বিশ্ব খাদ্য দিবস-খাদ্য সংকটের দায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর by আজিজুর রহমান

৬ অক্টোবর। বিশ্ব খাদ্য দিবস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্যোগে প্রতিবছর এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ২০তম সাধারণ সভায় বিশ্ব খাদ্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত নিরাপত্তা বিধান, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংহতি সুদৃঢ় করাসহ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। উচ্চ মূল্যের কারণে বিশ্বজুড়ে এখন ভয়াবহ খাদ্য সংকট চলছে।


সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে খাদ্যপণ্য। ফলে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশ্বব্যাপী এখন যে খাদ্য সংকট চলছে, এর প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্যশস্য থেকে জৈবজ্বালানি বা বায়োফুয়েল উৎপাদন। জৈবজ্বালানি উৎপাদনের কাজে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে খাদ্যের প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং স্বাভাবিকভাবেই এর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। খনিজ তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির বিকল্প হিসেবে গত এক দশকে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে জৈবজ্বালানির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এতে ওই সব দেশে পরিবেশ দূষণকারী গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ও খনিজ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমলেও জৈবজ্বালানির ব্যবহার বাড়ায় এখন উপকারের তুলনায় ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। ২০০৮ সালে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা জানায়, বিশ্বব্যাংকের এক অপ্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যশস্য থেকে জৈবজ্বালানি উৎপাদনের কারণেই বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের মূল্য ৭৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। সার ও অন্য কৃষি উপকরণের মূল্য বাড়ার কারণে খাদ্যমূল্য বেড়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। চাহিদার তুলনায় বেশি খাদ্য থাকা সত্ত্বেও বিশ্বে এখন ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে খাদ্যের অভাবে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ৬০ লাখ শিশু। সংকট শুধু জৈবজ্বালানি উৎপাদনের কারণে নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বণ্টনব্যবস্থার অসমতা এবং মূল্য নির্ধারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশগুলো তাদের উৎপাদিত খাদ্যের এবং সংকটের সুযোগ ও সংকটকবলিত দেশগুলোতে দেখা দেয় খাদ্যের জন্য হাহাকার। সম্প্রতি এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক নতুন উপসর্গ জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর অভিঘাতে অনেক দেশে ফসল উৎপাদন ব্যাহত অথবা চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন হচ্ছে। এ জন্যও দেশে দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্য সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হচ্ছে, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। বিদ্যমান খাদ্য সংকট সমাধানে প্রথমেই জৈবজ্বালানি উৎপাদন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে খাদ্য সহায়তাসহ উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, সেচ সুবিধা, সার ও উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহ করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দেশগুলোর জন্য স্বচ্ছ, সমতাপূর্ণ ও অগ্রাধিকারভিত্তিক খাদ্য এবং কৃষিপণ্যের বাণিজ্যনীতি গড়ে তুলতে হবে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে শক্তিশালী তহবিল গড়ে তোলাও প্রয়োজন। এ জন্য ধনী দেশগুলোকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা জৈবজ্বালানি উৎপাদন, বৈশ্বিক উষ্ণতায়নসহ সমাজের অসম বণ্টনের দায় তারা কিছুতেই এড়াতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.