ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দ্রুত পরিশোধ করুন-ভবদহে জোয়ারাধার নির্মাণে বাধা

ভবদহ এলাকায় বিল কপালিয়া নামের একটি বিলে জোয়ারাধার নির্মাণের অংশ হিসেবে পেরিফেরাল বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করতে গিয়ে গত শনিবার স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ এবং অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর হামলার শিকার হয়েছেন।


ঘটনাটি অনভিপ্রেত; কারণ জোয়ারাধার নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ওই এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করা। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা ওই এলাকার কৃষক; বিল কপালিয়ায় তাঁদের জমি আছে। জোয়ারাধার নির্মাণ করা হলে সেখানে কোনো ফসল হবে না। অর্থাৎ ওই সব জমির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁদের বাধাদানের কারণটি মূলত এই। কিন্তু সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড যে এ বিষয়ে সচেতন নয়, তা-ও বলা যায় না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমস্যা হলো, সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার আগেই ওই বিলে পেরিফেরাল বাঁধ নির্মাণ শুরু করতে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ভেবেছেন, ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সরকার তাঁদের জমিকে জোয়ারাধারে পরিণত করছে।
এখানে সমস্যাটি ব্যবস্থাপনার। এক হাজার ৮০০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মাত্র ১৫৩ জন। অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ প্রদানে ধীরগতির কারণে জোয়ারাধার নির্মাণের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর আপত্তি দূর করা যায়নি। তাঁরা এখন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। আর বিল কপালিয়ার প্রচুর খাসজমির অবৈধ দখলদার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সেখানে জোয়ারাধার নির্মাণের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব কৃষকদের উসকে দিচ্ছেন।
জোয়ারাধার নির্মাণ করা হলে বিল কপালিয়ায় ফসল ফলানো যাবে না বটে, কিন্তু এর বদৌলতে ওই এলাকার অবশিষ্ট ৫১টি বিলের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকবে, ফসল ফলবে, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দীর্ঘ জলাবদ্ধতার স্থায়ী অবসান ঘটবে। আর জোয়ারাধার নির্মাণকাজ শেষ না হলে অচিরেই জলাবদ্ধতা ফিরে আসবে। তাই, এখন সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দ্রুত পরিশোধ করা এবং তাঁদের মধ্যে এই সচেতনতা বাড়ানো যে বিল কপালিয়ার জোয়ারাধার পুরো ভবদহ অঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য হবে একটা আশীর্বাদ।

No comments

Powered by Blogger.