পবিত্র কোরআনের আলো-এরাই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব যারা বিবেকে বোবা ও বধির

৮। যা-লিকুম্ ওয়াআন্না ল্লা-হা মূহিনু কাইদি ল্কা-ফিরীন। ১৯। ইন্ তাছতাফ্তিহূ ফাক্বাদ জা-আকুমু ল্ফাত্হু; ওয়াইন তানতাহূ ফাহুওয়া খাইরা ল্লাকুম; ওয়াইন তাঊ'দূ নাউ'দ্; ওয়ালান্ তুগনিইয়া আ'নকুম্ ফিআতুকুম শাইআওঁ ওয়ালাও কাছুরাত্ ওয়াআন্না ল্লা-হা মাআ' ল্মু'মিনীন। ২০। ইয়া-আইয়্যুহা ল্লাযীনা আ-মানূ আত্বীঊ' ল্লা-হা ওয়ারাছূলাহূ ওয়ালা- তাওয়াল্লাও আ'নহু ওয়াআনতুম তাছ্মাঊ'ন। ২১। ওয়ালা- তাকূনূ কাল্লাযীনা ক্বা-লূ ছামি'া ওয়াহুম লা-ইয়াছ্মাঊ'ন। ২২। ইন্না শার্রাদ্ দাওয়া-বি্ব ই'নদা ল্লা-হি চ্ছুম্মু ল্বুকমু ল্লাযীনা লা-ইয়া'কি্বলূন।

[সুরা : আল- আনফাল, আয়াত : ১৮-২২] অনুবাদ : ১৮. এসব কিছু তো রয়েছেই (অর্থাৎ এটাই আল্লার প্রকৃতি), সেই সঙ্গে এ বিষয়টাও যে আল্লাহ তা'য়ালা কাফেরের সব চক্রান্ত দুর্বল করে দেন। ১৯. (হে কাফেররা) তোমরা যদি মীমাংসাই চেয়ে থাকো, তবে মীমাংসা তো তোমাদের সামনে এসেই গেছে। এখন যদি তোমরা নিবৃত্ত হও তবে তা তোমাদের জন্য কল্রাণকর হবে। তোমরা যদি আবার যুদ্ধের দিকে ফিরে আসো তবে আমরাও প্রতিরোধে ফিরে আসব। আর তখন তোমাদের বাহিনীর যোদ্ধা সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, তা কোনোই কাজে আসবে না, কারণ আল্লাহ তা'য়ালা মুমিনদের সঙ্গেই রয়েছেন।
২০. হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। যেহেতু তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের বাণী শুনেছো।
২১. তোমরা কখনোই তাদের মতো হইও না যারা বলছে, আমরা তো শুনছি, কিন্তু তারা শুনছে না।
২২. নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব সেই সব লোক যারা মুখ-কান থাকতেও বোবা ও বধির। তারা বুদ্ধি কাজে লাগায় না।

ব্যাখ্যা : ১৮ নম্বর আয়াতটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রশ্নের উত্তর। প্রশ্ন হতে পারে আল্লাহ তা'য়ালা তো নিজ কুদরতেই সরাসরি শত্রু নিপাত করতে পারতেন। তা সত্ত্বেও তিনি কেন মুসলমানদেরকে যুদ্ধের মুখোমুখি করলেন? উত্তর দেওয়া হয়েছে এরকম, প্রথমত: আল্লাহ তা'য়ালার প্রকৃতি হল, তিনি গতের সমগ্র কর্মকাণ্ড কার্যকারণ নিয়মের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকেন। তাকবীনী বা রহস্য জগতীয় বিষয়াবলীও এই প্রকৃতির অধীন। এখানে ..... কারণ বা উপকরণ একইভাবে প্রযোজ্য। এ স্থলে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েই তার উদ্দেশ্য কার্যকর করেছেন। অর্থাৎ ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আল্লাহ নিজের ইচ্ছায়। তবে মুসলমানদেরকে এর মাধ্যমে বানিয়েছেন। এটা তাদের গৌরবের অর্জন। দ্বিতীয়ত তিনি কাফেরদেরকে দেখাতে চেয়েছিলেন তোমরা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের সামরিক শক্তি ও বিত্ত-বৈভবের যে দর্প দেখাত তা আল্লাহ তা'য়ালা দৃশ্যত দুর্বল মুসলমানদের মাধ্যমে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে পারেন।
১৯ নম্বর আয়াতের শানে নুযুল এরকম : বদরের যুদ্ধে যাত্রাকালে কোরাইশ নেতা আবু জাহল ও অন্যান্য সরদাররা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা জানাল, হে আল্লাহ তুমি সত্যকে জয়ী ও অসত্যকে পরাজিত কর। বলাবাহুল্য তাদের বিশ্বাস ছিল যে, তাদের পিতৃপুরুষের ধর্মই সত্য এবং তারা সত্যের পক্ষে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু তারা তো প্রকৃতপক্ষে সত্যের পক্ষে ছিলেন না। সত্যের পথ তার রাসূলের পথ। এই আয়াতে বলা হয়েছে, তারাও তো একটা ফয়সালা চাচ্ছিলেন। অর্থাৎ সত্যে উপনীত হওয়ার কথা বলছিলেন। এই অবস্থা বদরের যুদ্ধ তো সে ফয়সালা করেই দিয়েছে, অর্থাৎ সত্যকে বিজয়ী করেই দিয়েছে। সুতরাং তাদের উচিত সত্যকে মেনে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধাচারণ বন্ধ করে ইসলাম গ্রহণ করা।
২০, ২১ ও ২২ নম্বর আয়াতে যে 'শোনা' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা দ্বারা উপলব্ধি করা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কাফেররা শোনার দাবি করলেও বোঝার বা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। তারা তাদের বিবেককে কাজে লাগিয়ে সত্যকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। এ হিসেবে তারা পশুরও অধম। কেননা বাকশক্তিহীন ও বিবেকহীন পশু ভালো-মন্দ না বুঝলে সেটা নিন্দাযোগ্য নয়। কিন্তু মানুষের তো বোঝার যোগ্যতা আছে তার বুদ্ধি ও বিবেক আছে, সুতরাং বোঝা তার দায়িত্ব। সে বুঝে-শোনে, বিবেককে কাজে লাগিয়ে ভালো পথ গ্রহণ করুক এটাই আল্লাহ চান। তথাপি সে বোঝার চেষ্টা না করলে পশুর চেয়েও অধম হওয়ারই কথা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.