সময়ের প্রতিবিম্ব-স্মৃতিতে কামাল-জামাল-রাসেল by এবিএম মূসা

কয়েক দিন আগে পালিত হলো শেখ কামালের জন্মদিন। আর দুই দিন পর মৃত্যুদিন, মর্মবেদনার-স্মৃতিবিজড়িত ১৫ আগস্ট। আজকে প্রধানত তাকে নিয়েই লিখব। তবে আরম্ভটি হবে ছোট্ট রাসেলকে নিয়ে। একদিন বিকেল পাঁচটার দিকে শাঁ করে ৩১ নম্বরের অপ্রশস্ত রাস্তা থেকে ৩২ নম্বরে ঢুকেই আমার সামনে একেবারে পপাতধরণিতল।


গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ ছেলেটি। তারপর সরাসরি প্রশ্ন, ‘চাচা, আমাদের বাড়ি গিয়েছিলেন?’ বললাম, ‘যাইনি, তবে ফেরার পথে ভাবির সঙ্গে দেখা করে যাব।’ অতঃপর সাইকেলে উঠে লেকপাড়ে উধাও হলো শৈশবের শেষ প্রান্তের ছোট্ট ছেলেটি। মুজিব-দম্পতির সর্বকনিষ্ঠ সন্তান, বড় আদরের প্রশ্রয় পাওয়া দুরন্ত রাসেল। সকালে সাইকেলে যেত ধানমন্ডির ল্যাবরেটরি স্কুলে। বিকেলে লেকের পূর্বপাড়ে এমনি করে চক্কর মারত। মধ্যবর্তী ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পূর্বপ্রান্তের সাদা একটি দালান পর্যন্ত সাইকেলারোহীর দৌড়ানোর সীমানা। সেই বাড়িতে দোতলায় থাকতেন শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়া। এদিকে ৩২ নম্বরের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন স্নেহময়ী মা, তীক্ষ দৃষ্টি রাখতেন দুষ্টু ছেলেটির সাইকেল-পরিক্রমা যেন সীমাবদ্ধ থাকে। একাত্তরের পনেরোই আগস্ট নিষ্ঠুর ঘাতক কেড়ে নিল ছোট্ট প্রাণটি। বড় দুই ভাই কামাল-জামালের একেবারে বিপরীত চরিত্রের রাসেল। ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমার প্রায় দিন সকালে আনাগোনার সময় একদিন প্রাতরাশ টেবিলে সকৌতুক মন্তব্য করেছিলাম, ‘মুজিব ভাই, বড় দুই ভাইয়ের নাম কামাল-জামাল, এই দুষ্টুটির নাম “দামাল” রাখলেন না কেন?’ মুজিব ভাই হেসে বললেন, ‘তোর ভাবিকে জিজ্ঞেস কর।’ ভাবি কিছু বলার আগেই ‘পাগলি মায়ের দামাল ছেলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আদরের ছেলেটি স্কুলে চলে গেল অথচ সঙ্গে কোনো বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না।
একাত্তরের পনেরোই আগস্ট যখন শহীদ হলো জামাল, তার আগে যুদ্ধশেষে সদ্য কমিশন পেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। বাপ-মা-ভাই-বোনদের সুখবরটি দিতে বাড়িতে এসেছিল। ১৪ আগস্ট রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বেগম মুজিব নাকি স্নেহভরে তাকে বলেছিলেন, ‘আজ রাতটুকু থেকে ভোরে যাস।’ জামালের ক্যান্টনমেন্টে আর যাওয়া হয়নি। পঁচিশে মার্চ রাতে মা-বোন ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জামালকে পাকিস্তানি বাহিনী ধানমন্ডি ১৮ অথবা ১৯ নম্বর রাস্তার একটি বাড়িতে বন্দী করে রেখেছিল। জনান্তিকে বলছি এখান থেকেই সে সময়ে বর্তমান জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম হাসিনাকে পিজি হাসপাতালে এখনকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন। সেখানেই জন্ম নিয়েছিল জয়, বোধহয় বাঙালির স্বাধীনতাযুদ্ধ বিজয়ের আগমনী বার্তা নিয়ে। পরবর্তী সময়ে এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুই নাকি একসময় তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমার নাতির নাম হবে জয়, নাতনি হবে জয়া।’
