অভিমত ভিন্নমত

আর কত সিনথিয়ার আত্মহনন! ১৩ আগস্ট প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি ছবি। এক উচ্ছল কিশোরী প্রতিবাদে দৃপ্ত এক মিছিলের সামনের সারিতে ব্যানার হাতে এগিয়ে চলেছে। ব্যানারে লেখা স্লোগান: ‘বখাটে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করুন’, ‘ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’।


মিছিলটি ছিল মাসখানেক আগের। প্রতিবাদে শামিল মেয়েটির নাম হাসনা রহমান সিনথিয়া।
কে জানত, প্রতিবাদী এই কিশোরী ওই মিছিলের মাসখানেক পরই বখাটে-সন্ত্রাসীর উপদ্রব থেকে স্থায়ী মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নেবে আত্মহননের পথ। হ্যাঁ, জাহাঙ্গীর নামের এক বখাটে-সন্ত্রাসীর অবিরাম উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে সিনথিয়াকে সে পথই বেছে নিতে হয়েছে ১১ আগস্ট। তারপর সে হয়েছে সংবাদ শিরোনাম। কী নির্মম পরিহাস!
সিনথিয়া, তুমি বাঁচতে চেয়েছিলে সুন্দর, নির্মল, নিরুপদ্রব পরিবেশে। এই অধিকার তোমার ছিল, যেমন প্রত্যেক নাগরিকেরই থাকার কথা। সেই চেষ্টা তুমি করেও ছিলে। শুধু একার জন্য নয়, সবার শান্তিপূর্ণ, নিরুপদ্রব, নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকারের পক্ষে তুমি মিছিলে নেমেছিলে, ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিলে মিছিলের একদম সামনের সারিতে। কিন্তু আমাদের সামন্তবাদী পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত এই সমাজ তোমার প্রতিবাদকে যথেষ্ট সমর্থন জোগায়নি; জনগণের বন্ধু ও সেবক নামে পরিচিত পুলিশ তোমার উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বখাটে-উত্ত্যক্তকারীদের প্রতি আইন প্রয়োগকারীদের নীরব দর্শকের মতো ভূমিকা; বখাটেপনার সমাধান করতে সমাজের হর্তাকর্তা মানুষদের তথাকথিত সালিস-বৈঠক, আপস-সমঝোতার চেষ্টা যেন নারীর নিরাপদ-নিরুপদ্রব চলাফেরা ও জীবনযাপনের অধিকারকে অস্বীকার করারই শামিল।
সিনথিয়া, তোমার আত্মহননের জন্য দায়ী আমরা সবাই। কিন্তু আমরা বোধ হয় বুঝতে পারি না, তোমার এই মর্মান্তিক, চূড়ান্ত প্রতিবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়ার প্রয়াস। কিন্তু আমাদের কি বিবেক বলে কিছু আছে? রাষ্ট্রের আইন, সরকারের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কি দেখতে পাচ্ছে তোমাদের আত্মহননের মিছিল? সমাজের হর্তাকর্তা-অভিভাবকেরা কি শুনতে পাচ্ছেন তোমাদের আত্মহননের মিছিলের বাণী?
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা নারী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নারী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী, কৃষিমন্ত্রী নারী—সরকারের উচ্চপর্যায়ে আছেন অনেক নারী-কর্মকর্তা, আছেন নারী-বিচারপতি, নারী-আইনজীবী। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা, নারীর অবমাননা, নিগ্রহ, নির্যাতনের প্রতি এই সমাজ কী করে এতটা নির্বিকার থাকতে পারে, তা ভেবে বিস্মিত হই। নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার এত অভাব কেন এই সমাজে!
আরও কতজন সিনথিয়া আত্মহননের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালে সেই প্রতিবাদের ধাক্কা লাগবে আইন প্রয়োগের সংবেদনহীন ব্যবস্থায়? আরও কতজন সিনথিয়া আত্মহত্যা করলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের মনে হবে যথেষ্ট হয়েছে, এবার এসব থামানো দরকার? আরও কতজন সিনথিয়াকে হারানোর পর আমরা দেখতে পাব একজন বখাটে-সন্ত্রাসীর আইনানুগ শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হলো?
