বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন-চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা হ্রাস

চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতার সব কটি সূচকের অবনতির খবরটি উদ্বেগজনক, কেননা এটিই দেশের প্রধানতম আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই নির্ভরশীল এই বন্দরের ওপর। এ বন্দরের দক্ষতা হ্রাস পেলে দেশের অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমদানিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
প্রথম আলোয় বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিটি কনটেইনার জাহাজের অবস্থান-সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে পাঁচ দিন। গত তিন বছরের মধ্যে এ বন্দরে এটিই জাহাজের সর্বোচ্চ গড় অবস্থান-সময়। অবস্থান-সময় বৃদ্ধির ব্যাপারটি ঘটেছে ক্রমান্বয়ে, সাত মাস ধরে। বন্দরের উৎপাদনশীলতা কমেছে আট শতাংশ। জাহাজ থেকে আমদানিপণ্য খালাস করা, রপ্তানিপণ্য বোঝাই করা, বন্দর ত্যাগ করা ও বন্দরে ভেড়াসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা কমে গেলে বন্দর ব্যবহারের খরচ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। অর্থ ও সময় উভয় ব্যয় বেড়ে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়; চট্টগ্রাম বন্দর এখন তেমন সমস্যার কারণ হচ্ছে।
কিন্তু এই একই বন্দর, একই অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে দক্ষতার সূচকে এগিয়ে ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে বন্দরের দক্ষতাবিষয়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই সময়ের মধ্যে কী এমন ঘটল যে বন্দরের দক্ষতার সব কটি সূচক নিম্নমুখী হলো। প্রথমত, জেটি পরিচালনার সমস্যা। দরপত্রের মাধ্যমে জেটি পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আইনি জটিলতা সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মে রাত থেকে ১২টি জেটি বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হয়। তার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে ছয়টি জেটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া হয়েছে, বাকি রয়েছে আরও ছয়টি। দরপত্র-প্রক্রিয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ আছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হস্তক্ষেপের অভিযোগও এসেছে। যদিও ওই কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, তাঁরা হস্তক্ষেপ করছেন না, অবনতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছেন মাত্র। আমাদের মনে হয়, এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত: বিধিসম্মতভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে দরপত্রের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জেটির পরিচালনাকাজ দেবে, কোনো ব্যত্যয় চলবে না। বাকি সব জেটি অবিলম্বে স্বচ্ছ দরপত্র-প্রক্রিয়ায় বেসরকারি পরিচালনায় ছেড়ে দেওয়া হোক। তারপর থাকছে শ্রমিকদের অসন্তোষের নানা বিষয়, সেদিকেও আশু নজর দিতে হবে। যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতার দৃষ্টান্ত আছে, কীভাবে তা বাড়ানো যায় তাও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানেন। সুতরাং সমস্যা সমাধানের পন্থাও স্পষ্ট। স্বার্থান্বেষী কিছু ব্যক্তি ও মহলের প্রভাব, ক্ষমতাধরদের অন্যায্য হস্তক্ষেপ ইত্যাদি বন্ধ করে বন্দরের দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.