এ অন্যায় সহ্য করা যায় না-ভোজ্যতেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম যখন কমছে, তখন আমাদের দেশের ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীরা একজোট হয়ে সয়াবিন তেলের দাম আরও এক দফা বাড়িয়ে দিলেন। এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুতর কথা হলো, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর এই যুক্তিহীন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বস্তুত তাদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।


সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে; কিন্তু সরকার-নির্ধারিত দামে ভোক্তারা কখনোই ভোজ্যতেল কিনতে পারে না। বাজারে কিছুদিন আগে ভোজ্যতেলের দাম কম ছিল; ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা কম থাকায় তাঁরা তখন সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে তেল বিক্রি করেছেন; ফলে তাঁদের লোকসান হয়েছে। এখন তাঁরা সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে এভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের আরও এক অদ্ভুত যুক্তি হলো এই যে তাঁরা চিনিতে লোকসান গুনছেন, সে কারণেও ভোজ্যতেলের দাম তাঁদের বাড়াতে হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ ধরনের উদ্ভট, অন্যায়, জবরদস্তিমূলক আচরণ কেবল তখনই সম্ভব হয়, যখন সরকার বিষয়টিতে গুরুত্ব না দেয়।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে জোট বেঁধে যখন-তখন দাম বাড়াবেন, দাম বাড়ানোর স্বার্থে কারসাজি করে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করবেন, অথচ এসব নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই সরকারের থাকবে না—এটা তো হতে পারে না। সংঘবদ্ধভাবে জনগণের গাঁট কাটার এই তৎপরতা অপরাধের শামিল। জবাবদিহিপূর্ণ কোনো গণতান্ত্রিক দেশে আইনের শাসনের আওতায় এ ধরনের তৎপরতা কল্পনাও করা যায় না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। একমাত্র সরকারই পারে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্রগুলোর কারসাজি ও জবরদস্তিমূলক আচরণ থেকে জনগণকে রক্ষা করতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত বিষয়টির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া। বাজারে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের দাবিতে নাগরিক সমাজেরও সোচ্চার হওয়া উচিত।
সম্প্রতি ভোজ্যতেলের দাম যেভাবে বাড়ানো হলো, তা প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এভাবে দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ে অনতিবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.