আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি-পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন প্রয়োজন

ছিনতাই বেড়েই চলেছে। নিকট অতীতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। মানুষ নির্বিঘ্নে রাত-বিরাতে ঘুরে বেড়াতে পারত। টাকা-পয়সা নিয়ে শহরের যেকোনো অলিগলিতে চলাফেরা করতে পারত। রাজপথে গভীর রাতেও মহিলাদের একা পথ চলতে দেখা গেছে। এ নিয়ে সরকারের সাফল্যও আলোচিত ছিল। কিন্তু হালে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারছে না সরকার। বিশেষ করে গত মাসাধিককাল ধরে যেভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে, তাকে


আতঙ্কজনক বলতেই হবে। সরকারের অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে সাম্প্রতিক ছিনতাই ও সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো। ডিসেম্বর মাসেই রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে আটটি। অবশ্যই এই হিসাব শুধু মামলা হওয়া এবং পত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনাগুলোর পরিসংখ্যান মাত্র। এর বাইরেও অনেক ছোটখাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো হয়রানির ভয়ে মামলাভুক্ত হয়নি কিংবা পত্রিকায়ও সংবাদ হয়নি। সংগত কারণেই বোঝা যায়, এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে।
আটটি ঘটনায় ৬২ লাখ টাকা ছিনতাই হয়েছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা যায়। টাকার অঙ্কে যা-ই হোক, মানুষের প্রাণ হারানোর ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। এসব ঘটনায় উপার্জনক্ষম ব্যক্তির প্রয়াণে সেসব পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। এ পরিস্থিতিতে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই শুধু নয়, মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতেও সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসতি এই রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে পরিমাণ সদস্য থাকা প্রয়োজন ছিল, ঢাকায় তা নেই। এই অভিযোগও অনেক পুরনো। আবার নিত্যনতুন ছিনতাই স্পট বাড়ার ব্যাপারটিকেও আমলে আনার প্রয়োজন আছে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সময় সময় ছিনতাই স্পটের সংখ্যা এবং এলাকা পরিবর্তন হওয়াটাও দেখার বিষয়। সংখ্যা এবং স্থানের পরিবর্তন দেখে স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, ছিনতাইকারীদের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের স্পটও তেমনি বাড়ছে। সেই অনুপাতে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা না বাড়ানো হয়, তাহলে ছিনতাই-সন্ত্রাসের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
সূত্রাপুর এলাকাকে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অন্যান্য এলাকা সূত্রাপুর থানার মতো অস্বাভাবিক না হলেও এর কাছাকাছি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এগুলো সামাল দিতে। যেসব জায়গায় আর্থিক লেনদেন বেশি হয়, সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হলেও সেদিকে সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে না। আবার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সাহায্য নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, টাকা-পয়সা পরিবহনের সময় মানুষ পুলিশের সহযোগিতা নিতে চায় না। পুলিশের সহযোগিতায় টাকা-পয়সা পরিবহন হলে ছিনতাইয়ের ভয় কমে যায়। কিন্তু ভিন্ন দিকও আছে। বেশি টাকা পরিবহনকালে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হলেও দু-চার লাখ টাকার জন্য কি আর পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া সম্ভব? তেমন পরিস্থিতিতে রাস্তার সাধারণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে। কারণ, ছিনতাইকারীরা সাধারণ মানুষের ওপরও চড়াও হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের আধুনিক অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ প্রয়োজন আছে।

No comments

Powered by Blogger.