হাইকোর্টের বক্তব্যে সংসদে উত্তাপ-সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি সাংসদদের

তিন দিনের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের সাংসদেরা। তাঁরা বলেন, প্রধান বিচারপতি এ উদ্যোগ না নিলে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।


গতকাল মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই দাবি জানানো হয়। সন্ধ্যা সাতটা ২৫ মিনিট থেকে প্রায় এক ঘণ্টা এ আলোচনা চলে।
বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা বিচার বিভাগের কাছে ন্যস্ত হয়। এতে বলা হয়, বিচারপতিদের অভিশংসনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে পারবেন।
আলোচনা শেষে সংসদের সভাপতি ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, ‘তাহলে এ সিদ্ধান্ত রইল। তবে আমি এ বিষয়ে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাংসদ রাশেদ খান মেনন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, সংসদে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যা নিয়ে আপনি পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে পারেন। বলতে চাইলে আগামীকাল আলোচনা করা যাবে। এ সময় অন্য সদস্যরা মেননকে সমর্থন জানালে ডেপুটি স্পিকার আলোচনার সুযোগ দেন। আলোচনা শুরুর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনকক্ষ ছেড়ে চলে যান।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী স্পিকারের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলেছেন, স্পিকারের অ্যাডভোকেটশিপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্পিকারের প্রতি এই আচরণ আমরা মেনে নিতে পারি না। কারণ, সংবিধান সংসদকে আদালত থেকে দায়মুক্ত করেছে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমরা তিন দিন অপেক্ষা করব। আমরা দেখব, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছেন কি না। না হলে আমরা সংসদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনব। সংবিধান যে লঙ্ঘন করেন, তাঁর এই আসনে থাকা সমীচীন হবে না। আমরা ইমপিচ করার অধিকার ছেড়ে দিয়েছি। আমরা ছেড়ে দিলেও পাঁচ মিনিটে ফিরিয়ে আনতে পারি।’
সুরঞ্জিত আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি বলব, তিনি (বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী) সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংসদে যা আলোচনা হয়েছে, তা বিচার্য বিষয় নয়। এটা করে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাই তিনি আর বিচারপতি থাকতে পারেন না।’
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে বিচারপতির পদ থেকে সরাতে অবিলম্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আহ্বান জানিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, ‘তাঁর এই চাকরিতে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাব সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করার জন্য।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী “স্যাডিস্ট”। তিনি মানুষকে অপমান করতে পছন্দ করেন। যাঁরা স্যাডিস্ট, অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পান, আমরা তাঁদের ঘৃণা করি। স্যালুট না দেওয়ায় তিনি ট্রাফিক পুলিশকে কান ধরে ওঠবস করান। তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট কেটে এই ব্যক্তি বিমানের বিজনেস ক্লাসের সিট চান। তাঁর লজ্জা থাকা উচিত।’
শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার আহ্বান জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনি কী করে সংবিধান লঙ্ঘন করে স্পিকার সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলতে পারলেন? শামসুদ্দিন চৌধুরীকে ভাগ্যবান আখ্যায়িত করে তোফায়েল বলেন, ‘এর আগে আবদুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে তাঁকে বিচারপতি করেন। বিএনপি এসে তাঁকে কনফার্ম করেনি। এবার আমরা ক্ষমতায় এসে তাঁকে কনফার্ম করি। তাঁর সঙ্গে আছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মনে হয়, তাঁর কোনো কাজ নেই। খবরের কাগজ পড়ে মানিকের কাছে ছুটে যান রুল ইস্যু করতে।’
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু সংসদের ওপরে নয়। স্পিকারের বিষয়ে যে মন্তব্য বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী করেছেন, তা সংসদের ওপর নগ্ন হামলার শামিল। তিনি স্পিকারকে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলেছেন। কীভাবে আদালত এই কটূক্তি করতে পারেন। স্পিকারকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছেন। তার মানে সংসদ, সাংসদ, সরকার সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। সংসদ থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাব যাওয়া উচিত।
শেখ সেলিমের বক্তব্যের পর ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। সে জন্য বলছি, বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল আলোচনা করি।’ তখন শেখ সেলিম বলেন, ‘ইন্টারনেটে নিউজ এসেছে। আমাদের কাছে কপি আছে। আপনার কাছে পাঠাচ্ছি।’ এরপর ডেপুটি স্পিকার নতুন করে ফ্লোর দেন।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, সংসদ সার্বভৌম কি না। মানিক লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকারের দয়ায় বিচারপতি হয়েছেন। তিনি সম্মানিত লোকদের আদালতে ডেকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বেইজ্জতি করেন। স্পিকারকে অপমান করার জন্য বিচার বিভাগের ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিচারপতিদের জবাবদিহি করার জন্য সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনা উচিত।’
জাসদের মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘এ রকম লক্ষণ পাকিস্তান আমলেও দেখা গিয়েছিল। এটা খারাপ লক্ষণ। এখন সর্ষের মধ্যে ভূত দেখতে পাচ্ছি। সরকার যখন সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করছে, তখনই সরকারকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।’

No comments

Powered by Blogger.