ঈদের আগে অজ্ঞান পার্টি তৎপর

রাজধানীকে এ অভিশাপ থেকে মুক্ত করার দায়িত্ব নিন দীর্ঘদিন ধরে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এক নিষ্ঠুর অপরাধ সংঘটিত হতে দেখা যাচ্ছে। মানুষের ভিড়ের মধ্যে, পুলিশের নাকের ডগায় মলম নামে একাধিক চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে সর্বস্বান্ত করে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ ধরনের অপরাধীদের নামকরণ হয়েছে অজ্ঞান পার্টি।


সম্প্রতি ঈদ সামনে রেখে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এ অপরাধের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, কেবল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন গড়ে পাঁচজন করে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া মানুষ চিকিৎসার জন্য আসছে। শুধু টাকা-পয়সা হারানোই নয়, ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে কাউকে কাউকে জীবনও দিতে হচ্ছে। এসব অজ্ঞান পার্টি আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে থাকে বলে জানা যায়। বিশেষ করে বাসযাত্রী এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীরা এ অজ্ঞান পার্টির প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়ে থাকে। প্রায়ই বিভিন্ন বাসটার্মিনালে দেখা যায়, কেউ একজন লাশের মতো পড়ে আছে, কাউকে বা পুলিশ টেনে নিয়ে পাশে সরিয়ে রাখছে চেতনা ফিরে আসার অপেক্ষায়। অন্যদিকে অজ্ঞান পার্টির শিকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া মানুষগুলো সর্বদা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জনবহুল একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক হলে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটতে পারে, তা ভেবে দেখার বিষয়। এই পার্টির তৎপরতা নতুন নয়, বছরের পর বছর ধরে চলছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার কেউ নেই। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তারা সাধারণত এককভাবে অপরাধটি করছে না। এদের রয়েছে চক্র। এ ধরনের অপরাধের একটি ঘটনা থেকে অপরাধের পেছনে থাকা একাধিক ঘটনা উন্মোচন করা সম্ভব। যেমন_আমরা প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির এক বা একাধিক জড়িত ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে দেখি। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পুলিশ তাদের প্রথামাফিক আদালতে চালান করে দেয়। পেছনে অনেক প্রশ্ন আর ঘেঁটে দেখে না। কোথা থেকে আসে চেতনানাশক ওষুধ, যা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ? দু-চারজন জড়িত ব্যক্তি ধরা পড়লে তাদের আর অন্য সহযোগীকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয় কেন পুলিশ? গোয়েন্দা পুলিশের ছিনতাই-চাঁদাবাজি প্রতিরোধ টিমের একটি বড় কাজ হলো ঈদের মৌসুমে নজরদারি বৃদ্ধি করা। কারণ প্রতি ঈদের আগে সব ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তাদের চোখের সামনে একের পর এক ঘটনা ঘটছে কিভাবে? দেশের মানুষের মধ্যে ধারণা আছে, বেশির ভাগ অপরাধের সঙ্গে পুলিশের কোনো কোনো মহলের যোগাযোগ রয়েছে। এমন ধারণা পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে নিঃসন্দেহে। সঠিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মুছে ফেলা এখন একান্ত প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ভালো করেই জানা আছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তার দায় সরকারের ওপর বর্তায়, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। আমরা দ্রুত এবং কঠোর হাতে এ অপরাধ দমনের দাবি জানাচ্ছি। দেশের জনগণকে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক নিরাপত্তা বিধান এখন সরকারের প্রধান দায় হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.