কাজী আরিফ
উন্নয়নকর্মী, খটখটিয়া, সদর রংপুর।


সারা দেশে আড়াই লাখ কিশোরী বখাটেদের ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাবে সরোপটিমিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব ঢাকা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে (ইত্তেফাক ২৬.৬.১০)। তাহলে ইভ টিজিং নামের ব্যাধিটা যে মহামারির আকার নিতে পারে, তা অস্বীকার করা যায় না।
ইভ টিজিং নারী নির্যাতন দমন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও আইন প্রয়োগ করার প্রক্রিয়ায় সাক্ষী না পাওয়া, সাক্ষ্যদানে ভয়ভীতি, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, পুলিশের গড়িমসি ইত্যাদি কারণে মামলা দীর্ঘায়িত হয় বলে অপরাধী শাস্তি পায় না। অনেকে ইভ টিজিং দমনের জন্য নতুন আইন করার সুপারিশ করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হয়তো কিছু প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু উত্ত্যক্তকারীদের হাতেনাতে ধরা দুরূহ ব্যাপার। সাদা পোশাকধারী পুলিশের পক্ষে হয়তো কিছু উত্ত্যক্তকারীকে ধরে হাজতে পুরে রাখা সম্ভব, কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ায় অপরাধীরা আদালত থেকে ছাড়া পেয়ে যায়। সারা দেশে লাখ লাখ উত্ত্যক্তকারী; শুধু তাদের ধরার জন্যই সাদা পোশাকে কতজন পুলিশ প্রয়োজন হতে পারে, তাও ভাবনার বিষয়।
আমার মতে, প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগের প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষালয়ে প্রতি শ্রেণী থেকে দুজন করে অভিভাবক নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ কমিটি ইভ টিজিংয়ের রিপোর্ট স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাখিল করবে এবং সে অনুসারে প্রশাসন উত্ত্যক্তকারীকে ও তার অভিভাবককে তলব করে কৈফিয়ত চাইবে। আইন প্রয়োগে যতটা কাজ হবে উত্ত্যক্তকারীদের অভিভাবককে সম্পৃক্ত করলে হয়তো তার চেয়ে বেশি কাজ হবে। কারণ, অভিভাবকদের জন্য সন্তানের অপকর্ম লজ্জাকর বিষয় এবং সেটা প্রকাশ্যে প্রচার করলে সমাজে অভিভাবকের মর্যাদা থাকে না। তাই অভিভাবকেরা নিজ নিজ সন্তানকে শাসন, ভর্ৎসনা ও আদর দিয়ে ইভ টিজিং থেকে বিরত রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। তা ছাড়া আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
আলী ইদরিস
ফেলো অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।


আর কত সিনথিয়ার মৃত্যু হলে সরকারের ঘুম ভাঙবে, জানতে খুব ইচ্ছে করছে। আমরা কথায় কথায় দেশের উন্নয়নে নারীশিক্ষার গুরুত্বের কথা বলছি, অথচ তাদের ওই পথে পেতে রেখেছি ভয়ংকর সব কাঁটা। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বারৈখালী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সিনথিয়ার মৃত্যু যদি সরকারের টনক নড়াতে না পারে, তাহলে বিবেক বলে একটি জিনিস যে মানুষের থাকে, তা এখন কোথায়?
