পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি বইয়ের পথের বাধা দূর হোক-কলকাতায় বইয়ের উৎসব

ঢাকার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বিখ্যাত বইমেলা শুরু হওয়ার লগ্নে আরেকটি বইমেলা চলছে কলকাতায়। গত ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই বইমেলায় বরাবরের মতো বাংলাদেশি বইয়ের সম্ভার নিয়ে বাংলাদেশও উপস্থিত। গতকাল মঙ্গলবারের প্রথম আলোর সংবাদ বলছে, বরাবরের মতোই উপচে পড়া ভিড় কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে।


প্রতিবার এই ভিড় দেখে একটা প্রশ্নই জাগে, যেখানে বাংলাদেশি বইয়ের এত চাহিদা, সেখানে বাংলাদেশি বই সুলভ নয় কেন? কেন বইমেলা ছাড়া সারা বছরের বইয়ের বাজারে বাংলাদেশি বই আমদানি হয় না?
প্রশ্নটি বাংলাদেশের লেখক, পাঠক, প্রকাশক ও পুস্তক ব্যবসায়ীদের, উত্তরের দায়ভার ওপার বাংলার সরকারি কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ রয়েছে যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু নীতিমালার কারণে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। অথচ কলকাতার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহের মতো বাংলাদেশের শামসুর রাহমান, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হকের উপন্যাসের চাহিদা সেখানে রয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে জানতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যাও সেখানে কম নয়। প্রায়ই দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বাঙালিরা ঢাকার বইয়ের বাজারে তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো বই খুঁজে বেড়ান, কিনে নিয়ে যান। অথচ খোদ কলকাতায়, বাংলা ভাষার দ্বিতীয় রাজধানীতে বাংলাদেশি বই দুর্লভ।
ভারতীয় বই বা পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশে তেমন কোনো বাধা না থাকায় সেখানকার পত্রপত্রিকা-ম্যাগাজিন এবং টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে সুলভ। এসবের মাধ্যমে বিজ্ঞাপিত হওয়ায় ভারতীয় বাংলা বইয়ের একটা বাজারও বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা-ম্যাগাজিন বা টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান ভারতে প্রদর্শনে সমস্যা থাকায় ওপারের বাঙালিদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে একটা অপরিচয়ের বাস্তবতা কাজ করে। বই হতে পারে সেই অপরিচয় কাটানোর সূচনা-মাধ্যম। কিন্তু সেই উদ্যোগ নিতে হবে পশ্চিম বাংলার কর্তৃপক্ষকেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং বাংলাদেশের পুস্তক-প্রকাশক ও বিক্রেতাদেরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। বহু পুরোনো এ সমস্যার জট কাটাতে পশ্চিমবঙ্গের লেখক-শিল্পী-সাংবাদিক সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.