জন্মের আগেই মৃত্যু-এমন ভুল কীভাবে হয়?

পৃথিবীতে আসেনি শিশুটি। এই পৃথিবীর ভুল-ভ্রান্তি, জ্বরা-ক্লান্তি, অবিচার-অনাচার থেকে অনেক দূরে নিরাপদেই ছিল। মায়ের গর্ভে ৫ মাস নিরাপদেই বেড়ে উঠছিল। আর কয়েকটি মাস পরেই হয়তো শেষ হতো অপেক্ষার পালা, মানুষ হিসেবে জন্ম নিত সে। কিন্তু ডাক্তারের ভুলে অকালে গর্ভ থেকে অস্ত্রোপচার করে বের করা হলো তাকে।


আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, মায়ের গর্ভে শিশুটি নড়াচড়া করছে। কিন্তু গাইনি ডাক্তার মত দেন যে, শিশুটি নড়াচড়া করছে না, তাকে অপারেশন করে বের করতে হবে। তার পরামর্শেই অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর দেখা যায় শিশুটি জীবিত। কিন্তু ৫ মাসের অপরিণত জীবিত শিশুকে বাঁচাবার উপায় নেই। ফলে পৃথিবীর আলোতে এসেও জীবনের আলো খুব বেশি সময় পেল না শিশুটি। ডাক্তারের ভুলের কারণেই সম্ভাবনাময় একটি জীবনের অবসান হলো। যে ডাক্তারের ভুলে এমন ঘটনা ঘটল তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে। প্রশ্ন হলো, প্রাইভেট ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ একজন ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট উপেক্ষা করে কেন একটি জীবিত শিশুকে মৃত বলে আখ্যা দিয়ে এমন অপারেশন পরিচালনা করবেন? আর অপারেশনের আগে কেন নিশ্চিত হয়ে নেবেন না যে মায়ের গর্ভে শিশুটির অবস্থা কী? দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অনেক ডাক্তারই অগ্রপশ্চাৎ বিচার না করেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অপ্রয়োজনীয়ভাবে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এতে রোগীদের পকেট খালি হলেও রোগমুক্তি ঘটে না। এমন প্রবণতা থেকেই হয়তো এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ এসেছে অথবা ডাক্তার গুরুতর বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন, যে কারণে রিপোর্ট ভালো করে দেখা বা নতুন রিপোর্টের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। যাই ঘটে থাকুক, এ ক্ষেত্রে আইনের গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মাঝে মধ্যেই ভুল চিকিৎসায় শিশু ও মায়ের মৃত্যুর খবর মেলে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভুল চিকিৎসা অহরহ হয়। এসব বিষয়ে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। আর এ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ করা ভিন্ন সচেতনতা সম্ভব কি-না তা ভাবার বিষয়। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিথিলতা এ ধরনের প্রবণতা যে বাড়াবে সন্দেহ নেই, এমন ঘটনা ডাক্তারদের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত করবে মারাত্মকভাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.