বখাটে জাহাঙ্গীরের উৎপাতে সিনথিয়ার মৃত্যুর আগে একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়েছে, শেষ বৈঠকে সরকারি প্রশাসনও উপস্থিত ছিল। যে মেয়েটি ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ মিছিলে সামনের সারিতে ছিল, তাকেই যদি এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়, তাহলে আর কোনো মেয়ে এসবের প্রতিবাদ করতে যাবে? এত বাধাবিপত্তির মাঝেও মেয়েরা এইচএসসি পরীক্ষায় যে সাফল্য দেখিয়েছে, তাতেই প্রমাণিত হয়, তারা সামান্য সুযোগ পেলে দেশের জন্য আরও অনেক অবদান রাখতে পারবে।
বখাটেরা দিনের পর দিন অসভ্যতা দেখিয়ে যাবে, আর আমাদের সমাজ একটার পর একটা নিষ্ফল সালিস বৈঠক করবে, আর সিনথিয়ার মতো মেয়েরা জাতির বিবেককে ধিক্কার দিতে আত্মহননের পথে পা বাড়াবে। এভাবে কি চলতে পারে? প্রশাসন বখাটেদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে কর্তব্য শেষ করে অপেক্ষায় থাকবে কখন আরেকজন সিনথিয়া প্রাণ দেবে। এভাবে কি চলতে পারে? না, পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না।
সরকারের কাছে অনুরোধ, মানুষ আর কোনো সিনথিয়ার মৃত্যুর খবর শুনতে চায় না, দেখতে চায় বখাটেদের ভয়ংকর সব শাস্তির খবর; যার মধ্য দিয়ে বখাটেপনা দূর হবে, মেয়েরা আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে না।
মো. হাবীব উল্লাহ
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।

বাংলাদেশ-বিদ্বেষীকে ‘লিভিং লিজেন্ড’ সম্মাননা!
ঢাকা ক্লাবের ৯৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে লিভিং লিজেন্ড অব দি ক্লাব সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ওবেইদ জাগীরদারের নামটি দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমি ঢাকা ক্লাবের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যে ওবেইদ জাগীরদারকে ঢাকা ক্লাব সম্মাননা দিয়েছে, তিনি তো বাংলাদেশকেই স্বীকার করেন না। ২০০১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, আমাদের বিজয় দিবসের ঠিক আগের দিন—‘আমাদের জাতীয় দিবস’ শিরোনামে এক কলামে তিনি পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্টকে আমাদের জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছিলেন।
তিনি লিখেছেন ‘সত্য ইতিহাস হলো এই যে, স্বাধীনতার কয়েক বছর পরই আমরা বুঝতে পারি, পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে। চাকরি, শিক্ষা, ব্যবসা, উন্নয়ন—সব দিক থেকে বাঙালিরা ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে। এই ছিল অধিকার প্রয়োগ ও ভাগাভাগির সমস্যা। একে পরাধীনতা বলব কোন যুক্তিতে? আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিই, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অধিকাংশ বিষয়ে আলাদা হয়ে যাব। যুক্ত পাকিস্তানে আমাদের উপস্থিতি থাকবে, তবে তা হবে খুবই সীমিত ক্ষেত্রে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনীর তরফ থেকে প্রবল বাধা আসে। এর ফলে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হয়, যা ছিল স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের ফসল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হঠকারিতায় এবং ভারতের উসকানির ফলে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এ অবস্থায় পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারতের কাছে তাদের পরাজয় ঘটে, ফলে বাংলাদেশ থেকেও তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিতে হয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি বাংলাদেশ বিদেশি সেনামুক্ত হয়েছিল? আমরা জানি, তা হয়নি। সুতরাং, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল, সেই বক্তব্য সঠিক নয়। তারা ১৬ ডিসেম্বর এ দেশ ত্যাগ করেনি। সুতরাং, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় দিবস হতে পারে না। আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছি ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। তাই ১৪ আগস্ট আমাদের স্বাধীনতা দিবস হওয়া উচিত।’ (‘আমাদের জাতীয় দিবস’, ওবেইদ জাগীরদার, দৈনিক ইনকিলাব, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০১)।
এই লেখার প্রতিটি বাক্যে লেখকের বাংলাদেশ-বিদ্বেষী চরিত্রটি ফুটে উঠেছে। এই পাকিস্তান-প্রেমিককে ঢাকা ক্লাব কী করে ‘লিভিং লিজেন্ড’ সম্মাননা দিতে পারল?
