‘ডার্টি’ বিদ্যা বর্ষসেরা

লিউডে সবসময়ই নায়ক নির্ভর ছবিগুলো লুফে নেয় দর্শকরা। আর সেই ছবিতে নায়িকারা শুধু নাচ-গান-কান্নার জন্যই নিজেদের উৎসর্গ করে দেন। কিন্তু ২০১১ সালে এমন কিছু ছবি আছে, যা বলিউডের খান-কুমার-কাপুরদেরও বিপদে ফেলে দিয়েছে। এ বছরে বলিউডের সেলুলয়েড ললনারা বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা শুধু একটি ছবির ‘গ্ল্যামার এলিমেন্ট’ই না, বলিউড ‘খান’দেরও তারা নাজেহাল করতে পারেন।
সেই সব বর্ষসেরা পাওয়ারপ্যাক্ট বলিউড সুপার-হিরোইনদের নিয়েই এবারের আয়োজন:
বিদ্যা বালান

বছরের শুরুতেই বিদ্যাকে দেখা গেছে ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ ছবিতে সহজ, সরল আর ডিগ্ল্যামারাস এক তরুণীর চরিত্রে। যে তার বোন হত্যার বিচারের জন্য সংগ্রাম করেন। ছবিতে বিদ্যা পরেছেন ঢিলেঢালা পোশাক, মোটা ফ্রেমের চশমা আর মুখে মেকআপ নেই বললেই চলে। অনেকেই ভেবেছিলেন বিদ্যার এই সাধারণ রূপে মন গলবে না সিনেমাপ্রেমীদের। আইটেম গানের যুগে বিদ্যার রূপ পুরোই ফিকে পড়ে যাবে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমণিত করে সাধারণ বিদ্যা নজর কেড়েছেন সবার, হলে টেনে এসেছেন দর্শকদের।

কিন্তু এরপর আবার বলিউডের বাতাসে গুঞ্জন ছড়ালো, বিদ্যা এইসব ছবিই করতে পারবেন। ক্যাটরিনা, দিপীকা, কারিনার মতো গ্ল্যামারাস নায়িকা হিসেবে কখনোই নিজেকে তিনি জাহির করতে পারবেন না। এই গুঞ্জনের বাতাসকেও মেধার জোরে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন বিদ্যা। তা-ও আবার এই বছরই। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’র সহজ-সরল ‘সাবরিনা’র মোড়ক থেকে বেরিয়ে বছরের শেষে বিদ্যা এসেছেন ‘ডার্টি’ সিল্ক রূপে। সাদামাটা মেয়ে বিদ্যা ‘উ লা লা’ দিয়ে পাল্টে দিয়েছেন গ্ল্যামারের ভাষা। যারা বিদ্যার সাদামাটা রূপ নিয়ে কথা বলেছিল, তারা ‘ডার্টি’ বিদ্যার ‘ডার্টি পিকচার’র প্রথম সারির দর্শক ছিলেন।

বছররের শুরু থেকে শেষে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ‘গুড গার্ল’ বিদ্যা হয়ে গেছেন হিট ‘ডার্টি পিকচার’র দিয়ে বলিউডের ‘ব্যাড গার্ল’।

কারিনা কাপুর

‘খান দ্বন্দ্ব’র মাঝে পরেও নিজের প্রতিভাকে ম্লান হতে দেননি কারিনা। বলিউডের দুই ট্রেন্ডিং খানের সঙ্গেই এ বছর কাজ করেছেন বেবোর। দিয়েছেন বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল দু’টি ছবি-বডিগার্ড এবং রা.ওয়ান। তবে, কারিনার কারিগরি ছাড়া এই ছবি দুটো সফল ঠিকতই হতে পারতো, কিন্তু ব্লকবাস্টার হতে পারতো না। ‘বাডিগার্ড’র ‘তেরি মেরি’ আর ‘রা.ওয়ান’র ‘ছাম্মাক ছালো’ কারিনা ছাড়া ভাবাই অসম্ভব। আর দুই খানের মাঝেও উজ্জ্বল এই কাপুর কন্যার প্রতিভা, সাধুবাদ কুড়িয়েছেন সমালোচকদের আর বক্সঅফিসে গড়েছেন টাকার পাহাড়।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

২০১০ সালে ঠাণ্ডা একটা বছর কাটানোর পর, ২০১১ ছিল প্রিয়াঙ্কার জন্য স্মরণীয় একটা বছর। এ বছরই প্রিয়াঙ্কা নিজের ঘরে তুলে নেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ভারতের জাতীয় পুরস্কার। বিশাল ভারদওয়াজ পরিচালিত ‘সাত খুন মাফ’ ছবিতে সাত বিয়ে করে বক্সঅফিসে সাড়া ফেলাতে না পারলেও, চলচ্চিত্রবোদ্ধাধের দৃষ্টিতে সেরা হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। আর বছরের শেষে এসে প্রিয়াঙ্কা বনে গেলেন শাহরুখের প্রেয়সী। আবারো ‘ডন ২’ ছবিতে ‘জঙ্গলি বিল্লি’ হিসেবে প্রিয়াঙ্কা নিজের মেধাকে ভালোভাবেই জাহির করলেন এবং নিজের প্রাপ্তির খাতায় লেখালোন আরো একটি হিট ছবির না।

