মাটির নিচে খানজাহান আলীর ১০ গম্বুজ মসজিদ by কৌশিক দে

নশ্রুতি আছে, শাসক ও সুফি দরবেশ হজরত খানজাহান আলী (রহ.) বৃহত্তর যশোর ও খুলনা জেলার বিভিন্ন অংশে প্রথম মুসলিম বসতি গড়ে তুলেছিলেন। তিনি এ দুই জেলায় কয়েকটি শহর প্রতিষ্ঠা; মসজিদ, মাদ্রাসা, সরাইখানা, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং বহুসংখ্যক দিঘি খনন করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকীর্তি বর্তমান বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ।

তবে এবার খুলনার ফুলতলা উপজেলার পায়গ্রাম-কসবা গ্রামে মাটি খুঁড়ে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) নির্মিত দশ গম্বুজ মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে পরীক্ষামূলক অনুসন্ধানকাজ চালানোর পর গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর প্রাচীন এ স্থাপনার সন্ধান পেয়েছে। স্থাপনাটি সংরক্ষণের জন্য আগামী সপ্তাহে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় অধিদপ্তর।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক শিহাব উদ্দিন মোহম্মদ আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ফুলতলা উপজেলার পায়গ্রাম-কসবার গ্রামে হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) নামে একটি আধা পাকা মসজিদ ছিল। সেটি ভেঙে অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী খনন শুরু করলে সম্প্রতি মাটির চার-পাঁচ ফুট নিচে প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান পায়। তারা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানানো হয়। অবশেষে গত ৭ ডিসেম্বর থেকে তাঁর নেতৃত্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী স্থাপনা অনুসন্ধানে খননকাজ শুরু করেন।
শিহাব উদ্দিন জানান, সন্ধান পাওয়া স্থাপনাটি সুলতানি আমলে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) নির্মিত দশ গম্বুজ মসজিদ। প্রায় দুই সপ্তাহ ৫০ দশমিক ৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ১০ ফুট প্রস্থ জায়গা পরীক্ষামূলক
খনন শেষে মসজিদের ভিত্তি গাঁথুনি উন্মোচিত হয়। এ ছাড়া সেখানে চারটি পিলারের ওপরের অংশ ও দেয়ালের পুরুত্বের অংশবিশেষ উন্মুক্ত হয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপনা সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য আগামী সপ্তাহে তিনি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানাবেন।
শিহাব উদ্দিন মোহম্মদ আকবর বলেন, 'ইতিহাস থেকে জানা যায় পঞ্চদশ শতকে তুরস্ক থেকে শ্রীলংকা হয়ে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) বাংলাদেশের দক্ষিণে গিয়ে পেঁৗছান। তিনি বাগেরহাটে খলিফাতাবাদ শহর ও খুলনার ফুলতলা উপজেলায় আরেকটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেই তিনি বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের আদলে দশ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।'
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ মোল্লা ও কাজী জাহিদুল ইসলাম বলেন, পায়গ্রাম-কসবা গ্রামের যেখানে স্থাপনাটি পাওয়া গেছে, সেখানে অনেক আগেই একটি মাটির ঢিবি ছিল। ঢিবির ওপর হজরত খানজাহান আলীর (রহ.) নামে একটি কাঁচাপাকা মসজিদ ছিল। পরে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। গত বছর ডিসেম্বর মাসে মসজিদ কমিটি পুরনো মসজিদটি ভেঙে সেখানে একটি অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।

No comments

Powered by Blogger.