জামাল মা-বোনদের সঙ্গে বন্দী কিন্তু কামাল পঁচিশে সন্ধ্যায় সীমান্ত পার হলেন। তারপর মুজিবনগর চলে গিয়েছিলেন। এদিকে একদিন সকালে বন্দিনী মা আবিষ্কার করলেন জামাল উধাও। বেগম মুজিব পাকিস্তানিদের দায়ী করলেন শেখ জামালকে অপহরণ করার অভিযোগ এনে। সারা বিশ্বে আলোড়ন, বিদেশি পত্রপত্রিকায় ছাপা হলো পাকিস্তানিরা শেখ মুজিবের মেজ সন্তানকে গায়েব করেছে। সেই জামালকে আমি আবিষ্কার করলাম বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ নম্বর সেক্টরে। পরবর্তী ঘটনা বিবৃত করার আগে বলে নিই, জামালকে আমার বরাবরই মনে হতো মুখচোরা ও নিরীহ চরিত্রের অন্তর্মুখী চাপা স্বভাবের কিশোর। কোনো দিন সকালে ৩২ নম্বরে গেলে, খাবারঘরের পশ্চিম কোণে একটি কামরায় তাকে দূর থেকে দেখতাম লেখাপড়া করছে। মুখচোরা, লাজুক তরুণটি, সদ্য আইএ তথা এইচএসসি পাস করা অন্য চরিত্রের এক অসম সাহসী জামালের দেখা পেলাম যুদ্ধক্ষেত্রে একটি পরিখায় অস্ত্র হাতে। সাংবাদিকেরা যাকে বলে ‘স্কুপ’, সেই সুযোগ ছাড়তে আছে? আমি তখন মুজিবনগরে বিবিসি, লন্ডনের দি টাইমস ও সানডে টাইমস-এর জন্য খবর সংগ্রহ করছি। একটি চমক লাগানো খবর আবিষ্কার অথবা স্কুপের সুযোগ ছাড়ে কে? আমার ক্যানন এসএলআর ক্যামেরায় জামালের ছবি তুলে পাঠালাম লন্ডনের সানডে টাইমস-এ। সেই খবর আর ছবি মুজিবনগর সরকারকে মহা ক্ষিপ্ত করল। ভারত সরকারের গোয়েন্দা দপ্তর এল খোঁজ করতে। তাদের রুষ্ট হওয়ার কারণ জামালের নিখোঁজের খবর পাকিস্তান সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল। আমার অপরাধ আবিষ্কৃত জামাল পাকিস্তানিদের একটি গুরুতর অভিযোগের হাত থেকে রেহাই দিল।
যুদ্ধশেষে জামাল ফিরে সেনাবাহিনীর সাধারণ লে. কর্নেল পদে যোগ দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, স্বাধীন বাংলায় জামালের সঙ্গে অতঃপর আমার কদাচিৎ দেখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ত্রিরত্নের শ্রেষ্ঠ ছিলেন শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে কতিপয় কুৎসা রটনার বাইরে,অথবা মরণের পর কামাল কখনো কোনো ১৫ আগস্টে ব্যাপক আলোচিত হয়নি। বস্তুত, শেখ কামালের প্রতি বাহাত্তরের প্রথম থেকেই একটি পরিকল্পিত অপপ্রচারের সূচনা ঘটানো হয়েছিল। তাঁকে ব্যাংক লুটেরা বলে কলঙ্কিত করে অপপ্রচারের একটি পরিকল্পিত কর্মপন্থা নিয়েছিল কোনো বিশেষ মহল। সেই সুদূর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকারীরা ছিল পরবর্তী সময়ে যাঁরা তারেককে জিয়ার ও খালেদার উত্তরাধিকারীর পদে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, হাওয়া ভবনকে ক্ষমতার তথা সরকারি ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রভূমি বানিয়েছিলেন—তাঁরা কামালের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে শঙ্কিত ছিলেন। বস্তুত, পনেরো আগস্ট এই একটিমাত্র কারণেই আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর অপর তিন বংশধরকে তারা হত্যা করেছিল। তবে আমি নিশ্চিত, কামাল বেঁচে থাকলেও রাজনীতিতে নিস্পৃহ থাকতেন, তারেক, রাজীব গান্ধী অথবা সঞ্জয় হতেন না। বাংলার ভাগ্যবিধাতার কী অমোঘ বিধান, সেই ষড়যন্ত্রকারীদের অসদুদ্দেশ্য যা-ই থাকুক, তা ব্যর্থ করে আজকে বোন শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলায় গণতন্ত্র সাধনা অবারিত রেখেছেন, তাঁর আদর্শ সমুন্নত রেখেছেন।
যে ঘটনাকে ‘ব্যাংক লুটেরা’ অপচেষ্টা বলে রটনা করা হয়েছিল, বাস্তবে ঘটনাপ্রবাহ ছিল ভিন্নতর। সে রাতে কতিপয় দুষ্কৃতকারীর ব্যাংক লুটের ষড়যন্ত্রের খবরটি কামাল আগেই জানতে পেরেছিলেন তাঁর সদ্য গঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ফকিরেরপুলে অবস্থানকারী দুজন খেলোয়াড়ের মাধ্যমে। তিনি মতিঝিল এলাকায় জিপে করে ছুটে যান তরুণ সাহসীদের নিয়ে আবাহনী মাঠের রাতের আলোচনা বৈঠক থেকে। তাঁর মাধ্যমে খবর পেয়েই ঢাকার পুলিশ সুপার বীরবিক্রম মাহবুবের পুলিশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে, দুজনকে পায়ে গুলিবিদ্ধ করে। সেই রাতে আমি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সম্পাদক পদে সদ্য নিযুক্তি পেয়ে দৈনিক মর্নিং নিউজে কাজ করছিলাম। মতিঝিলে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আমি একজন প্রতিবেদককে পাঠিয়েছিলাম। আশপাশের এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানার পর মর্নিং নিউজে এ সম্পর্কীয় ছোট একটি সংবাদও ছাপা হয়েছিল। ছাপানো সত্য ঘটনাটি কুৎসার নিচে চাপা দিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী কামালের চরিত্রহননকারীরা
একাত্তরের এপ্রিলে মুজিবনগরে হাজির হলেন কামাল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সংগত কারণে তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠালেন না। সমরাস্ত্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জনের পর জেনারেল ওসমানীর এডিসি পদে নিয়োগ দিলেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মুক্তিযুদ্ধের আগেই কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন। ফিরে এসে স্নাতকোত্তর তথা এম এ ডিগ্রি নিলেন। এদিকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেশের বিদ্যমান অর্থনীতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, যুদ্ধ শেষে হতাশাযুক্ত কর্মহীন তরুণ ও কিশোরদের নিয়ে কামাল তখন বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ড গায়কদল গঠন করছেন। এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করে উদ্দাম যুবকদের সংগীতে সংস্কৃতের দিকে আকৃষ্ট করছিলেন। কীসব যন্ত্রপাতি ক্ল্যারিওনেট, ফ্লুট, ড্রাম, নানা ধরনের গিটার—সব চিনতাম না কিংবা জানতাম না, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা ছেলেদের হাতে তুলে দিলেন।
কামাল তাঁর দূরদৃষ্টির কারণে বুঝেছিলেন, সদ্য স্বাধীন নিঃস্ব দেশে যুদ্ধফেরত সব তরুণকে রাতারাতি কর্মসংস্থান করা যাবে না। আবার পুরোনো শিক্ষাঙ্গনের বা কর্মস্থলের প্রতিও তারা আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। তাই অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে, চাঁদাবাজি, ছিনতাই আর সন্ত্রাসীতে লিপ্ত হয়ে যাবে। তাই পাশ্চাত্য সংগীতের নতুন ধারায় এনে নতুন একটি প্রেরণায় তাদের উদ্বুদ্ধ করলেন।
অতঃপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর প্রাচীন সংস্কৃতিতে যারা আগ্রহী নয় তাদের আকৃষ্ট করলেন খেলার জগতে। প্রতিষ্ঠা করলেন আবাহনী ক্রীড়া চক্র। যেখানে নিয়ে এলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অনেক কৃতী খেলোয়াড়কে। স্বাধীনতার আগেও আমাদের প্রধান ক্রীড়াকাণ্ড ফুটবলে এঁদের অনেকের অংশগ্রহণ ও সাংগঠনিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। আবাহনী, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী, রহমতগঞ্জ। তখনো খেলার মাঠে সামনের কাতারে আসেনি ব্রাদার্স ইউনিয়ন। আমি এই ক্লাবটির ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলাম। সেই কারণে কামাল একদিন আমাকে অনুরোধ করলেন, তাঁর নতুন ফুটবল দল গঠনে পরামর্শ দিতে ও সহায়তা করতে।