প্রশ্নটি আরও গুরুতর বিবেচনা করি এ কারণে যে, একই অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকারকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে ঢাকা ক্লাব।
সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সভাপতি হিসেবে এয়ার মার্শাল এ কে খন্দকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কয়েক বছর ধরেই নিরবচ্ছিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছেন।
সে ক্ষেত্রে ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে ওবেইদ জাগীরদারকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মহিউদ্দিন আহমদ
সাবেক সচিব ও কূটনীতিক, উত্তরা, ঢাকা।

ওবামা কি পারবেন?
টুইন টাওয়ারের ধ্বংসস্তূপ গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ নির্মাণে নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। রমজান মাসে হোয়াইট হাউসে এক নৈশভোজে তিনি এ মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় ঐক্যের কথা উল্লেখ করে সব ধর্মের অনুসারীদের স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে বলে দাবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ওবামার মতবিরোধীদের সংখ্যাই বেশি। অনেকে গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন। কারণ, নাইন ইলেভেনের ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদাকে দায়ী করা হয়। তাই ইসলাম ধর্মের প্রতি আমেরিকানদের এক ধরনের ভীতি কাজ করে, যা পুরোপুরি অমূলক। কিন্তু আমেরিকার অধিকাংশ রাজনীতিবিদই জনগণের এই আবেগকে মসজিদ নির্মাণের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
গত নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সারাহ পেলিন বলেছেন, গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ নির্মাণ করা হলে তা নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের মনে যে ক্ষত রয়েছে, তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তবে মসজিদ নির্মাণের যুক্তি হিসেবে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তুলে ধরেছেন এবং এটাই তাঁর মসজিদ নির্মাণের পক্ষে থাকার সবচেয়ে জোরালো যুক্তি। ওবামা বলেন, আল-কায়েদা ইসলাম নয়, তারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করেছে মাত্র। এটা অবশ্যই ঠিক। নাইন ইলেভেনের হামলার পেছনে ধর্ম হিসেবে ইসলামের কোনো দোষ নেই। অনেক নিরপরাধ মুসলিমও ওই হামলায় নিহত হয়েছে। অন্য সবার মতো তারাও সন্ত্রাসের নির্মম শিকার। তাই নাইন ইলেভেনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আবেগকে পুঁজি করে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেওয়াটা মোটেই উদার মনোভাবের পরিচয় বহন করে না। বরং গ্রাউন্ড জিরোতে মসজিদ নির্মিত হলে সেটাই হবে ইসলামকে ব্যবহার করে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের জন্য মোক্ষম জবাব। আর তা করতে পারলে ওবামা হয়তো তাঁর শান্তির জন্য পাওয়া নোবেল পুরস্কারেরও মর্যাদা রাখতে পারবেন।
ফাহিম ইবনে সারওয়ার, শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতা
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের সাক্ষাৎকারটি পড়লাম। সাক্ষাৎকারটির একপর্যায়ে বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফেরার প্রসঙ্গটি আসে। সময়োপযোগী প্রসঙ্গ। দেশজুড়ে এখন বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-বিতর্ক চলছে। যাঁরা বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের বিপরীতে এমন কথাও বলা হচ্ছে যে বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফেরা আর সম্ভব নয়। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা বা অসাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের পক্ষে আর বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় বাস্তব রাজনৈতিক কারণে।
বাহাত্তরের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। তখন কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড অনুমোদিত ছিল না। জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমোদন দেওয়া হয়; ধর্মের নামে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করে দিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেমেছিল, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, জিয়াউর রহমান শুধু সংবিধান সংশোধন করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেননি, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।
জেনারেল এরশাদ এসেও একই ধারায় এগিয়ে চললেন, ধর্মপ্রাণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের মন জয় করার মতলবে এই স্বৈরশাসক আরও বাড়তি একটা কাজ করলেন, সেটা হলো সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যুক্ত করা। ইসলামকে ভালোবেসে এরশাদ এই কাজটি করেননি, করেছিলেন সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে নিজের প্রতি সমর্থন আদায়ের মতলবে।
এখন আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফেরার কথা বলছে, কিন্তু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রেখে দিতে চাইছে। বলা হচ্ছে, বিসমিল্লাহ থাকবে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করাও বাস্তব কারণে সম্ভব হবে না। তাহলে বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয় কী করে? ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না—এই নীতি যদি সংবিধানে আবার যুক্ত করা না যায়, তাহলে বাহাত্তরের আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?
