তৃণমূলে গোপন ব্যালটে নেতা নির্বাচন করুন-কুমিল্লায় স্বচ্ছ প্রার্থীর সংকট

তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার খারাপ পরিণতি সমাজে নানাভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী-সংকট দেশের বিরাজমান রাজনীতির রুগ্ণতা ও বন্ধ্যত্বের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির দায়ে অভিযুক্ত।


রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা প্রায় অনুপস্থিত। সেখানে ভালো ও যোগ্য লোকের জায়গা বড়ই কম। টাকাওয়ালা ও মোসাহেবদের জয়জয়কার। তাঁদের দাপটে ভালো প্রার্থীরা আসতে চাইছেন না। এই সংকট শুধু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বেলায়ই নয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজসেবামূলক সংস্থার নেতৃত্ব দিতেও ভালো লোকেরা অনাগ্রাহী।
কুমিল্লায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের পাঁচ প্রার্থী একই সঙ্গে দেয়ালে পোস্টার সেঁটেছেন। এর উদ্দেশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মন জয় করা নয়। তাঁরা দলের ভোট চান না। তাঁরা প্রত্যেকেই ঢাকায় অবস্থানরত বড় বড় নেতা-নেত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট। সে কারণেই এটিকে বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসেবে দেখা যায় না। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এই সমস্যা থেকে বেরোতে সেদিকেই নজর দিতে হবে।
তৃণমূলের সংগঠনে শুধু কেন্দ্রীয় নয়, স্থানীয় নেতারও ব্যক্তিগত প্রভাব বড় নিয়ামক শক্তি, যা থেকে সৃষ্ট কোটারি একনাগাড়ে দীর্ঘ মেয়াদে চলে। সে কারণে নির্বাচন কমিশনকে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলো তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি ও নেতা নির্বাচনের কথা ভাবতে পারে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হলেও প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রচারণা—সবকিছুতে দলীয় আধিপত্য দৃশ্যমান। সে ক্ষেত্রে নির্দলীয় ছাপ রাখারও যুক্তি নেই। গোপন ব্যালটে প্রার্থী বাছাই করা গেলে যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব পাওয়া কঠিন নয়। গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুস্থ প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ চাইলে তৃণমূল থেকেই নির্বাচিত নেতৃত্ব সৃষ্টি করার কাজ শুরু করতে হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীকে সমর্থন দিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নতুন মুখের সন্ধান করতে পারেন। বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীপক্ষ টাকাওয়ালা ও পেশিশক্তির অধিকারীদের মনোনয়ন দিলে পরিস্থিতি জটিল হয়, তখন অন্য পক্ষ টেক্কা দিতে সক্ষম প্রার্থী খুঁজে বেড়ায়। দুই বড় দল মাস্তান প্রার্থীকে সমর্থন দিলে ভোটাররা অসহায় হয়ে পড়েন। তখন তাঁরা মার্কা দেখে ভোট দেওয়ার প্রবণতা দেখান। এই চিত্র রাতারাতি বদলে দেওয়া যাবে না। কিন্তু দুই বড় দলকেই ভাবতে হবে, সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৃণমূল থেকেই শুরু করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.