নারীকে লাঞ্ছিত করে কেউ যেন পার না পায়-বখাটের অত্যাচারে আবারও আত্মহনন

বখাটের অত্যাচারে আবারও এক ছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। গত শুক্রবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বারৈখালী গ্রামের স্কুলছাত্রী হাসনা রহমান সিনথিয়াকে এক বখাটে উত্ত্যক্ত করার পরিণতিতে সে আত্মহত্যা করেছে।


অথচ এক মাস আগে বখাটে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা এবং ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্লোগান নিয়ে ছাত্রীরা যে শোভাযাত্রা করেছিল, সে ছিল তার সামনের সারিতে। এ দেশে নারীর জন্য যে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে, এটা তারই নজির।
সামাজিক পরিসরে হরহামেশা নারী ও কিশোরীদের পুরুষের লোলুপ চাহনি, কটু মন্তব্য, লাঞ্ছনা, হয়রানি, নিগ্রহের শিকার হতে হয়। নারীরা তা সাধারণত প্রকাশও করতে চায় না। কিন্তু নারীর ওপর এই নির্যাতনের প্রভাব যে কত ভয়াবহ হতে পারে, উত্ত্যক্ত হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নারীদের আত্মহত্যার ঘটনা থেকেই তা অনুধাবন করা যায়। বখাটের অত্যাচারের ফলে অল্প বয়সী মেয়েরা এতটাই যন্ত্রণার্ত ও লাঞ্ছিত বোধ করে যে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ইলোরা, পিংকি, তন্বী, সীমা, রুমি, রুনা, রিনা ও সিনথিয়ার মতো বহু নারী ও কিশোরী আত্মহত্যা করেছে বখাটেদের নির্যাতন, ত্রাস সৃষ্টিজনিত মানসিক ক্ষতির কারণে।
কিছুদিন আগে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের উত্ত্যক্ত করার মাত্রা এত বেড়ে গিয়েছিল যে কিছু বিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সরকার ১৩ জুনকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে শিক্ষাঙ্গনে এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে পুলিশসহ সরকারের নানা প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোগী হতে হবে।
নারীদের হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমাজ এ ব্যাপারে অনেকটা নিস্পৃহ। আমাদের সমাজে যত দিন পুরুষ নারীকে লাঞ্ছিত করে, তার জীবন ধ্বংস করে পার পেয়ে যেতে থাকবে, তত দিন নারীর জন্য সামাজিক পরিসর নিরাপদ হবে না। যারা বখাটেদের অত্যাচারের শিকার, তাদের সুরক্ষা ও সহায়তা দেওয়া, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া এবং এমন সহিংসতার মূল কারণগুলোতে আঘাত করা প্রয়োজন। নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী ও কিশোরীরা যেন আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারে, তার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.