আত্মবিনাশী এই অপকর্ম এখনই বন্ধ করুন-মাছ শিকারে কীটনাশক

সুন্দরবনের খাল ও নদী-নালাগুলোতে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরার খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাময়িক টনক নড়ে, তারা একটু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে; দু-একটি গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়।


কিন্তু কদিন পরই সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়: অবাধে মাছ শিকার চলে বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে।
প্রথম আলোয় রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, ইলিশ ধরার মৌসুমে এখন সেই মারাত্মক মচ্ছবই চলছে সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও নদ-নদীতে। জোয়ার আসার কিছু সময় আগে জেলেরা চিঁড়া, ভাত ইত্যাদির সঙ্গে বিষাক্ত কীটনাশক মিশিয়ে তা ছিটিয়ে দেন নদ-নদী ও খালগুলোর পানিতে। তার কিছু সময় পরে পুরো এলাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে ওঠে। জেলেরা ‘কম পরিশ্রমে’ সেসব মাছ সংগ্রহ করে বাজারে সরবরাহ করেন। কী মারাত্মক বিপর্যয়কর ক্রিয়াকলাপ!
বিষ প্রয়োগের ফলে শুধু মাছই মরে না, নির্বিচারে মারা পড়ে সব জলজীব। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে মারাত্মক দূষণ ঘটে। ফলে শুধু জলজীব ও অণুজীবগুলো নয়, ডাঙার প্রাণী তথা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। আর বিষ প্রয়োগের ফলে মরা মাছ মানবস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষ এতটা আত্মঘাতী হতে পারে কী করে, তা ভেবে বিস্মিত হতে হয়।
দরিদ্র জেলেরা বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের এই সহজ পন্থা অনুসরণ করেন কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায়। সুন্দরবনের ভেতর বিভিন্ন খাল ও নদী-নালায় মাছ ধরতে বন বিভাগের অনুমতিসংবলিত ‘পাস’ নিতে হয়। এ রকম পাস নিয়ে বা না নিয়ে জেলেরা সুন্দরবনের ভেতরে ঢুকে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করেন। বন বিভাগের কিছু লোক যে এ বিষয়ে কিছু জানেন না, তা মোটেই নয়। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তাঁরা উৎকোচ নেন। স্থানীয় কিছু আড়তদার, দাদন ব্যবসায়ী এমনকি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাও বিষ প্রয়োগে মাছশিকারি জেলেদের নানাভাবে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ আছে। সব মিলিয়ে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এমন—সবাই মিলে মেতে উঠেছে এই চরম অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী অপকর্মে।
কিন্তু এভাবে এটা চলতে দেওয়া যায় না। প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর, চরম আত্মবিনাশী এই অপকর্ম বন্ধ করতে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

No comments

Powered by Blogger.