আলাউদ্দিন আহমেদ
নয়া পল্টন, ঢাকা।

গণিত অলিম্পিয়াড ও আমাদের সচেতনতা
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের বয়স ৫১ বছর, বাংলাদেশের সেখানে পদার্পণের বয়স মাত্র ছয় বছর। এই ছয় বছরে বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের অর্জন নেহায়েত কম নয় । গত বছর একজন প্রতিযোগীর সর্বোচ্চ অর্জন ছিল ১৭ পয়েন্ট (ব্রোঞ্জ পদক), এবার একজন প্রতিযোগীর সর্বোচ্চ অর্জন ২০ পয়েন্ট এবং ব্রোঞ্জ পদক অর্জন (১ নম্বরের জন্য রৌপ্য পদক হয়নি)।
গত কয়েকবারের তুলনায় এবার আইএমওতে সৌদি আরবের প্রাপ্তি ছিল উল্লেখ করার মতো। দুটো ব্রোঞ্জ অর্জিত হয়েছে সারা বছর মার্কিন কোচ দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে। আমার জানামতে বিশ্বের অনেক দেশই নির্বাচিত প্রতিযোগীদের জন্য বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের তৈরি করে। চীন প্রতি বছর আইএমওতে শীর্ষস্থান দখল করে এই কৌশল অবলম্বন করে। শুধু গণিতে কেন, ক্রীড়ায়ও তারা শীর্ষে। এর কারণ পছন্দ এবং যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেককে নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়ে তোলা।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্যতানুযায়ী পৃষ্টপোষকতা করতে পারলে তা হবে রাষ্ট্রের জন্যই কল্যণকর। এ ক্ষেত্রে ক্রীড়াঙ্গনের সফলতাকে আমরা যেভাবে অভিনন্দিত করব, তেমনি করব শিক্ষা এবং বিজ্ঞানকেও।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রীড়া কোটায় ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষা এবং বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সুনাম বয়ে নিয়ে আসার পরও তাঁদের জন্য ভর্তি কোটার ব্যবস্থা নেই। মনে পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার সময় একজন জাতীয় ফুটবলারের সুবিধার্থে আমাদের সাবসিডিয়ারি পরীক্ষা পিছিয়েছিল। অথচ ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে স্পেনে থাকায় একজন প্রতিযোগী নটরডেম কলেজে ভর্তির জন্য ভাইভাতে যথাসময়ে উপস্থিত না থাকতে পারায় ছেলেটিকে তার অভিভাবকসহ কতই না নাজেহাল হতে হয়েছিল।
এবার ৫১তম আইমওতে কাজাখস্থান ঘোষনা দিয়েছে তাদের দেশ থেকে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীকে তাদের দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি ভর্তি করিয়ে নেওয়া হবে। একই ব্যবস্থা রয়েছে ইরান, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নানিয়াং টেক বিশ্ব্ববিদ্যালয়ে সুযোগ রয়েছে আইএমওতে একটি পদক থাকলেই সরাসরি বৃত্তিসহ ভর্তির।
আমাদের ক্ষুদে গণিতবিদেরা ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে ভাল ফল করবে সন্দেহ নেই। কিন্ত এধরনের বিশেষ ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে নিঃসন্দেহে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত।
মালেকা বিলকিস, ঢাকা।
m.bilkis@yahoo.com

সাঁথিয়ার দুঃখ
পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভার অধিবাসীরা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করা সত্ত্বেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে পৌর এলাকা অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। মশা নিধনের কোনো উদ্যোগ নেই। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তাগুলো ডুবে যায়। জনসাধারণকে হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে চলাচল করতে হয়।