আবাহনী প্রতিষ্ঠিত হলো, কিন্তু যতই নামীদামি খেলোয়াড়ের সমন্বয় ঘটুক না কেন, ইচ্ছা হলেই তখন যেকোনো দল প্রথম বিভাগে খেলতে পারত না। তৃতীয় বিভাগ থেকে জয় পেয়ে দ্বিতীয় স্তর পার হয়ে প্রথম বিভাগে আসতে হবে। এখন সমস্যা হলো আবাহনী ও সদ্য সুসংগঠিত ব্রাদার্স ইউনিয়নে অনেক নামীদামি দর্শকনন্দিত খেলোয়াড় রয়ে গেছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে জাতীয় লীগ হয় কী করে? কামাল জানতে চাইলেন, ‘কিছু করা যায় না?’ আমি তখন স্বাধীনতা-পরবর্তী গঠিত জাতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি। গাজী গোলাম মোস্তফা সভাপতি আর কামালেরই বন্ধু ও আবাহনীর একজন কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ সাধারণ সম্পাদক। অনেক চিন্তাভাবনা, গবেষণা, বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ফুটবল প্রতিযোগিতা পরিচালনারীতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চালু হলো প্রিমিয়ার লীগ, সুপার লীগ আর নানা ধরনের দলীয় প্রতিযোগিতা। অতীতের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার লীগ খেলা, নক-আউট বা হারলেই বিদায় নেওয়ার কাপ শিল্ডের জন্য প্রতিযোগিতার পুরোনো পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটানো হলো। এই সূত্র ধরেই গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুমি খেলার অঙ্গন থেকে বছরব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল জনপ্রিয় খেলাটি।
আগেই বলেছি, শেখ কামালের রাজনীতিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, তাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বা নির্বাচনী কার্যক্রমে তিনি কোনো দিন বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাননি। তবে একটি ব্যতিক্রম ঘটেছিল। যা আজও আমার জন্য একটি গর্বিত অসামান্য স্মৃতি হয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধু তিয়াত্তরের নির্বাচনে আমাকে অংশ নিতে নানা কারণে বাধ্য করলেন। আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি তো ৩০০ আসনে যাবেন না, তবে আমার এলাকায় যেতে হবে।’ তিনি কী বুঝলেন জানি না, দুষ্টুমির মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি যাব না, তবে একজনকে পাঠাব।’ সেই একজন যে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তহীন শেখ কামাল তা জানলাম যখন একদিন সকালে টেলিফোন পেলাম, ‘চাচা, আব্বার হুকুম আপনার দেশের বাড়িতে যেতে হবে।’ নির্ধারিত দিনে কামাল ফেনী এলেন, সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বর্তমানে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক। খোলা জিপে ফেনী থেকে বিলনিয়া প্রায় ২০ মাইল যাত্রাপথ। আমি জিপের চালকের আসনে, পাশে শেখ শহীদ আর ফেনীর ছাত্রলীগ নেতা রকিবউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি।
জিপ চলল ২০ মাইল দূরে বিলনিয়ার পথে। আগেই কেমন করে যেন খবরটি রটে গিয়েছিল। যাত্রাপথে দেখি রাস্তার দুই পাশে ছেলেবুড়ো, শিশুকোলে নারী, ধানখেত থেকে উঠে আসা চাষি সবাইকে। পথে কাকে যেন কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ্যাই বেগগুন এইচ্ছা দৌড়ার-কা? কোনাই যার।’ সবার মুখে এক কথা ‘শ্যাখের পোলারে দেখতে যাই।’ দীর্ঘ ২০ মাইল পথ কামাল শুধু মুগ্ধ জনতার সালাম নিলেন আর দিলেন, শুধু হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানালেন। আসা-যাওয়ার পথে কোথাও থামেননি, পথসভায় রাজনৈতিক ভাষণ দেননি, জনসভা করেননি, নৌকা মার্কায় ভোট চাননি। আমার নির্বাচন সম্পর্কে একটি কথা বলেননি। পরশুরামে আহারপর্ব শেষ একই পথে ফেনী, অতঃপর ঢাকা প্রত্যাবর্তন। আমি গর্বিত, ৩০০টি সংসদীয় আসনের মাত্র এই একটিমাত্র নির্বাচনী এলাকা সফর করেছিলেন কামাল। স্বল্পায়ু জীবনে শেখ কামালের এই একটিমাত্র অনুল্লিখিত ‘রাজনীতি-সম্পৃক্ততা’।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.