জিডি করার পর ব্যবসায়ী অপহৃত

রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মাহমুদুন্নবী নামের এক ব্যবসায়ী ও তাঁর গাড়ির চালক শহিদ মিয়াকে অপহরণ করা হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মাহমুদুন্নবী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার তিন ঘণ্টার মধ্যে চালকসহ অপহৃত হন।


অপহৃত মাহমুদুন্নবী ক্যাপরিকন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ওষুধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ক্যাপরিকনের বিপণন ব্যবস্থাপক এস এইচ কে লোহানী কালের কণ্ঠকে বলেন, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাতিজা মাসুম গতকাল বিকেলে কাকরাইল এলাকা থেকে চালক ও গাড়িসহ মাহমুদুন্নবীকে অপহরণ করেছে। এর আগে হত্যার হুমকি পেয়ে তিনি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেন। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার জন্য কাকরাইলের সাউথইস্ট ব্যাংকে আসেন। কাজ শেষে দুপুর ৩টার দিকে ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় পাঁচ সহযোগীসহ মাসুম তাঁর পথরোধ করে এবং জোর করে তাঁরই গাড়িতে উঠিয়ে শান্তিনগরের দিকে চলে যায়। এরপর থেকে মাহমুদুন্নবীসহ গাড়ির চালকের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে লোহানী বলেন 'মাহমুদুন্নবীকে অপহরণ করার সময় আমি তাঁর পাশেই ছিলাম। মাসুম ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে মাসুম আমাকে ধাক্কা দেয় এবং আমার কাছে থাকা একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে তার তিন সহযোগীসহ গাড়িতে ওঠে।'
মোহাম্মদপুর থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মাহমুদুন্নবী হত্যার হুমকি পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেন। জিডি করার তিন ঘণ্টার মধ্যে কাকরাইল এলাকা থেকে আসামিরা প্রাইভেট কার ও চালকসহ তাঁকে অপহরণ করে। এ ঘটনায় মাহমুদুন্নবীর ভাতিজা মাসুম জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁকে উদ্ধারে ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক টিম ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মাহমুদুন্নবীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম পুলিশকে জানান, ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে মাসুম গত সোমবার রাতে খিলজী রোডের বাসায় এসে হুমকি দিয়ে যায়। এ ঘটনা থানায় জানানোর পর মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ বাসায় আসে। কিন্তু এর আগেই মাসুম চলে যায়। এ ছাড়া গত তিন-চার দিন ধরেই মাহমুদুন্নবীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হুমকি পেয়ে গতকাল সকাল ১১টার দিকে মাহমুদুন্নবী মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করতে যান। ১২টার দিকে তিনি জিডি করে থানা থেকে বের হন। এরপর কাকরাইল এলাকায় এসে নিজের গাড়িতে ওঠার সময় মাসুম ও তার সহযোগীরা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
এদিকে অপহরণের কারণ সম্পর্কে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাসুমের চাচা শাহজাহান ছিলেন ক্যাপরিকন এন্টারপ্রাইজের অন্যতম অংশীদার। ২০০৮ সালে শাহজাহান মারা যান। শাহজাহানের কোনো সন্তান না থাকায় তিনি মারা যাওয়ার পর ব্যবসার অংশ তাঁর ভাইদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাতিজা মাসুম ব্যবসার একটি বড় অংশ অনৈতিকভাবে দাবি করে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলছে। মাসুমকে আইনের মাধ্যমে ব্যবসার অংশ বুঝে নেওয়ার জন্য মাহমুদুন্নবী বেশ কয়েকবার পরামর্শ দেন। কিন্তু মাসুম তা শোনেনি। ওই ঘটনার পর সকালে মোহাম্মদুপুর থানায় গিয়ে জিডি করেন মাহমুদুন্নবী। এদিকে অপহরণের পর গতকাল রাতে মাহমুদুন্নবীর স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন রমনা থানায় মামলা করেছেন।
রমনা থানার ওসি শাহ আলম বলেন, শাহজাহান ক্যাপরিকন এন্টারপ্রাইজের ২৫ শতাংশের মালিক ছিলেন। শাহজাহানের স্ত্রী-সন্তান না থাকায় মাসুম এই অংশীদারিত্ব দাবি করে আসছিল। মাসুমই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকেসহ অপহরণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। রাত ১২টা পর্যন্ত মাহমুদুন্নবীকে উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.