কম। তার ওপর কয়েক দিন ধরে মাওয়া ঘাটে ট্রাক পারাপার বন্ধ রয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ ট্রাকই এখন এই ঘাট হয়ে নদী পার হচ্ছে। এতে চাপ পড়ছে দৌলতদিয়া ঘাটে। শনিবার ঘাটে আরেকটি ফেরি যোগ হওয়ার কথা। তবে ঈদের আগেই ঘাটে ফেরি আরও না বাড়ালে পারাপারে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে হবে বলে তিনি আশঙ্কা করেন।
অপর প্রান্তে পাটুরিয়া ঘাটেও গতকাল শত শত ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস আটকা পড়ে। পাটুরিয়ায় বিআইডব্লিউটিসি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আশরাফ উল্লাহ খান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, ওই সময় ঘাটে কমপক্ষে ৪০০ বাস-ট্রাক ফেরি না পেয়ে আটকে ছিল।
তবে যাত্রী ও পরিবহনগুলোর কর্মীদের মতে, আটকে পড়া যানবাহনের সংখ্যা আরও বেশি হবে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নীলবর্ণ ও তাঁর বান্ধবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শাওলী এনাম। তাঁরা বেলা দুইটার দিকে পাটুরিয়া পৌঁছালেও ঘাটে গাড়ির লম্বা সারি থাকায় সোয়া পাঁচটার দিকে ফেরি পান বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.