পৌরসভার অধীন চক কোনাবাড়ীয়া, দৌলতপুর, সাঁথিয়া বাজার, শালঘর, ফকিরপাড়া, শেখপাড়া প্রভৃতি স্থানে পাকা ও আধা পাকা সড়ক ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৌরসভার নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১০০ পরিবারের ভাগ্যে এখনো বিদ্যুৎ-সংযোগ জোটেনি। যেখানে বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে, সেখানে দিন-রাতে ব্যাপক লোডশেডিং করা হয়। সড়কগুলোতে বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় সন্ধ্যার পরপর ভূতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে পুরো পৌর এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মো. আশিক ইকবাল
সাঁথিয়া বাজার, পাবনা।

ক্ষমতা বনাম সমস্যার পাহাড়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এক বৈঠকে বলেছেন, যারা বিদ্যুৎ-সমস্যা নিয়ে আন্দোলন-ভাঙচুর করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের ‘কঠোরহস্তে’ দমন করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন একটি সময়ে এই উক্তি করেছেন, যখন একটু বিদ্যুতের জন্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সারা দিনের কর্মক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে একটু শান্তিমতো ঘুমানোরও জো নেই। সারা রাতে কয়েকবার লোডশেডিংয়ে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গরমে ছটফট করতে করতে সরকারের সমালোচনা করা ছাড়া আর কোনো সান্ত্বনা থাকে না।
ক্ষমতাধরেরা ক্ষমতায় আরোহণের পর কেন যেন মানুষের দুঃখকষ্ট অনুভব করতে পারেন না। তাঁরা ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করেন। এ সরকার যদি এ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ-সমস্যার কিছুটা সমাধানও না করতে পারে, তাহলে হয়তো আরেকটি ‘কানসাট’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াও অসম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে ‘নৈরাজ্য’ দমন করা একটু কঠিনই হয়ে উঠতে পারে।
দেশে যেসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেগুলোর রাতারাতি সমাধান কেউ প্রত্যাশা করে না। কিন্তু কোনো সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না—এটাই হতাশার কথা। সমস্যাগুলো জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। কিন্তু সমাধানের কাজ শুরু হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথাই ধরা যাক। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত দেড় বছরে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে বলে সরকার দাবি করে। কিন্তু মানুষের মনে যে প্রশ্নটি এসেছে তা হলো, ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার পরেও লোডশেডিং কেন আগের চারদলীয় জোট সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেয়েও ভয়াবহ? সরকার এ ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারে, চাহিদা বেড়েছে কিংবা এ জাতীয় কিছু বলে। কিন্তু সেটা এ দেশের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, তাও ভেবে দেখার বিষয়।
বর্তমান সরকার দেড় বছর হলো ক্ষমতায় এসেছে। আরও সাড়ে তিন বছর এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে। দুই বছর অগণতান্ত্রিক শাসনের পর একটি সুন্দর নির্বাচনে এ দেশের মানুষ বিপুল সমর্থন দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। মানুষ কখনোই চায় না, বর্তমান সরকার ব্যর্থ হোক। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই সরকারের সফল হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের নেতৃবৃন্দ অনেক ভালো ভালো কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু জনজীবনের সমস্যাগুলো তো কমছে না বরং দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রীরা যদি জনগণকে হুমকি-ধমকি দেন, তাহলে হতাশা ও ক্ষোভ আরও বাড়বে। সরকারের জনপ্রিয়তা হুমকির মুখে পড়বে।
নাইর ইকবাল, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.