রাজনীতি নিয়ে শঙ্কা-সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি আবার অনিবার্য সংঘাতের দিকেই যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন সব মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিরোধী দলের রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পর্ব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরও সংঘাতের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়া যায়নি। পারস্পরিক বিষোদ্গারও থেমে নেই। অনেকটাই 'নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা'র মতো অবস্থা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর। অন্যদিকে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে জোটের আস্তিনে।


এ অবস্থায় গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না_এমন প্রশ্নও অবান্তর নয়। সিপিডির বৈঠকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনায় এসব কথাই উঠে এসেছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদ হবে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। অথচ সেই সংসদ আজ অকার্যকর। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে সেই কথাটিই বারবার উঠে এসেছে। সংসদ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সংসদকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সংসদও যে গণতান্ত্রিক হতে পারে না বা পারছে না, এমন কথাও উঠে এসেছে মূল প্রবন্ধে। আবার দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হলেও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদকে সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের কারণে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। গণতন্ত্র একটি বিকাশমান ধারা। সেই ধারা চালু রাখতে ও প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সংসদকে চালু রাখতে হবে, কার্যকর করতে হবে। কিন্তু বিরোধী দলের সংসদ বর্জন অব্যাহত আছে। নির্বাচনে পরাজিত হলে অনেকে এমনিতেই সংসদে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ জন্যও দায়ী দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের পর দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হলেও রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা পারস্পরিক বিষোদ্গারকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। 'দেখতে নারি চলন বাঁকা' নীতিতে চলছে দেশের রাজনীতি। গুণগত মান পরিবর্তন না হওয়ায় পরমতসহিষ্ণুতা নেই দেশের রাজনীতিতে।
মানতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সহমর্মিতার অভাব ও আস্থার সংকট থেকেই আজকের রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃস্টি হয়েছে। একটি শক্তিশালী সংসদীয় পদ্ধতির জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা। আর গণতন্ত্রের মূলকথা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন এমন এক অবস্থায় এসে পেঁৗছেছে যে এখানে বড় দলগুলোর নেতা-নেত্রীর কাছেই ক্ষমতা ঘুরপাক খাচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই বিকশিত হতে পারে না নতুন নেতৃত্ব। এর পাশাপাশি রাজনীতিতে কালো টাকার প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না। এতে বাধাগ্রস্ত হয় সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ। একই সঙ্গে এটাও অনস্বীকার্য যে সুস্থধারার রাজনীতি বিকশিত না হলে দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
দেশে যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও বিকাশ অব্যাহত রাখতে হলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক হতে হবে। দলের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে রাজনৈতিক নেতাদের মনোভাব। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ইতিবাচক রাজনীতির বিকাশে কাজ না করলে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.