বিমানকে রাহুমুক্ত করতে হবে-মন্ত্রী বনাম সংসদীয় কমিটি

জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের খবরের শিরোনাম হওয়া নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, সংস্থাটির সুনামের চেয়ে দুর্নামের পাল্লাই ভারী হচ্ছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বারবার বিমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির শিকার হয়ে যাত্রী হারিয়েছে, লোকসান দিয়েছে,


এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়েছে। গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে সংসদীয় কমিটি বনাম মন্ত্রীর দ্বন্দ্বের খবরে বিমানের দুর্নীতির যে নতুন চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
গত বছর হজযাত্রী পরিবহনের সময় নাইজেরিয়ার কাবো এয়ারলাইনস থেকে একটি পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ ভাড়া করা হয়। অথচ সে সময় বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ ছিল। ওই অবস্থায় বড়জোর একটি উড়োজাহাজ ভাড়া করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভাড়া করা হয় তিনটি। এর মধ্যে কাবোর উড়োজাহাজটি হজফ্লাইট শেষে আরও ছয় মাস বেশি চালানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, উড়োজাহাজের ভাড়া বাবদ কাবোকে সাত মাসে প্রায় ৮১ কোটি টাকা দেওয়া হয় এবং এ থেকে ৪১ কোটি টাকার কমিশন তথা ঘুষ নিয়েছে বিমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মহল।
কাবো এয়ারলাইনসের গর্হিত আচরণের জন্য একে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য বিমান পরিচালনা পর্ষদে প্রস্তাবও উঠেছিল। তা ছাড়া ওই উড়োজাহাজটি ২০ বছরেরও বেশি পুরোনো হওয়ায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন-অযোগ্য ছিল। উপরন্তু উড়োজাহাজটির চালকদের লাইসেন্স নিয়ে সমস্যা থাকায় সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁদের একবার আটকও করেছিল। তার পরও বিশেষ বিবেচনায় একে চালানোর অনুমতি না দেওয়ায় বিমান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য বিমানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
সংসদীয় কমিটি স্পষ্টতই নাইজেরীয় কাবো এয়ারলাইনসের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে। অনিয়মকে জায়েজ করার জন্য কমিটির কিছু সদস্য কেন চাপাচাপি করলেন, তা উদ্ঘাটিত হওয়া দরকার।
সংসদীয় কমিটি শুধু কাবোর বিষয়েই আগ্রহী নয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জমিতে হোটেল করার জন্য একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার ব্যাপারেও মন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। মন্ত্রী অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া বিমানবন্দরসংলগ্ন ১৩০ একর জমি উদ্ধার করে সরকারকে দিতে চান, কিন্তু সংসদীয় কমিটি চায়, পুরোটা না হলেও অন্তত ২৫ একর জমি হোটেল ও গলফ ক্লাব করার জন্য ইজারাদারদের হাতেই থাকুক। এ বিষয়টিরও সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। আগের অনিয়মের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এ দুটি অনিয়ম প্রমাণ করে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতির রাহুগ্রাসে বিপন্ন। এদের হাত থেকে বিমানকে রক্ষা এবং সংস্থাটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.