বছর শেষের গল্প by রিয়াসাদ হোসাইন

মাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ২০১১ কতটা উল্লেখযোগ্য বছর ছিল, কী অর্জন বা কী ব্যর্থতা ছিল_ সেটির হিসাবও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সালতামামির চুলচেরা বিশ্লেষণে বেরও হয়ে আসবে সেসব। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও শিক্ষার্থীদের যে নানা রকম কর্মকাণ্ড থাকে তারও বিশ্লেষণটা হওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার ফলেই শিক্ষা পায় পূর্ণতা... আর কয়েকদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন আরেকটি বছর, এক নতুন


দশক। নতুন বছরের প্রথম সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে প্রথাগত এক নতুন দিন। কিন্তু যা সবচেয়ে জরুরি সেটি হচ্ছে স্বপ্ন, সেই আশা নিয়ে কি উদিত হবে নতুন সূর্য? বছর শেষের গল্প এটিই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কিন্তু আমাদের আশাবাদী মন স্বপ্ন দেখতেই চায়। যতই আঁধার থাকুক, যতই ঝড় থাকুক না কেন দরিয়ায়, নতুন সূর্য উঠবেই নতুন আশা-স্বপ্ন নিয়ে। তবে নতুন দিনের স্বপ্ন কল্পনায় পুরনো দিনকে কিছুতেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ফেলে আসা দিনের কোনো ছোট্ট কাজই হয়তো প্রেরণা জোগাবে আগামীর বৃহৎ কর্মযজ্ঞে।
যদি ফেলে আসা দিনের সেরকম কোনো কাজ নাইবা থাকে তাতেও নেই দোষের কিছু, কারণ তরুণ প্রজন্ম জানে ভেঙেচুরে সবকিছু নতুনভাবে গড়তে। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ২০১১ কতটা উল্লেখযোগ্য বছর ছিল, কী অর্জন বা কী ব্যর্থতা ছিল সেটির হিসাবও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সালতামামির চুলচেরা বিশ্লেষণে বেরও হয়ে আসবে সেসব। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও শিক্ষার্থীদের যে নানা রকম কর্মকাণ্ড থাকে তারও বিশ্লেষণটা হওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার ফলেই শিক্ষা পায় পূর্ণতা। শিক্ষার্থীদের বিবিধ সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু তাদেরই আগামীদিনের যোগ্য নাগরিক করে গড়ে তোলে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় যে নতুন জ্ঞান তৈরির তীর্থক্ষেত্র সে ক্ষেত্রেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এখানে শিক্ষকদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তারাই তো পথ দেখিয়ে নিয়ে যান শিক্ষার্থীদের আলোর পথে। এই জ্ঞান অর্জন ও মননশীলতার বিকাশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ প্রচেষ্টাইবা কতটুকু হয়েছে তারও মূল্যায়ন হওয়া উচিত বছর শেষে। শিক্ষা ক্ষেত্রকে জ্ঞানচর্চার নিষ্কণ্টক রাখতে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। বৃহৎ অর্থে সুষ্ঠু পরিবেশ বললেও একে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করতে গেলে চোখে পড়বে এর মাঝে আছে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির হালহকিকত, ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ, পড়াশোনার প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কসহ বেশকিছু বিষয়। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ছাত্রসংগঠনগুলোর তৎপরতা এ বছর কম থাকলেও মূল ধারার প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড তেমনভাবে আশাবাদী করতে পারেনি দেশের মানুষকে। এ তো গেল শিক্ষাঙ্গনের একটি দিক। এর বাইরের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদের অনেক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করেছে সবকিছু এখনও ভেঙে পড়েনি।
শিক্ষাঙ্গনে যে জ্ঞানের মশাল সব সময় প্রজ্বলিত থাকার কথা তা মাঝে মধ্যে ব্যাহত হলে থেমে যায়নি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান, সাহিত্য চর্চা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, নাচ, গান, অভিনয়সহ সুস্থ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জানান দিয়ে যায় ২০১১ সাল শিক্ষাঙ্গনের জন্য নিষ্ফলা বছর ছিল না। এ ছাড়া এসব কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণ ও উল্লেখযোগ্য হারে সাফল্য লাভের খতিয়ান। বছরের শেষ প্রান্তে এসে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিভা অন্বেষণের আয়োজন 'ব্যাটল অব মাইন্ড'।
এ ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে চালিয়েছে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে শিক্ষাঙ্গনের জন্য সাফল্য-ব্যর্থতায় মিশ্রিত একটি বছর হিসেবেই চিহ্নিত করা যায় ২০১১ সালকে। হয়তোবা এখানে ব্যর্থতা ছিল কিন্তু সাফল্যের পরিমাণও কিন্তু কম ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.