দিনদুপুরে ছিনতাই-অপরাধীদের দমন করুন

সাম্প্রতিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, অপরাধীরা কি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে? সংবাদপত্রের খবরে পরিস্থিতির যে বিবরণ উঠে আসছে তাতে স্পষ্ট যে, রাজধানীতে অপরাধীদের তৎপরতা বেড়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে নানা অপরাধ নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা


রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও দোষারোপের সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যেও নানা চাপান-উতোর হয়েছে। কিন্তু এই তীব্র বিতর্কের ফল কী হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। কেননা, এসব ঘটনার কোনো সমাধান হয়নি। কে বা কারা কেন এত মানুষকে অপহরণ করল, তারা কেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয় দিচ্ছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের দমনে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন, এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। এখন প্রতিদিনই ছোট-বড় নানা ছিনতাইয়ের খবর আসছে। ছোট ছিনতাইয়ের ঘটনায় অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হন না। তাই ছোট ছোট ছিনতাইয়ের ঘটনার রেকর্ড পাওয়া কঠিন। কিন্তু গত এক মাসে বড় ছিনতাইয়ের ঘটনার যে রেকর্ড পাওয়া গেছে তা উদ্বেগজনক। ৮টি ঘটনায় রাজধানীতে ছিনতাই হয়েছে ৬২ লাখ টাকা। এসব ঘটনা ছিনতাই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, কয়েকটি ক্ষেত্রে গুলি, জখম ও একটি ক্ষেত্রে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। বড় ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা দেখে সহজেই অনুমেয় ছোট ছিনতাইয়ের ঘটনায় কী ঘটে। অভিযোগ আছে, ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা থানায় গেলে তাদের অভিযোগ আমলে নেওয়া দূরের কথা, শোনাও হয় না। আর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ঢাকা শহরে রীতিমতো ঠেক বসিয়ে ছিনতাইকর্ম করছে অপরাধীরা। পুলিশের রেকর্ড, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভুক্তভোগীদের বিবরণ অনুসারে রাজধানীর আড়াইশ' স্থানে এমন তৎপরতা চলছে। প্রশ্ন হলো, এসব তথ্য জানা থাকার পরও কেন ছিনতাইকারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না? তবে কি পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগী নয়? পুলিশের তরফে জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতেই তারা বিশেষভাবে ব্যস্ত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সুযোগই কম। এসব তথ্য নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলবে নিঃসন্দেহে। রাজধানীতে দিনদুপুরে যদি ছিনতাই হতে থাকে এবং পুলিশ যদি অন্যত্র ব্যস্ত থাকে তবে এর চেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয় আর কী থাকতে পারে? সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা খুব কম, আর সে প্রত্যাশা মেটানো খুব কঠিন নয়। সরকার মনোযোগী হলে সহজেই সেটি করা সম্ভব। মানুষ চায় তার চলাফেরার স্বাধীনতা। দিনের কাজ শেষে স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা খুব বড় চাওয়াকে খুব বড় প্রত্যাশা বলে গণ্য করার উপায় নেই। কিন্তু পথে যদি তাকে সর্বস্ব খোয়াতে হয় অপরাধীদের হাতে, তবে সেটি দুঃখজনক। তাই রাজধানীজুড়ে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার যেসব খবর আসছে তা এখনই আমলে নেওয়ার সময় এসেছে। ছিনতাইকারী, অপরাধীদের তৎপরতার কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন নয়। পথচারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হওয়া দরকার। ইতিমধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর তদন্তও দরকার। মনে রাখতে হবে, নিরস্ত্র নাগরিকরা চাইলেই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়ার পরিস্থিতি ও বাস্তবতাও অনেক সময় থাকে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নই শুধু নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.