জীবন দিলেন বিনিয়োগকারী-শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের বিচার হলো না

বেকারত্বে জর্জরিত এই দেশে লাখ লাখ যুবক একটু লাভের মুখ দেখার আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। পৃথিবীর সব দেশের পুঁজিবাজারেই মানুষ তা-ই করে থাকে। বৃহৎ ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ করে থাকেন।


কারণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা কোনো অনৈতিক বিষয় নয়, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরই স্বীকৃত একটি ব্যবস্থা। এই পুঁজিবাজারে লাভ-লোকসানের, অর্থাৎ দর উত্থান-পতনের প্রক্রিয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারের দরপতন এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এবং বিনিয়োগকারীদের পুঁজির ওপর এতটাই নিষ্ঠুর আঘাত হেনেছে যে শুধু বিক্ষোভ আর কালো কাপড় মুখে বেঁধে প্রতিবাদ করাই নয়, সোমবার হতাশায় আক্রান্ত হয়ে কাজী লিয়াকত আলী নামের এক বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করে বসলেন। অন্তত পরিবারের ধারণা সেটাই। কারণ তিনি প্রাথমিক অবস্থায় ভালোই করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ৮০ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ মাস পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে তিনি তাঁর সব টাকা খুইয়ে ফেলেন। অবশেষে রাজধানীর গোপীবাগের ভাড়া বাসায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বিরল। আধুনিক বিশ্বে অর্থই মানুষের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। সেই অর্থই যদি সব চলে গেল, উল্টো ব্যাংকের কাছে দেনা রয়ে গেল, তাহলে আর এ জীবনের মূল্য কী? হয়তো এমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই লিয়াকত আলী আত্মহত্যা করেছেন। অথবা তিনি হয়তো এ দায়দেনার চাপ সহ্য করতে পারেননি। বেঁচে থাকার যৌক্তিকতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই আত্মহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। অনেক বিত্তবান মানুষ দেউলিয়া হয়ে যায়। কেউ কেউ আবার সাহস ও অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণও পেতে চেষ্টা করে। লাভ-লোকসানের যেকোনো ব্যবসায় এমন মনোবৃত্তিই কাম্য। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই চরম অসন্তোষ দেখা দেওয়ার একটি বিশেষ কারণ ঘটিয়েছে সরকার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ ঘটতে পারে তখনই, যখন তাঁরা লাভ-লোকসানের প্রক্রিয়াটিকে স্বাভাবিক মনে না করেন। সাধারণ্যে ধারণায় আছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে একটি অসাধু চক্র বিশেষ খেলা করে একটি বিশাল অঙ্কের অর্থ বের করে নিয়ে গেছে। প্রায় দেড় বছর আগে দেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী এবং সচেতন জনসাধারণ ভয়াবহ দরপতনের পর বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ অব্যাহত রাখলে সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে। সরকার সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়েও যে লুকোচুরি করেছে, তা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই ধারণাকেই দৃঢ় করে তুলেছে যে তাঁদের অর্থ কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীই সরিয়ে নিয়েছে। সুতরাং শেয়ারবাজারে যতবার দরপতন হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে ততবারই সরকারের দিকে আঙুল তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুসারে যত দিন ব্যবস্থা গৃহীত না হবে, তত দিন পর্যন্ত এমন করেই জনগণ ভাবতে বাধ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.