দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন-ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বখাটেরা

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর নিকুঞ্জ-২ এলাকায় এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের এক সদস্যের পিস্তল খোয়া গেছে—এই খবর বেশ গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। উত্ত্যক্তকারীদের ভূমিকা ছিল সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তের মতো, তারা বস্তিবাসী কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী


বাহিনীর সদস্যদের ওপর, তাঁদের আহত করেছে এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তার পিস্তল ছিনিয়ে নিয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহভাজন ৩২ জনকে পুলিশ আটক করেছে, কিন্তু পিস্তলটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মূল উত্ত্যক্তকারী বখাটে তনুর সহযোগী রাজন রয়েছে, যে কিনা ওই এলাকার এক বস্তির মালিক একাব্বরের ছেলে। একাব্বরের বস্তি থেকেই কিছু লোক বখাটেদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোক বলে এলাকায় পরিচয়দানকারী একাব্বর এখন পলাতক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পরদিন ঘটনার শিকার মেয়েটির বাসায় গিয়ে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনিও বলেছেন, বখাটেরা দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। আর পুলিশের গুলশান অঞ্চলের উপকমিশনার হাফিজ আক্তার বলেছেন, বখাটেরা যে এত ভয়ংকর হয়ে উঠবে, তা পুলিশ প্রথমে বুঝতে পারেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের উপকমিশনারের এ রকম মন্তব্য তাত্পর্যপূর্ণ। বখাটেপনা ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা সম্পর্কে সমাজের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা মিল রয়েছে ওই সব মন্তব্যে। আমাদের সমাজে এখনো মনে করা হয়, বখাটেরা দুর্ধর্ষ বা ভয়ংকর নয়, তারা রাস্তাঘাটে মেয়েদের লক্ষ্য করে কিছু মন্তব্য ছুড়ে দেয় মাত্র; একটু বিরক্ত করে, যেটাকে বলা হয় উত্ত্যক্ত করা। এ আর কী এমন বড় অপরাধ। কিন্তু উত্ত্যক্ত যাদের করা হয়, সেই কিশোরী-তরুণীদের জন্য বিষয়টি যে সহ্যাতীত, এমনকি প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে তার দৃষ্টান্ত আমরা পেলাম অতি সাম্প্রতিক কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনায়।
আমাদের মনে হয়, নিকুঞ্জের ঘটনাটির ব্যাপারে একটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এমন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে যা দেখে দেশের সব বখাটে সংবিৎ ফিরে পায় এবং মেয়েদের উত্ত্যক্ত ও অপমান করার কথা ভাবতেও না পারে। মূল উত্ত্যক্তকারী বখাটে তনুকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। বস্তির যেসব লোক নিকুঞ্জের ওই বখাটেদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
ঘটনার শিকার মেয়েটি ও তাঁর বোনসহ পুরো পরিবারটিতে এখন ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ কাজ করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সশরীরে গিয়ে তাঁদের অভয় দিয়ে এসেছেন, সে অভয় যেন বাস্তব হয়।

No comments

Powered by Blogger.