ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার নয়-চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রায়ই একটি কথা বেশ জোরের সঙ্গে বলে থাকেন, ‘অনির্বাচিত সরকার কখনো জনগণের স্বার্থ দেখে না। তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত থাকে। জনগণের কল্যাণের জন্য জনগণের সরকার প্রয়োজন।’ অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁদের এ দাবির যৌক্তিকতা থাকলেও দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি নামে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের বেলায় তা একেবারেই অসার।


শনিবার চট্টগ্রামে ‘বিশ্ব বাণিজ্য এবং চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই ব্যবসায়ীরা বন্দরের নাজুক অবস্থার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির হস্তক্ষেপকে দায়ী করেছেন। কেউ কেউ মন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি করেছেন। যদিও মন্ত্রী তাঁর ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেননি। প্রশ্ন হলো, বন্দরের অবস্থা আর কতটা খারাপ হলে তিনি ব্যর্থতা স্বীকার করবেন? মন্ত্রী বলেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। এত দিন হলো না কেন? কাদের স্বার্থে বারবার দরপত্র আহ্বান করেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি, সে কথাও কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির সর্বনাশ করতে দেওয়া যায় না। কেননা এর সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি ও বাজার-পরিস্থিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা সমাধানের কথা বলে আসছেন। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও কম হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যান ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যা কেটে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এর আগেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে বহুবার আশ্বাসবাণী শোনা গেছে। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। এবারও যে তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, এর নিশ্চয়তা কী? বন্দরে সেবার মান বাড়াতে হলে এর অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে নিশ্চয়তাও সরকারকে দিতে হবে।
সংসদীয় কমিটির দায়িত্ব হলো, বন্দর বা মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা তদারক করা এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। বন্দরে কাকে অপারেটর নিয়োগ করা হবে না-হবে, সেটা ঠিক করা তাদের কাজ নয়। অথচ এসব ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। সংসদীয় কমিটির একাধিক সদস্য নৌপরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁরা বন্দরের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সমস্যা আছে আরও একাধিক সংসদীয় কমিটিতে, যে কারণে তাঁরা সুপারিশের চেয়ে তদবিরে ব্যস্ত থাকেন। সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে, এমন সংসদীয় কমিটিতে কোনো সাংসদ থাকতে পারেন না।
ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যে দাবি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত করার উপায় নেই। মানুষের দৃষ্টি থাকে সামনে। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ যে পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাস সম্ভব হলে এখন হবে না কেন?

No comments

Powered by Blogger.