দ্রুত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা দরকার-পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যা

পাকিস্তানের বিরাট অঞ্চল বন্যায় বিপর্যস্ত। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে একে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় হিসেবে অভিহিত করেছে। এত বড় বিপর্যয় সামলানোর ক্ষমতা পাকিস্তানের একার নেই। জাতিসংঘ মহাসচিব সে কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানকে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।


উপমহাদেশের অন্যতম দেশ হিসেবে, সার্কের সদস্য পাকিস্তানের এই বিপর্যয়ে বাংলাদেশেরও সাধ্যমতো করণীয় রয়েছে।
অভূতপূর্ব এই বন্যায় পাকিস্তানের প্রায় দেড় কোটি মানুষ দুর্গত হয়ে পড়েছে, নিহত হয়েছে প্রায় এক হাজার ৬০০ জন। বিরাট অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো তছনছ হয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ খতিয়ান এখনো জানা না গেলেও এই বন্যার ভয়াবহতা ২০০৫ সালের ভূমিকম্প কিংবা ওই বছরেই দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ঘটা সুনামি কিংবা হাইতির ভূমিকম্পের থেকে অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। শস্যভান্ডার বলে পরিচিত পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশের ফসল নষ্ট হয়েছে, ভেঙে পড়েছে বিরাট অঞ্চলের পানি-বিদ্যুৎ-সড়ক অবকাঠামো। বন্যাক্রান্ত এলাকায় খাদ্য ও আশ্রয় চরম দুর্লভ হয়ে উঠেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় তিন লাখ সেনাসদস্যকে নামানো হলেও প্রচণ্ড বৃষ্টি ও দুর্গমতার জন্য তারাও বেশি কিছু করে উঠতে পারছে না। এ অবস্থায় ক্ষুধা, পানিবাহিত রোগ ও আনুষঙ্গিক কারণে অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বন্যা পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতিকে আরও কাবু করে ফেলেছে। ত্রাণ ও ভেঙে-পড়া অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে শত শত কোটি ডলার প্রয়োজন। অথচ এ পর্যন্ত সাহায্য এসেছে মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলার। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশটির বহু বছর লেগে যাবে। এ অবস্থায় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর উচিত, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
সবচেয়ে বিপর্যস্ত খাইবার পাখতুনখাওয়া, সোয়াত ও দক্ষিণ পাঞ্জাব আগে থেকেই গরিব ও জঙ্গি-কবলিত এলাকা। সময়মতো সাহায্য না পৌঁছালে সেই সব এলাকার মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে পড়বে। এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে ফেলতে পারে। পশ্চিমাদের নিজস্ব স্বার্থগত কারণেই এসব এলাকায় উদ্ধার ও পুনর্গঠন তৎপরতা চালানোয় সব রকম সাহায্য দেওয়া উচিত। পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন সফল করতে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও প্রয়োজন। এসব ব্যাপারে বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। আশা করি, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি অনুধাবন করে সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

No comments

Powered by Blogger.