ক্যাটরিনা কাইফ

‘জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা’র স্বাধীনচেতা ভিনদেশী কন্যা লায়লা, ‘বডিগার্ড’ হিট আইটেম গার্ল, ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহান’ ছবির মারদাঙ্গা ডিম্পল দিক্ষিত আর সবশেষ ‘অগ্নিপথ’র ‘চিকনি চামেলি’- এসবই হচ্ছে ক্যাটরিনার এ বছর আলোচিত চারিত্রগুলো। সবগুলোই জনপ্রিয় আর ব্যবসাসফল। তার ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখে বলিউড গুরুরা বলছেন- দিন দিন আরো শক্ত হচ্ছে ক্যাটরিনার বলিউড স্কিল। এ বছর ‘চার’-এ তো কী হয়েছে। এই অভিনেত্রী চাইলেই সহজেই চলে আসতে পারেন ‘বলিউড কুইন’ লিস্টের শীর্ষে।

কেলকি কোচিন

বলিউডে তার অভিষেক ঘটেছে অনেক বছর আগেই। কিন্তু কেলকির ছবিগুলো অনেক ভিন্ন হওয়ায় তা সহজে দর্শকদের বোধগম্য হতো না। যার ফলে শীর্ষ অভিনেত্রীদের তালিকায় কেলকি কোচিনের আসা হয়নি কখনোই। এ বছরই প্রথম। কারণ, এ বছরই কেলকি কয়েকটি আলোচিত ছবিতে অভিনয় করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সব শ্রেণীর দর্শকদের। এ বছর কেলকি অভিনীত ছবিগুলো হলো- শয়তান, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা, দ্য গার্ল ইন উয়েরো বুটস এবং মাই ফ্রেন্ড পিন্টো।

কঙ্গনা রানাওয়াত

কঙ্গনাকে এ বছর নতুন রূপে দেখা গেছে সেলুলয়েড ফিতায়। ২০১১ সালে একাধিক ছবিতে কঙ্গনাকে দেখা গেলেও একটি ছবির জোরেই শীর্ষ অভিনেত্রীর খেতাব পেয়ে গেলেন তিনি। ‘তানু ওয়েডস মানু’ ছবিতে কঙ্গনা যেই স্পষ্টভাষী আর চঞ্চল দিল্লির মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা দেখে অনেকেই বলেছেন, “মেয়েটার মেধা আছে বটে”।

রানী মুখার্জি

সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় রানীই সবচেয়ে সিনিয়র হিরোইন। তাই তার এ বছরের কাজও হতয়েছে ঠিক তেমনই। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ ছবিতে রানীর পারফর্মেন্সকে বলিউড স্পেশালিস্টরা এক কথায় বলেছেন, “ব্রেকথ্রু” বা “বিরাট অর্জন”। দুঃসাহসী সাংবাদিকের চরিত্রে রানী নিজেকে ভালোভাবেই জাহির করেছেন। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনো ফুরিয়ে যায়নি রানীর আবেদন, তিনি এখনো আছেন।

আনুস্কা শার্মা

বছরের শুরুতে ‘পাটিয়ালা হাউজ’ ছবির ব্যর্থতায় কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে যায় আনুস্কার জাদু। কিন্তু বছরের শেষে এসে বলিউডের এই বাচ্চা মেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ‘লেডিস ভার্সেস রিকি ভেল’ ছবিতে আকর্ষণীয় আনুষ্কার কাছে ফিকে হয়ে যায় আশপাশের সবকিছু। নাচে তা পারদর্শিতা, মিস্টি হাসি আর তুখোড় অভিনয় দক্ষতায় নিজের বলিউড খুঁটিকে আরো ষক্ত করে গাঁথেন ‘যশরাজ’ ক্যাম্পের ফেভারিট আনুস্কা।

দিপিকা পাদুকোন

২৫ বছর বয়সেই এত শক্তিশালী অভিনেত্রী বলিউডে খুব কমই পাওয়া গেছে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ব্লকবাস্টার ‘ওম শান্তি ওম’ যেমন বক্সঅফিস কাঁপানো অভিষেক ঘটেছিল, এ বছর তেমনটা না হলেও নিজের মেধাকে ভালোভাবেই প্রকাশ করতে পেরেছেন দিপীকা। এ বছর দিপিকার দুটো ছবি মুক্তি পেয়েছে। আরক্ষণ এবং দেশি বয়েজ। নিজেকে ‘গ্ল্যামার গার্ল’ বলতেই বেশি পছন্দ করেন দিপিকা। এজন্য সেভাবেই এ বছর দর্শকরা গ্রহণ করেছেন। অভিনয়ের বিশ্লেষণটা না হয় এ বছর থাক!

মাহি গিল

হিট বলিউড হিরোইনদের তালিকায় আরো একটি মেথড অ্যাকট্রেসের অভিষেক হলো এ বছর। তিনি হলেন মাহি গিল। এর আগে ‘দেব ডি’ ছবিতে অভিনয় করে সমালোচিত হলেও, সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায় নাম উঠেনি তার। তবে, এ বছর আর পিছে পরে নেই মাহি। শেষের স্থানে হলেও ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন, সেরা অভিনেত্রীদের তালিকায়। তার অভিনীত ‘উট পাটাং’, ‘নট এ লাভ স্টোরি’ এবং সাহেব বিবি অর গোলাম’ তাকে এই তাািলকায় আসতে সাহায্য করেছে।

No comments

Powered by Blogger.